শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১০ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা
মন্ত্রিসভা বৈঠক

জনসমাগম এড়িয়ে চলতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

থিম সং গাইতে চান মুরাদ, ভর্ৎসনা । দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রীর টুঙ্গিপাড়া কান্ডে বিস্ময়

নিজামুল হক বিপুল

মুজিববর্ষের থিম সং গাইতে চান তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। এ কথা শুনে ক্ষুব্ধ হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ভর্ৎসনা করেন তথ্য

প্রতিমন্ত্রীসহ যারা এমন আগ্রহ দেখিয়েছেন। বলেন, কেউ কেউ থিম সং পরিবেশন করতে চান। আমি তাদের অডিশন নেব। যদি না পারেন তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেব। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক শেষে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এ মনোভাব প্রকাশ করেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।

বৈঠকে উপস্থিত সূত্র জানায়, বৈঠকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানের ওপর প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাকে না জানিয়ে টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ায় ২ হাজার ৮০০ গৃহহীনকে ঘর বরাদ্দ দেওয়ায়। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করে বলেন, টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়ায় এত গৃহহীন পেলেন কোথায়? এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাসের বিষয়টি মাথায় রেখে সবাইকে জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে মন্ত্রিসভার সদস্যদের বলেন, করোনা নিয়ে কেউ যেন নিজেদের মতো করে কোনো বক্তব্য না দেন। সবাইকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার নির্দেশনা  দেন তিনি। বৈঠক শেষে বিকালে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিং করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। এ সময় তার পাশে বসা স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত একজনের সংস্পর্শে আসায় ৪০ জনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। মন্ত্রিসভা বৈঠক সূত্র জানায়, গতকালের বৈঠকে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান উপস্থিত ছিলেন না। নির্ধারিত বৈঠক শেষে মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে অনির্ধারিত আলোচনার সূত্রপাত করেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। তিনি বলেন, মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যের মধ্যে মুজিববর্ষের থিম সং গাওয়ার আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ চাপ দিচ্ছেন তাকে থিম গাইতে দেওয়ার জন্য। এ সময় শেখ হাসিনা তথ্য প্রতিমন্ত্রীর নাম উল্লেখ করে তাকে ভর্ৎসনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেশ কয়েকজন গীতিকারকে দিয়ে থিম সং  লেখানো হয়েছে। সেই গানগুলো আমি এবং শেখ রেহানা বারবার শুনে শব্দ চয়ন ও অন্যান্য বিষয় দেখিয়ে দিয়েছি। আর এখন কেউ কেউ থিম সং পরিবেশন করতে চান। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, যারা থিম সং গাইতে চান আমি তাদের অডিশন নেব। না পারলে কঠোর ব্যবস্থা নেব। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, তথ্য প্রতিমন্ত্রী ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী কাশবনের ভিতরে গান গাইতে ও নাচতে যান। এটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করেন। বলেন, নেচে নেচে এসব গান গাওয়ার মধ্যে আরও কিছু বিষয় আছে। বৈঠক শেষ হয়ে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী যখন উঠে যাচ্ছেন তখন তাকে থামিয়ে দিয়ে দুর্যোগ্য ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমার কিছু কথা ছিল। প্রধানমন্ত্রী ‘আজ না’ বলার পরও প্রতিমন্ত্রী আবারও বলেন, একটু শুনোন। এ কথা বলার পর প্রধানমন্ত্রী আবারও বসেন। এ সময় ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা গৃহহীনদের ঘর বরাদ্দ দেওয়া শুরু করেছি। রবিবারই টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ায় ২ হাজার ৮০০ গৃহহীনকে ঘর বরাদ্দ দিয়েছি। এ কথা শুনেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় এত গৃহহীন পেলেন কোথায়? আমি জানি না, আপনি বরাদ্দ দিয়ে দিলেন। আমার এলাকায় তো এত গৃহহীন নেই। এটি উপকূলীয় এলাকাও না। আজই এই বরাদ্দ বাতিল করুন। আর এত টাকা পেলেন কোথায়?

এ সময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা বিভিন্ন খাত থেকে কাটছাঁট করে অর্থ বের করেছি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাঁর সচিবের (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব) কাছে জানতে চান, টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়ার তালিকা কে দিয়েছে? জবাবে প্রধানমন্ত্রীর সচিব বলেন, তাদের কাছে যে তথ্য ছিল সেটি তারা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে দিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, সব বরাদ্দ বাতিল করেন। আমি সবাইকে নিয়ে বৈঠক করে সমন্বয়ের মাধ্যমে পরবর্তীতে পদক্ষেপ নেব।

মন্ত্রিসভার গতকালের বৈঠকে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর আইন ২০২০ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ওই আইনের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে একজন সিনিয়র মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমার মনে হচ্ছে, কিউরেটরের বিষয়টি আইনে উল্লেখ করা হয়নি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ওই মন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, পড়ালেখা করে বলছেন নাকি এমনিতেই বলছেন? একটু পড়েন, দেখেন...। তারপর ওই মন্ত্রী বলেন, ওহ এটি আইনে আছে। এ কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী আবার বলেন, পড়ালেখা করে কথা বলবেন। আরেক সিনিয়র মন্ত্রীকে না জেনে কথা বলার জন্য লজ্জা দেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস নিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষ করে জনসমাগম,  জনঘনত্বপূর্ণ এলাকা এড়িয়ে চলার জন্য নির্দেশনা দেন। একই সঙ্গে জরুরি কোনো প্রয়োজন না হলে বিদেশি অধ্যুষিত এলাকা, বন্দর এলাকাও পরিহারের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ    হাসিনা মন্ত্রিসভার সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে কেউ যেন নিজেদের মতো করে কোনো বক্তব্য না দেন। অতীতে অনেক বিষয় নিয়ে একেক মন্ত্রী একেক রকম বক্তব্য দিয়েছেন। এভাবে যেন এখন কেউ কথা না বলেন। সবাই শুধু একটি বলবেন। করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক না ছড়ানোর জন্য যে ব্রিফিং করা হয়েছে। সেটিই যেন সবাই বলেন।  নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের উপস্থিতিতে স্বাস্থ্য সচিব জানান, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রোধের জন্য আমরা ব্যবস্থাও নিয়েছি। তাদের কন্টাক্ট ট্র্যাকিং করে কোথায় গেছে, কাদের সঙ্গে মিশেছে- সবকিছু করে...আমরা প্রথমজনের জন্য ৪০ জনকে ট্র্যাক করেছি। কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করেছি। তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী, তাদের আমরা ফার্স্ট কন্টাক্ট ধরব, এক্সটেন্ডেড কন্টাক্ট ধরব, তাদের কীভাবে কোয়ারেন্টাইন করব- সবকিছু ফলো করেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। একজনের জন্য ৪০ জনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। অন্য দুজনের জন্য কতজনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য সচিব বলেন, এটার কোনো গড় অঙ্ক নেই। কার সঙ্গে মিশেছেন, কন্টাক্ট হয়েছে, তাদের লোকাল লেভেলে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এটার সুনির্দিষ্ট সংখ্যা বলতে পারব না। আক্রান্ত দেশগুলো থেকে মানুষ আসার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেসব বিষয়ে আমরা প্রথম থেকেই অ্যাডভাইস করছিলাম। যেখানে বেশি প্রাদুর্ভাব হয়েছে, সেখান থেকে যেন কম লোক আসে। এমনকি আমাদের যারা ওসব দেশে আছেন, তারাও যাতে যাতায়াত রেস্ট্রিকটেড করে দেন। সে বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছিলাম। আসাদুল ইসলাম বলেন, যেসব দেশে বেশি আক্রান্ত সেই সব দেশের অনঅ্যারাইভাল ভিসা স্থগিত করা হয়েছে। আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পরামর্শ দিয়েছি, এগুলো করার দায়িত্ব পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের।

সর্বশেষ খবর