বুধবার, ৪ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

বিজিবি-গ্রামবাসী সংঘর্ষে নিহত ৫

নিজস্ব প্রতিবেদক

খাগড়াছড়িতে গ্রামবাসীর সঙ্গে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় বিজিবি সদস্যসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে মাটিরাঙা উপজেলার গাজীনগর এলাকায় ব্যক্তিমালিকানাধীন বাগানের গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষ হয়। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। নিহত ব্যক্তিরা হলেন- বিজিবি ৪০ ব্যাটালিয়নের সদস্য মোহাম্মদ শাওন (৩০), বাগানের মালিক সাহাব মিয়া ওরফে মুছা (৫৫), সাহাব মিয়ার দুই ছেলে আহমদ আলী (২৪) ও আকবর আলী (২৮)। গুরুতর অবস্থায় চট্টগ্রামে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা গেছেন একই এলাকার সিরাজ মিস্ত্রির ছেলে মফিজ মিয়া (৫০) নামে একজন। এদিকে স্বামী ও দুই সন্তানের নিহত হওয়ার খবর শুনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সাহাব মিয়ার স্ত্রী রঞ্জু বেগম (৫৫)। এ ঘটনায় একই পরিবারের চারজনের মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। ক্ষণে ক্ষণে মূর্ছা যান স্বজনরা। গতকাল বেলা ৩টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সেনাবাহিনীর গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শাহরিয়ার জামান, খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস, খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আবদুল আজিজ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালাহ উদ্দিন, মাটিরাঙা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, মাটিরাঙা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিভীষণ কান্তি দাশ, মাটিরাঙা পৌরসভার মেয়র শামছুল হক ও মাটিরাঙা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম হুমায়ুন মোরশেদ খান। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শাহরিয়ার জামান ও জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস। এ সময় তারা এলাকাবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শাহরিয়ার জামান বলেন, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। বিষয়টি ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস। তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও বন বিভাগের কর্মকর্তা। মাটিরাঙা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুদ্দীন ভূঁইয়া জানান, গাছ কাটাকে নিয়ে বিজিবির পলাশপুর জোন ও গাজীনগর গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। সাহাব মিয়ার বাগানের একটি কাঁঠালগাছ কাটাকে কেন্দ্র করে তার পরিবারের সঙ্গে বিজিবির কথাকাটাকাটি হয়। পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৈদ্যুতিক লাইন যাওয়ার জন্য সাহাব মিয়া তার বাগানের কয়েকটি গাছ কাটেন। গতকাল সকালে সাহাব মিয়া ট্রাক্টরে গাছের টুকরাগুলো গাজীনগর বাজারে নেওয়ার সময় সেগুলোকে অবৈধ বলে জব্দ করেন বিজিবি সদস্যরা। একপর্যায়ে জব্দ করা গাছ তাদের হেফাজতে নিতে চান তারা। এমন পরিস্থিতিতে এলাকাবাসী জড়ো হয়ে বিজিবি সদস্যদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। তখনই এলাকাবাসীর সঙ্গে বিজিবির সদস্যদের সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষের সময় বিজিবির সদস্যরা গুলি করলে ঘটনাস্থলেই সাহাব মিয়া ও তার ছেলে আকবর আলী নিহত হন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বিজিবি সদস্য শাওন এবং সাহাব মিয়ার ছেলে আহমদ আলী, মফিজ মিয়া ও তার ছেলে হানিফ মিয়াকে প্রথমে মাটিরাঙা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে বিজিবি সদস্য শাওন ও আহমদ আলীকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। গুরুতর অবস্থায় মফিজ মিয়া ও হানিফ মিয়াকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রামে নেওয়ার পথে মফিজ মিয়ার মৃত্যু হয় বলে জানান মাটিরাঙার পৌর মেয়র শামছুল হক। মাটিরাঙা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, ঘটনাস্থলে নিহত চারজনের মধ্যে বিজিবি সদস্যসহ দুজনের লাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। জানতে চাইলে পুলিশ সুপার আবদুল আজিজ বলেন, এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে। মাটিরাঙার পৌর মেয়র শামছুল ইসলাম জানান, এলাকাবাসী এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। বিক্ষোভকারীরা বিজিবির চেকপোস্ট প্রত্যাহার ও নিহতদের বিচার দাবি করেছেন। নিহত সাহাব মিয়ার মেয়ে নিলুফা বেগম জানান, বিদ্যুতের লাইন যাওয়ার কারণে তারা বেশ কিছুদিন আগে তাদের বাগানের একটি গাছ কেটে রাখেন। গতকাল বেলা ১১টার দিকে গাছটি পাঁচ টুকরা করে গাজীনগর বাজার স’ মিলে নেওয়ার সময় বিজিবি সদস্যরা বাধা দেন। এ সময় বিজিবির সঙ্গে তার বাবা সাহাব মিয়া ও দুই ভাইয়ের তর্ক শুরু হয়। তর্কাতর্কির একপর্যায়ে বিজিবি সদস্যরা গুলি করলে তাদের পরিবারের তিনজন মারা যান। সাহাব মিয়ার ছোট ভাই ইব্রাহিম বলেন, বিজিবি সদস্যদের গুলিতে ঘটনাস্থলে তার ভাই এবং দুই ভাতিজা নিহত হন। মাটিরাঙা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম বাবু বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিজিবি সাধারণ মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করে আসছে। সাধারণ মানুষ নিজেদের বাড়ির গাছ কাটতে গেলেও বিজিবি বাধা দেয়।

চমেক হাসপাতালে একজন ভর্তি : খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা উপজেলায় গ্রামবাসীর সঙ্গে বিজিবি সদস্যদের সংঘর্ষে হানিফ (২৮) নামে একজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। চমেক হাসপাতালের পুলিশফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল আলম বলেন, ‘হানিফের অবস্থার উন্নতি হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর