শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

সালমান শাহর আত্মহত্যা প্রতিবেদন শুনানি ৩০ মার্চ

আদালত প্রতিবেদক

সালমান শাহর আত্মহত্যা প্রতিবেদন শুনানি ৩০ মার্চ

চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর কারণ আত্মহত্যা উল্লেখ করে আদালতে দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনের গ্রহণযোগ্যতার শুনানি হবে ৩০ মার্চ। এর আগে মঙ্গলবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ৬০০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে ঘুরেফিরে বারবার নায়িকা শাবনূরের নাম এসেছে।

আদালতে পাঠানো ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিত্রনায়ক সালমান শাহ ও শাবনূরের মধ্যে অতিরিক্ত অন্তরঙ্গতা তৈরি হয়। সালমানের স্ত্রী সামিরা চট্টগ্রামে গেলে নায়িকা শাবনূর দুই দিন সালমান শাহর বাসায় আসেন। এক দিন সারা রাত ছিলেন। অন্য দিন রাত ১২টার দিকে চলে যান। সামিরা চট্টগ্রাম থেকে এসে জানতে পারেন যে, নায়িকা শাবনূর বাসায় এসেছিলেন। সালমানের সঙ্গে শাবনূরের এই অন্তরঙ্গতা নিয়ে স্ত্রী সামিরার সঙ্গে দাম্পত্য কলহের সৃষ্টি হয়। সালমান স্ত্রী সামিরাকে খুব ভালোবাসতেন।

পাশাপাশি শাবনূরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। এ কারণে দাম্পত্য কলহের একপর্যায়ে সালমান শাহ জটিল সম্পর্কের বেড়াজালে জড়িয়ে যান।

এ ছাড়া ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফোন করা নিয়ে মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে নিজ বাসায় তিনি ইনোক্টিন ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এ ছাড়া ১৯৯২ সালে নভেম্বর মাসে কেয়ামত থেকে কেয়ামত ছবির শুটিংয়ের সময় সামিরার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে তার মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে সালমান শাহ স্যাভলন খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।

সালমান শাহর সঙ্গে তার মা নীলা চৌধুরীর সম্পর্ক ভালো ছিল না। কারণ সালমান শাহর স্ত্রী সামিরার সঙ্গে নীলা চৌধুরীর ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকত। একপর্যায়ে সালমান শাহ অতিষ্ঠ হয়ে সামিরাকে নিয়ে আলাদা বাসা নিতে বাধ্য হন। পরে সালমান তার মা নীলা চৌধুরীকে প্রতি মাসে হাত খরচ বাবদ এক লাখ টাকা দিতেন। সংসার জীবনে সালমান শাহর জীবনে কোনো সন্তান হয়নি। তাই সাক্ষী ডলির ছেলে ওমরকে সালমান শাহ সন্তানের মতো ভালোবাসত। ওমর সালমান শাহকে বাবা বলে ডাকত। পরবর্তীতে ডলির ছেলে ওমরকে দত্তক নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ডলির জোর আপত্তির কারণে দত্তক নেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে সালমান শাহর সংসার জীবনে সন্তান না হওয়ার অপূর্ণতা থেকে যায়। এ কারণে হতাশ ছিলেন। তাই চিত্রনায়ক সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন, তার মৃত্যু পরিকল্পিত কোনো হত্যাকা- ছিল না মর্মে তদন্তে প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর চিত্রনায়ক সালমান শাহ (চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন) ঢাকার ইস্কাটনের ফ্ল্যাটে মারা যান। তখন একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছিলেন তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে- এমন অভিযোগে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই অভিযোগটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তর করার আবেদন করা হয়। তখন অপমৃত্যু মামলার সঙ্গে হত্যাকা-ের অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেয় আদালত। ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে সিআইডি জানায়, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেন। সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে কমরউদ্দিন চৌধুরী রিভিশন মামলা দায়ের করেন। পরে ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠায় আদালত। দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট সেই প্রতিবেদন দাখিল করেন মহানগর হাকিম ইমদাদুল হক। তাতেও হত্যার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলা  চৌধুরী বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে ‘নারাজি’ দেন। তিনি ১১ জনের নাম উল্লেখ করে দাবি করেন, এরা তার ছেলেকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। মামলাটি এরপর তদন্ত করে র‌্যাব। তখন রাষ্ট্রপক্ষ আপত্তি তুললে ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ ৬-এর বিচারক ইমরুল কায়েস র‌্যাবকে মামলাটি আর তদন্ত না করার আদেশ দেন। তখন তদন্তের দায়িত্বে আসে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

সর্বশেষ খবর