শনিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার → জি এম কাদের

নেতৃত্বশূন্য বিএনপিকে জনগণ বিরোধী দল হিসেবে আস্থায় নিচ্ছে না

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

নেতৃত্বশূন্য বিএনপিকে জনগণ বিরোধী দল হিসেবে আস্থায় নিচ্ছে না

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের বলেছেন, পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অবর্তমানে পার্টির ভবিষ্যৎ এবং নেতৃত্ব নিয়ে যে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছিল কাউন্সিলের মাধ্যমে তার উত্তরণ ঘটেছে। বর্তমানে দল সম্পূর্ণ সুসংগ?ঠিত, শ?ক্তিশালী ও ঐক?্যবদ্ধ। পার্টিতে শৃঙ্খলাভঙ্গের কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, নেতৃত্বশূন্যতায় বিএনপিতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেজন্য জনগণ বিএনপিকে সরকারবিরোধী হিসেবে আস্থায় নিতে পারছে না। সোমবার জাতীয় পার্টির বনানী কার্যালয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় এই উপনেতা। জাতীয় পার্টি প্রসঙ্গে জি এম কাদের বলেন, ব্যক্তিকেন্দ্রিক বড় রাজনৈতিক দলগুলোয় দলপ্রধানের বয়স বেড়ে গেলে দলটি এগিয়ে যাবে কিনা, দলের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলবে কিনা শঙ্কা থাকে। জাতীয় পার্টি সেই পর্যায় পার করে এসেছে। এটা আমাদের বড় অর্জন। নতুন নেতৃত্ব হাল ধরায় জাতীয় পার্টির প্রতি মানুষের আস্থাও ফিরে আসছে। শৃঙ্খলায় এনে দলকে শক্তিশালী করা গেলে এবং সামনে আমরা যদি সঠিক রাজনীতি করতে পারি তাহলে দলের ভবিষ্যৎ খুবই ভালো। যারা রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করেন তাদেরও এই মত। সাধারণ মানুষেরও এটা প্রত্যাশা।

জি এম কাদের বলেন, দেশের বড় তিনটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে জাতীয় পার্টি অন্যতম। বড় অন্য একটি রাজনৈতিক দল বিএনপিতে নেতৃত্বশূন্যতা দেখা দিয়েছে। যদিও জাতীয় পার্টির চেয়ে তাদের জনসমর্থন বেশি ছিল। কিন্তু এখন তাদের নেতৃত্বশূন্যতার কারণে দলে বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশের মানুষের মধ্যে যারা সরকারবিরোধী তারা বিএনপিকে আস্থায় নিতে পারছে না। আশা করি, জাতীয় পার্টি বাংলাদেশের রাজনীতিতে দেশ ও জাতির স্বার্থে আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে। এর মধ্য দিয়ে জনগণের আরও বেশি আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পারবে। জনগণের আস্থা, ভালোবাসা ও সমর্থন নিয়ে দেশের শাসনভার গ্রহণ করতে পারবে। কমিটি গঠন নিয়ে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা, পদ ও মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগে বিক্ষোভ, পদত্যাগের ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জি এম কাদের বলেন, কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত করা হয় এবং তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় টিম গঠন করার। সভাপতি টিম চালাবেন। তাই তিনি পছন্দের টিম সাজাবেন। এখানে কারও দোষ-ত্রুটি, কেউ অনৈতিক কিছু করেছে বা মনোনয়ন বাণিজ্য কিংবা পদ বাণিজ্য হয়েছে, যারা বলছেন তারা হয়তো না বুঝেই বলছেন। আর এ ধরনের কথা বলার অধিকারও তেমন কারও নেই। কারণ, ভালো-খারাপের দায়িত্ব একজনকে দেওয়া হয়েছে। তাই তিনি যা ভালো মনে করেছেন দলের স্বার্থে করেছেন। আমি বিশ্বাস করি, এটা ন্যায়ভিত্তিক ব্যবস্থার মাধ্যমে করা হয়েছে। তিনি বলেন, কিছু কাজ সবাইকে সুখী করবেÑ এ ধারণা ঠিক নয়। এখানে যারা অসন্তুষ্ট হয়েছেন তারা সম্পূর্ণ বিষয়টি বুঝতে পারেননি অথবা কোনো না কোনো কারণে তারা এটা গ্রহণ করতে চাচ্ছেন না। কিন্তু সার্বিকভাবে কর্মীরা এটা গ্রহণ করেছেন। দেশবাসী জাপার কমিটি গঠনে কোনো অনিয়ম দেখছেন না। আমি মনে করি না যে, এটা নিয়ে কোনোরকম অভিযোগ উত্থাপনের সুযোগ আছে। অভিযোগ উত্থাপনের সুযোগ থাকলে সেটা আমার বিরুদ্ধে ওঠা উচিত। আমার সঙ্গে যারা কাজ করছেন তারা আমার নির্দেশে কাজ করছেন। আমি জ্ঞানত চেষ্টা করেছি সেখানে কোনো অনিয়ম যাতে না হয়। আমি সমালোচনা পছন্দ করি না। সমালোচনা বিশ্লেষণ করে কোনো ত্রুটি থাকলে তা সংশোধনের চেষ্টা করি।

জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির বিরোধী দলের ভূমিকা প্রসঙ্গে জি এম কাদের বলেন, আমরা সংসদে বিরোধী দল, বাইরেও আমরা বিরোধী দল। সংসদে আমাদের বিরোধী দলের ভূমিকা হলো পরামর্শক। সাংবিধানিকভাবে আমাদের সরকারপ্রধানকে সর্বাত্মক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে দায়িত্ব পালনের জন্য। ফলে সংসদে এমন কোনো ক্ষমতা নেই যে, সরকারের বিষয়ে বিরোধী দল নিজস্ব কিছু করতে পারবে অথবা সরকারি প্রস্তাব কিংবা সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে অনুমোদন দেবে না এমন সুযোগও নেই। বিরোধী দল হিসেবে সংসদে আমরা যা করতে পারি তা হলো, সরকারের প্রস্তাবের বিপক্ষে জনগণের কিছু সেন্টিমেন্ট তুলে ধরা। জনগণের কল্যাণ নয়, এমন কিছু বিষয় তুলে ধরতে পারি। জনগণের মুখের ভাষা সংসদে তুলে ধরা আমাদের কাজ। এ কাজটি জাপা খুব সুচারুরূপে করছে। তিনি বলেন, রাজপথে বিরোধী দলের একটা কনসেপ্ট চেঞ্জ হয়ে গেছে। জ্বালাও-পোড়াও করে সরকারকে বিপাকে ফেলা, তার মাধ্যমে দাবি আদায়ের যে প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন চালু ছিল তা এখন নেই। সে প্রথা জনগণও গ্রহণ করছে না। বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে এ ধরনের কালচার উঠে গেছে। প্রতিবাদের ভাষা যেটা বলা হয়, সে ভাষাই জাতীয় পার্টি জনগণের জন্য ব্যবহার করছে। জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে থেকে এবারও মন্ত্রিত্ব চায় কিনাÑ জানতে চাইলে জি এম কাদের বলেন, মন্ত্রিত্বের কোনো প্রস্তাব এখনো আসেনি। যদি এমন কোনো প্রস্তাব আসে তাহলে আমরা নীতিনির্ধারণী ফোরামে আ?লোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। রওশন এরশাদকে দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে না, কোনো দূরত্ব আছে কিনাÑ জানতে চাইলে জি এম কাদের বলেন, উনার সঙ্গে আমাদের কোনো দূরত্ব নেই। উনি স্বাস্থ্যগত কারণে সব সময় সবকিছুতে আসতে পারছেন না। তবে একুশে ফেব্রুয়ারির প্রোগ্রামে তিনি এসেছিলেন। উনি আগেও সব প্রোগ্রামে থাকতেন না। বিশেষ প্রোগ্রামে আসতেন। এজন্যই উনাকে সম্মানজনক একটি অবস্থানে রাখা হয়েছে। মুরব্বি হিসেবে উনার যে দায়দায়িত্ব তা উনি পালন করছেন। এরশাদ ট্রাস্ট পুনর্গঠন নিয়ে জি এম কাদের বলেন, এইচ এম এরশাদ যেভাবে ট্রাস্ট করে গেছেন এটি সেভাবে চলুক। ছেলের ভরণপোষণ, সামাজিক কাজকর্ম তিনি যেভাবে করতেন সেগুলো যাতে ট্রাস্টের মাধ্যমে চলে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর