শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

দুই মেয়রের যত চ্যালেঞ্জ

জয়শ্রী ভাদুড়ী

রাজধানী ঢাকাকে ঢেলে সাজানোর প্রত্যয়ে শপথ নিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। দায়িত্ব গ্রহণের আগেই মশা, সমন্বয়হীনতা, জলাবদ্ধতা, যানজট চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে মেয়রদের দিকে। ঢাকাকে নগরবাসীর প্রত্যাশিত নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে এ সমস্যাগুলোয় নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন নগর বিশেষজ্ঞরা। শপথ হলেও মেয়রদের দায়িত্ব গ্রহণে এখনো দেরি রয়েছে। তবে দায়িত্ব গ্রহণ করলেই রাজধানীবাসীর প্রত্যাশা পূরণে মাঠে নামতে হবে মেয়রদের। চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে- মশক নিয়ন্ত্রণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতা নিরসন, নতুন ৩৬টি ওয়ার্ডের অবকাঠামো উন্নয়ন, দীর্ঘদিন খুঁড়ে রাখা রাস্তার ভোগান্তি নিরসন, এলাকাভিত্তিক পার্ক, মাঠ ও গণপরিবহন নিশ্চিত করা, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, সুশৃঙ্খল গণপরিবহনের ব্যবস্থা ও বায়ুদূষণ রোধ করা। এ ছাড়া প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত রাখাও মেয়রদের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানাসের্র (বিআইপি) সভাপতি আকতার মাহমুদ বলেন, আতিকুল ইসলাম নির্বাচনে মোট ৩৮টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং শেখ ফজলে নূর তাপস দিয়েছিলেন পাঁচটি রূপরেখা সংবলিত ইশতেহার। নির্বাচনের পর এখন প্রতিশ্রুতিকে কাজে পরিণত করার পালা। এরই মধ্যে মশায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে নগরবাসী। সামনে আসছে ডেঙ্গুর মৌসুম। তাই মশক নিধনে ওষুধ ছিটানো, ড্রেনগুলোকে সচল করা, ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা, জলাধার সচল করায় মনোযোগী হতে হবে মেয়রদের। তিনি আরও বলেন, রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং জলাবদ্ধতা নিরসন মেয়রদের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ। একইভাবে নগরের বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, শব্দদূষণের বিষয়গুলো সরাসরি মেয়র করে না থাকলেও ভূমিকা রাখতে হবে। বর্জ্য সংগ্রহ, পরিবহন ও ব্যবস্থাপনা পুরো প্রক্রিয়াটিকে পরিবেশ সম্মতভাবে আধুনিকায়ন ও টেকসই করার লক্ষ্যে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। বর্জ্য, পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিয়ন্ত্রণের বিষয়গুলো সারা বছরের প্রতিদিনের কাজ। নগরবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে মেয়রদের প্রাক-সমীক্ষা করতে হবে। জনগণের ভোটে তাদের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে হবে। কর্মসূচি সিটি করপোরেশনের স্থায়ী কমিটির সাহায্যে বাস্তবায়ন করতে হবে। এখন পর্যন্ত ১৪টি কমিটি আছে, সেটাকে ১৭টিতে উন্নীত করা প্রয়োজন। এর মধ্যে একটি হলো কমপ্লায়েন্স কমিটি। যারা ভবনে লিফট, বিদ্যুৎসহ আনুষাঙ্গিক বিষয়ে বছরের ছাড়পত্র দেবে। এরপর জলাধার সংরক্ষণে এবং উন্মুক্ত জায়গা সংরক্ষণে কমিটি প্রয়োজন। সিটি করপোরেশন যেহেতু হোল্ডিং ট্যাক্স নেয় কমপ্লায়েন্সের দায়িত্ব তাদের ওপরেই বর্তায়। তিনি আরও বলেন, অন্যের মুখে না শুনে মেয়রদের নিজের চোখে এলাকা ঘুরে সমস্যা বুঝতে হবে। তাহলে নগরচিত্র পাল্টাতে বেশি সময় লাগবে না। এ ছাড়া জলজট, মশক নিধন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, দরিদ্র মানুষের মাথা গোজার ঠাঁইয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। অঞ্চলভিত্তিক সমস্যা নির্ধারণ করে মেয়রদের কাজ করতে হবে।

চ্যালেঞ্জের বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, দায়িত্ব গ্রহণ করে আমার প্রথম চ্যালেঞ্জ মশক নিয়ন্ত্রণে আনা। প্রত্যেক এলাকার মশক নিধন কর্মীদের দায়িত্ব বণ্টন করা। আমার পরিকল্পনা আছে সোসাইটি, মসজিদের ইমাম কিংবা পাড়া কমিটির আওতায় মশক নিধন কর্মীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার। তিনি আরও বলেন, সমন্বয়হীনতা নিরসন করা আমার আর একটি চ্যালেঞ্জ। এ কাজে অন্য সেবা সংস্থাগুলো সহায়তা করলে সমস্যা সমাধান সহজ হয়ে যাবে। অনেক রাস্তা দীর্ঘদিন খুঁড়ে রাখা হয়। এ জন্য জনভোগান্তি তৈরি হয়। তাই রাস্তা খোঁড়ার সময় সেখানে কাজ শেষ করার তারিখ সংবলিত সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করব। তাহলে কাজে ফাঁকি থাকলে সেটা নগরবাসীর দৃষ্টিগোচর হবে। একটি অ্যাপস নির্মাণের পরিকল্পনা করছি, সেখানে নগরবাসী আমাদের সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর