বুধবার, ৪ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা
কারাগারে পাঠানো বিচারককে বদলি

আবেদন খারিজের চার ঘণ্টার মধ্যে জামিন সাবেক এমপি আউয়াল দম্পতির

নিজস্ব প্রতিবেদক ও পিরোজপুর প্রতিনিধি

দুর্নীতির মামলায় কারাগারে যেতে হলো না পিরোজপুরের সাবেক সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীনকে। গতকাল দুপুরে জামিন আবেদন খারিজ করে আদেশ হলেও বিকালে পুনর্বিবেচনার আবেদন করে জামিন পেয়েছেন তারা। এ ঘটনা ঘটেছে চার ঘণ্টার ব্যবধানে।

জানা গেছে, গতকাল দুপুর পৌন ১২টার দিকে পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজ মো. আবদুল মান্নান আউয়াল দম্পতির জামিন আবেদন খারিজ করে আদেশ দেন। এর ঘণ্টা দুয়ের মধ্যে এই বিচারককে মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করে আদেশ জারি করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়। পরে বিকালে ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ (যুগ্ম জেলা জজ) নাহিদা নাসরিন পুনর্বিবেচনার আবেদন মঞ্জুর করে সাবেক এমপি আউয়াল ও তার স্ত্রীকে জামিন দেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মুনসুর উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শুনেছি জেলা জজ আদালতের বিচারক মো. আবদুল মান্নানকে আইন মন্ত্রণালয় মঙ্গলবারই বদলি করেছে। এরপর যুগ্ম জেলা জজ নাহিদ নাসরিন দায়িত্ব পেয়েছেন। এ ছাড়া আর কোনো বিচারক বর্তমানে জেলায় নেই, যিনি দায়িত্ব বুঝে নিতে পারবেন।’ এ বিষয়ে আউয়ালের আইনজীবী জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক খান পান্না বলেন, ‘সাবেক এমপি আউয়ালের বিরুদ্ধে দুদক যে মামলা করেছে তাতে কোনো ক্রিমিনাল অফেন্স না থাকায় আমরা জামিনের আবেদন করি।’ তিনি বলেন, ‘জেলা ও দায়রা জজ সম্ভবত আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে জামিনের আবেদন নাকচ করেন। এর কিছু পরই আমরা জানতে পারি জেলা ও দায়রা জজ আবদুল মান্নানের স্থলে ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ হয়েছেন দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা জজ নাহিদ নাসরিন। এর পরই সব আইনজীবী পুনরায় তার আদালতে জামিনের আবেদন করেন। ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ নাহিদ নাসরিন শুনানি শেষে আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীনকে দুই মাসের জামিন দেন।’ বিচারকের বদলির বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজ মো. আবদুল মান্নানকে বদলি করা হয়নি। প্রশাসনিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় তাকে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। সূত্র আরও জানান, তার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ রয়েছে। ওইসব অভিযোগের তদন্ত চলমান থাকায় তাকে সংযুক্ত করে এ আদেশ জারি করা হয়েছে।

বিক্ষোভ-ভাঙচুর : দুপুরে এমপি আউয়াল ও তার স্ত্রীর জামিন আবেদন খারিজ হওয়ার পর আদালত পাড়াসহ পিরোজপুর শহরে বিক্ষোভ করেছেন আউয়ালের সমর্থকরা। ভাঙচুর করেন ছাত্রলীগ একাংশের কার্যালয়। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সরকারদলীয় লোকজন শহরের বঙ্গবন্ধু চত্বর থেকে জেলা হাসপাতাল পর্যন্ত বিভিন্ন সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করে রাখলে যানবাহন কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ সদস্যরা সেগুলো অপসারণ করে যান চলার সুযোগ করে দেন। বেলা ১টার দিকে বিক্ষুব্ধ কর্মীরা শহরের প্রধান সড়কগুলোয় প্রতিবাদ মিছিল করতে থাকেন এবং ছাত্রলীগ একাংশের একটি অফিসঘরে হামলা চালিয়ে আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেন। এর ফলে শহরের দোকানপাট সব বন্ধ হয়ে যায়। ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা, জালিয়াতি, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে পিরোজপুর ১ (সদর-নাজিরপুর-স্বরূপকাঠি) আসনের সাবেক এমপি এ কে এম এ আউয়াল ও তার স্ত্রী পিরোজপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লায়লা পারভীনের বিরুদ্ধে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করে দুদক। এর একটিতে আসামি করা হয় এমপির স্ত্রীকে। তিনটি মামলায় হাই কোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়েছিলেন আউয়াল ও তার স্ত্রী। গত ৭ জানুয়ারি হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ তাদেরকে আট সপ্তাহের আগাম জামিন দেয়। সে অনুযায়ী আউয়াল দম্পতির জামিনের মেয়াদ শেষ হয় গতকাল।

সর্বশেষ খবর