রবিবার, ১ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

গার্মেন্টে শ্রমিক অসন্তোষের শঙ্কা

অবনতি হতে পারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে স্বরাষ্ট্রের প্রতিবেদন

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও সাভারের অর্ধশতাধিক গার্মেন্ট কারখানায় যে কোনো সময় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিতে পারে- এমন আশঙ্কা করে সরকারের কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা। তারা তথ্য নিয়ে জানতে পেরেছেন, রাজধানী ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকায় দেড়শর মতো কারখানায় গত জানুয়ারি মাসের বেতন দেওয়া হয়নি। সময়মতো বেতন-ভাতা পরিশোধ না করা, শ্রমিক ছাঁটাই, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার অভাবসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সংশ্লিষ্ট কারখানাগুলোতে এই অসন্তোষের আশঙ্কা করা হচ্ছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, যেসব কারখানা বেতন দিতে ব্যর্থ হচ্ছে- সেগুলো চিহ্নিত করে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএ ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও অবনতি হতে পারে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পুলিশের ওই প্রতিবেদনটির অনুলিপিসহ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই প্রতিবেদনে ডিইপিজেড গণকবাড়ি, আশুলিয়ার একটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির তথ্য দিয়ে বলা হয়েছে, সেই কারখানায় ৪২০ জন শ্রমিক কর্মরত। কাজের অর্ডার না থাকায় বেতন পরিশোধ করতে পারছে না মালিকপক্ষ। সরকার মার্কেট, জামগড়ার একটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ নেওয়ার কারণে বেতন দিতে পারছে না বলে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া আশুলিয়ার পলাশবাড়ী এলাকার একটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বিজিএমইএর সদস্য এই কারখানাটির শ্রমিক সংখ্যা ৬০০ জন। মালিকপক্ষের গাফিলতির কারণে নির্ধারিত সময়ে বেতন-ভাতা পরিশোধ হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, ঢাকা মহানগরী, সাভার, আশুলিয়া, টঙ্গী ও নারায়ণগঞ্জের মোট ১৪৬টি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে গত জানুয়ারি মাসের বেতন না দেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৯০টি কারখানায় শ্রমিকদের বিলম্বিত বেতন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অবশিষ্ট ৫৬টি ফ্যাক্টরির বেতন-ভাতা পরিশোধের সম্ভাবনা নেই। ফলে ওই কারখানাগুলোতেই শ্রমিক অসন্তোষের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমনকি ওই কারখানাগুলোতে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা।  এ অবস্থায় পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে স্বার্থান্বেষী মহল, দেশি-বিদেশি এনজিও এবং অসৎ শ্রমিক নেতারা যাতে শ্রমিকদের উসকানি দিয়ে অসন্তোষ সৃষ্টি না করতে পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার সুপারিশ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। কর্মরত শ্রমিকদের নিয়মিত বেতন-ভাতা পরিশোধ, ঝুঁকিপূর্ণ গার্মেন্ট কারখানা যেগুলোতে অসন্তোষ হতে পারে, সেখানে নিরাপত্তা জোরদার এবং অগ্রিম তথ্য সংগ্রহে শিল্প পুলিশের গোয়েন্দা শাখার তৎপরতা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে সুপারিশে। পুলিশের দেওয়া এই প্রতিবেদনটির তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে বিকেএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, আজ (গতকাল) সকালেও এক গার্মেন্ট মালিক তার কারখানা শ্রমিকদের বেতন দিতে না পেরে তাকে ফোন করেছিলেন। তিনি ওই কারখানা মালিককে বলেছেন, যেভাবেই হোক আগে যেন শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা হয়। তৈরি পোশাক মালিক সংগঠনের এই নেতা বলেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির প্রভাব ছাড়াও বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং পানিসহ বিভিন্ন সেবা খাতের খরচ বেড়ে যাওয়ায় তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। উপরন্তু বিদেশি ক্রেতারা তাদের কাছ থেকে নেওয়া পোশাকের দাম কমিয়ে দেওয়ার কারণে অনেক গার্মেন্ট মালিক সমস্যায় পড়েছেন।

সর্বশেষ খবর