শুক্রবার, ৬ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা
অধিনায়ক মাশরাফির পদত্যাগ

ক্রিকেটকে এখনই গুডবাই নয়

মেজবাহ্-উল-হক, সিলেট থেকে

ক্রিকেটকে এখনই গুডবাই নয়

জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব থেকে পদত্যাগ করলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। গতকাল সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ওয়ানডের নেতৃত্ব থেকেও সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। অধিনায়ক হিসেবে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে আজকের ম্যাচটি মাশরাফির শেষ ম্যাচ। নড়াইল এক্সপ্রেস গতকাল বলেন, ‘আজ (গতকাল) আমি আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। ক্যাপ্টেন হিসেবে কাল (আজ) আমার শেষ ম্যাচ। আমার প্রতি আস্থা রাখার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে ধন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ জানাই, আমার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দলে যত ক্রিকেটার খেলেছেন তাদের। টিম ম্যানেজমেন্টকে ধন্যবাদ, যাদের অধীনে আমি খেলেছি। আমার ক্যাপ্টেন্সি শুরু হয়েছিল কোচ হাতুরাসিংহের সময়। তারপর খালেদ মাহমুদ সুজন, স্টিভ রোডস। এখন রাসেল ডমিঙ্গোর অধীনে খেলছি। সহযোগিতা করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।’ নেতৃত্ব ছাড়লেও এখনই ক্রিকেটকে গুডবাই জানাচ্ছেন না মাশরাফি। জাতীয় দলের সাধারণ একজন সদস্য হিসেবে থাকতে চান আরও কিছু দিন! জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজের প্রথম দিন থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন নড়াইল এক্সপ্রেস। তার অবসর নিয়ে কথা উঠলেও তিনি পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন এখনই ক্রিকেট ছাড়ছেন না। কিন্তু গতকাল হঠাৎ প্রেস কনফারেন্সে এসেই ঘোষণা দেন নেতৃত্ব ছাড়ার। মাশরাফি বলেন, ‘আমি সকালেই সিদ্ধান্ত নিই অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার এটাই উপযুক্ত সময়। অনেক হয়েছে আর নয়। অথচ গতকালও (পরশু) সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলাম, কী করব! সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর পরিবারের সবার সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমার সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছেন। আমি কথা বলেছি বোর্ড প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও।’ নতুন অধিনায়ক কে হচ্ছেন সে বিষয়েও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। মাশরাফি বলেন, ‘তিন সিনিয়র (সাকিব, মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ) ক্রিকেটারই অধিনায়ক হওয়ার যোগ্য। তারা অনেক দিন থেকেই ক্রিকেট খেলছে। কীভাবে সবকিছু মোকাবিলা করতে হয় তা জানে।’ মাশরাফির জোরালো দাবি, ‘অনেক দিন থেকেই কথা হচ্ছিল ২০২৩ বিশ্বকাপের জন্য দল গোছানো হবে। আমিও মনে করি এটাই উপযুক্ত সময়। তবে আমার দাবি, যাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে তার ওপর যেন ২০২৩ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত আস্থা রাখা হয়।’ মাশরাফির পর ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে বিসিবির প্রথম পছন্দ সাকিব আল হাসান। কিন্তু তারকা অলরাউন্ডারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে আগামী অক্টোবরে। তার আগে অল্প সময়ের জন্য তরুণ কাউকে অধিনায়ক করা যায় কিনা? মাশরাফি বলেন, ‘আমি আগেও এক দিন বলেছিলাম একজন তরুণ খেলোয়াড় যখন বাংলাদেশ দলের জার্সি পরে নামে তখন সেটাই তার জন্য অনেক বড় চাপ। আগের মতো ক্রিকেট এখন আর নেই। মানুষ তাকিয়ে থাকে, মিডিয়া তাকিয়ে থাকে। ক্যামেরা থাকে। পারফর্ম কেমন করছে। এত কিছুর ওপর সে ক্যাপ্টেন্সি করবে। এটা ডিপেন্ড করে। ক্রিকেট বোর্ড বা কোচিং স্টাফদের যদি মনে হয় যে এ (তরুণ) অতটুকু চাপ সামলানোর মতো তাহলে কেন নয়? কিন্তু আমার মনে হয় অনেক বেশি ভেবেচিন্তে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।’ মাশরাফির নেতৃত্বে বাংলাদেশ মোট ৮৭টি ওয়ানডে খেলেছে। তার মধ্যে জয় ৪৯। আজ সিরিজের শেষ ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে হারানো জয়ের হাফ সেঞ্চুরিও পূরণ হবে নড়াইল এক্সপ্রেসের। ২০১৪ সালে মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল যখন হারের বৃত্তে আটকে যায় তখনই মাশরাফির হাতে নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হয়েছিল। ‘ক্যাপ্টেন মাশরাফি’ তার প্রথম সিরিজেই জিম্বাবুয়েকে ৫-০-তে হারায়। তারপর ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। একই বছর ম্যাশের নেতৃত্বেই দেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে টাইগাররা। বাংলাদেশের ক্রিকেটে আরও বেশ কিছু ‘প্রথম’ এর জন্ম তার হাত ধরেই। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সিরিজ জয়। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল ইংল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠিত ২০১৭ সালে আইসিসি ট্রফির সেমিফাইনালে খেলা। নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি। আজই শেষ হয়ে যাচ্ছে, অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফির অধ্যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর