শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৩ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা
দিল্লিতে ড্রেনে চার লাশ

সংঘর্ষ নিয়ে ভারতের পার্লামেন্ট অচল

নয়াদিল্লি প্রতিনিধি

সংশোধনী নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে ২৪-২৮ ফেব্রুয়ারি গোষ্ঠীগত সংঘর্ষ এবং এ ঘটনায় ৪৬ জনের মৃত্যুকে ঘিরে গতকাল ভারতীয় সংসদের উভয় কক্ষ (লোকসভা ও রাজ্যসভা) উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এদিকে সোমবার রাজধানীর দুটি এলাকায় নর্দমা থেকে চারটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এরা দাঙ্গায় মারা গেছে কি-না সে বিষয়ে পুলিশ এখনো স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারছে না। তবে তারা বলছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

হট্টগোল, অধিবেশন মুলতবি : সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিবৃতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর পদত্যাগ দাবিতে রাজ্যসভা ও লোকসভা- উভয় কক্ষেই সোচ্চার ছিল কংগ্রেস, তৃণমূল, আপ, বিএসপিসহ অধিকাংশ বিরোধী দল। তুমুল প্রতিবাদের মুখে পড়ে আপাতত ‘পরে আলোচনা’র কৌশল নিয়েছে শাসক দল। বিরোধীদের হই-হট্টগোলের ফলে দিনের মতো মুলতবি রাজ্যসভা। লোকসভার অধিবেশনও মুলতবি হয়েছে দফায় দফায়।

সংসদীয় সূত্র জানায়, অধিবেশন ঠিকভাবে চললে তখন বিবৃতি দিতে পারেন অমিত শাহ। আবার লোকসভার বাইরে গান্ধী ভাস্কর্যের পাদদেশে চোখে কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদে শামিল হন তৃণমূল এমপিরা। সেই বিক্ষোভে আবার কংগ্রেস এমপিরাও যোগ দেন। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বাজেট প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল সংসদে। কিন্তু তার মধ্যেই ঘটে গেছে দিল্লিতে রক্তক্ষয়ী গোষ্ঠী সংঘর্ষ। অভিযোগ উঠেছে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আগেভাগে ব্যবস্থা নিলে এত বড় সংঘর্ষ এড়ানো যেত। রাজ্যসভায় কংগ্রেসের দলনেতা গোলাম নবী আজাদ প্রশ্ন তোলেন, দিল্লিতে যখন সংঘর্ষ ছড়াচ্ছে, সরকার কি তখন ঘুমোচ্ছিল? দিল্লির এই সংঘর্ষ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিবৃতি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ইস্তফার দাবি তোলে কংগ্রেস।

দিল্লির সংঘর্ষ নিয়ে আলোচনার দাবি স্পিকারও অবশ্য উড়িয়ে  দেননি। তবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আলোচনার যোগ্য। আপাতত আমাদের প্রাধান্য দেওয়া উচিত আগে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরানোয়। যদি সেটা হয়, তখন আলোচনা করা যাবে।’ তিনি আশ্বস্ত করেন, পরে এ নিয়ে আলোচনার জন্য সময় বরাদ্দ করা হবে। কিন্তু বিরোধীরা তা মানতে নারাজ। হই-হট্টগোলের পাশাপাশি স্পিকারের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান-বিক্ষোভ শুরু করেন এমপিরা। তার জেরে দিনের মতো অধিবেশন মুলতবি করে দেন স্পিকার।

সোমবার রাজ্যসভার চেয়েও বেশি বিশৃঙ্খলা হয়েছে লোকসভায়। অমিত শাহর পদত্যাগ দাবি করে তুমুল হই-হট্টগোল শুরু করেন বিরোধীরা। কিন্তু রাজ্যসভার মতোই লোকসভায়ও স্পিকার ওম বিড়লা জানিয়ে দেন, এটা আলোচনার উপযুক্ত সময় নয়। তিনি বলেন, ‘অবস্থার উন্নতির জন্য আমরা অপেক্ষা করব। তারপর আলোচনার অনুমোদন দেব।’ প্রায় সব বিরোধী দলের এমপিদের  দফায় দফায় হট্টগোলে মুলতবি হয়ে যায় অধিবেশন।

অধিবেশন শুরুর আগে থেকেই অবশ্য সংসদ চত্বর ছিল সরগরম। সকালের দিকেই গান্ধী মূর্তির পাদদেশে চোখে কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদে শামিল হন শুখেন্দু শেখর রায়, সৌগত রায়, কাকলি  ঘোষ দস্তিদার, মহুয়া মৈত্র, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়রা। তৃণমূলের এই প্রতিবাদ সাড়া পড়ে অন্য দলের মধ্যেও। কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী, অধীর চৌধুরী, শশী থারুরকেও তৃণমূলের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে  যোগ দিতে দেখা যায়। আপ এমপিরাও একসময় যোগ দেন।

নর্দমায় লাশ : নতুন করে চার মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় পশ্চিম দিল্লির তিলকনগর ও রাজৌরি গার্ডেনে সহিংসতার আশঙ্কায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে প্রথমে তিলকনগর মেট্রো স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে পশ্চিম উত্তমনগর, তুঘলকাবাদ, বদরপুর, সুরজমল স্টেডিয়াম, নাঙ্গলোই মেট্রো স্টেশনে প্রবেশ-বহির্গন পথও বন্ধ হয়ে যায়। দোকানে, শপিং মলে ঝাপ বন্ধ হতে থাকে। হুড়োহুড়ি করে বাড়িতে ফিরতে থাকে সাধারণ মানুষ। তবে ঘণ্টাখানেক পরে ফের মেট্রো স্টেশন খোলা হয়। এ বিষয়ে দিল্লি পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (পশ্চিম রেঞ্জ) শালিনী সিংহ রাস্তায় নেমে জনতাকে গুজবে কান না দিতে অনুরোধ করেন।

সর্বশেষ খবর