মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ট্রাম্প ভারতে, হচ্ছে ৩০০ কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা চুক্তি

গৌতম লাহিড়ী, নয়াদিল্লি

ট্রাম্প ভারতে, হচ্ছে ৩০০ কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা চুক্তি

গুজরাটের আহমেদাবাদে সরদার বল্লভভাই প্যাটেল স্টেডিয়ামে গতকাল লক্ষাধিক মানুষের সংবর্ধনা গ্রহণের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দুই দিনের ভারত সফর শুরু হয়েছে। ‘নমস্তে ট্রাম্প’ নামের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ট্রাম্প জানান, ভারতের সঙ্গে তাঁর দেশের ৩০০ কোটি ডলারের চুক্তি স¦াক্ষর হবে আজ। দিল্লিতে এ চুক্তিতে সই করবেন তিনি ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সোমবার ভারতের স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে প্যাটেল বিমানবন্দরে অবতরণ করে ট্রাম্পকে বহনকারী বিমান ‘এয়ারফোর্স ওয়ান’। যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিমান থেকে নেমেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আলিঙ্গন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। বিমানবন্দরে নাচে-গানে ও শঙ্খ বাজিয়ে ভারতীয় রীতিতে সম্মানিত অতিথিদের স্বাগত জানানো হয়। এখান থেকে শতাধিক সফরসঙ্গীসহ ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গুজরাটের সবরমতী আশ্রমে যান। গুজরাটে জন্মগ্রহণকারী ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা মহাত্মা গান্ধী এ আশ্রমে ১৩ বছর বসবাস করেছিলেন। বিমানবন্দর থেকে আশ্রম পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার পথে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। আশ্রমের পরিদর্শক বইয়ে ট্রাম্প লিখলেন, ‘আমার মহান বন্ধু প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রতি, এই অপূর্ব সফরের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।’

এখান থেকে ট্রাম্প তাঁর সফরের আগে আহমেদাবাদে নির্মিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট ভেন্যু মোরেতা স্টেডিয়ামের পথে রওনা দেন। স্টেডিয়ামের ২২ কিলোমিটার পথের দুই পাশে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার লোক ট্রাম্পকে স্বাগত জানান। তাদের কারও হাতে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা, কারও হাতে ভারতের পতাকা ছিল। রাস্তার পাশে বিলবোর্ডে ‘নমস্তে ট্রাম্প’ লেখা ও বিভিন্ন স্লোগানসহ দুই নেতার ছবি শোভা পাচ্ছিল। এই রোড শোতে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা শিল্পীরা নিজ নিজ রাজ্যের বৈশিষ্ট্যমন্ডিত শিল্প উপস্থাপনা তুলে ধরেন। ট্রাম্প স্টেডিয়ামে প্রবেশের সময় স্পিকারে সংগীতশিল্পী এল্টন জনের গান বাজছিল। জনের গান ট্রাম্পের বিশেষ পছন্দ, সেটা ভারতীয় কর্তৃপক্ষেরও জানা ছিল। মোতেরা স্টেডিয়ামের ‘নমস্তে ট্রাম্প’ মঞ্চে একসঙ্গে হাজির হন ট্রাম্প ও মোদি। উপস্থিত ১ লাখের বেশি লোক ব্যাপক করতালি ও ‘মোদি, মোদি’ ধ্বনিতে স্টেডিয়াম মুখর করে তোলে। স্টেডিয়ামে ট্রাম্পকে স্বাগত জানিয়ে মোদি বলেন, ‘১৩০ কোটি ভারতীয়র পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে স্বাগত জানালাম। মেলানিয়া ট্রাম্পের ভারতে আসা আমাদের জন্য বড় সম্মানের বিষয়। ট্রাম্পকন্যা ইভাঙ্কা ও জামাতা জ্যারেডের উপস্থিতিও আমাদের কাছে বড় সম্মানের বিষয়।’ মোদি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প! আপনি যে দেশ থেকে এসেছেন সেই দেশে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য রয়েছে। আপনার আসার মধ্য দিয়ে দ্ইু দেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হলো। আপনাকে স্বাগত জানাতে গোটা ভারত উন্মুখ হয়ে ছিল।’ এরপর ওই জনসমাবেশে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘৮ হাজার মাইল পেরিয়ে এখানে এসেছি একটা বার্তা দিতে, তা হলো আমেরিকা ভারত ও ভারতবাসীকে ভালোবাসে। এমন সুন্দর একটা স্টেডিয়ামে আপনাদের মাঝে এসে আমি খুব আনন্দিত।’ তিনি বলেন, ‘আমেরিকা ভারতের সবসময়ের বিশ্বস্ত বন্ধু। গণতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ ও সহিষ্ণু দেশ হিসেবে ভারত নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে। এখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, শিখ সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করেন। আপনাদের একতা বিশ্বের কাছে অনুপ্রেরণা।’ ট্রাম্প তাঁর ভাষণে পাকিস্তানের সমালোচনা করেন। ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যিক বাধা দূর করার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানান। আজ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে প্রতিরক্ষা চুক্তি হবে তার ভিত্তিতে ভারত ২৪টি মার্কিন এমএইচ-৬০ হেলিকপ্টার কিনবে। জানা যায়, যে ২৪টি হেলিকপ্টার কেনা হচ্ছে, সেগুলো ব্যবহার করবে ভারতীয় নৌবাহিনী। জলসীমায় নজরদারি, ডুবোজাহাজের উপস্থিতি, তল্লাশি ও উদ্ধারকাজে অত্যন্ত দক্ষ এ কপ্টারগুলো। বর্তমানে এ কাজ করে ৪৯ বছর আগের ব্রিটিশ হেলিকপ্টার ‘সি কিং’। নতুন এই মার্কিন কপ্টারগুলো এলে ‘সি কিং’ কপ্টারগুলো ধাপে ধাপে সরিয়ে নেওয়া হবে। ভারত-মার্কিন যৌথ সামরিক মহড়া হয় মাঝেমধ্যেই। ট্রাম্প গতকাল বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া হয় ভারত ও আমেরিকার মধ্যে। এমনকি, তিন বাহিনী একসঙ্গে মহড়ার নজিরও রয়েছে। নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটনের মধ্যে সেই পারস্পরিক সমঝোতা আরও বাড়াতে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করবে জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সমন্বয় বাড়াতে নিরন্তর চেষ্টা চলে দুই দেশের মধ্যে। এই গ্রহের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ও ভয়ঙ্কর সামরিক অস্ত্র ভারতকে দিতে আগ্রহী আমেরিকা।’ ২০১৯ সালে ভারতকে ‘বিশেষ বাণিজ্য বন্ধু’র তালিকা থেকে হোয়াইট হাউস সরিয়ে দেওয়ার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে ‘শুল্কযুদ্ধ’ শুরু হয়েছিল। আমেরিকা যেমন বহু পণ্যে ভারতের ওপর শুল্ক বসিয়েছে, ভারতও একই পথ নিয়েছে। কিন্তু সেই টানাপড়েন কাটাতে ট্রাম্পের সফরে কোনো বাণিজ্য চুক্তি হচ্ছে না। দুই দেশের কাছেই সেটা অস্বস্তিকর। কূটনৈতিক মহলের প্রশ্ন- সেই অস্বস্তি ঢাকতেই কি মোতেরায় প্রতিরক্ষা চুক্তির ঘোষণা করলেন ট্রাম্প?

 

সর্বশেষ খবর