বুধবার, ১১ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

আক্রান্তদের অবস্থা অপরিবর্তিত

লন্ডনে ব্রিটিশ-বাংলাদেশির মৃত্যু, রাজবাড়ীতে ইতালিফেরত বাবা-ছেলে পর্যবেক্ষণে, ফিরিয়ে দেওয়া হলো ভারতীয় নাগরিককে, সৌদিফেরত দম্পতি ও মানিকগঞ্জের ৫৯ কোয়ারেনটাইনে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে যে তিন ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের অবস্থা স্থিতিশীল। তারা একটি হাসপাতালের ‘আইসোলেশন’ ইউনিটে চিকিৎসাধীন। গতকাল নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, ওই তিনজন ছাড়া আরও আটজন আইসোলেশনে আছেন। আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, ইতালি থেকে আসা প্রবাসী বাঙালিদের কাছাকাছি এসেছেন, এমন চারজনকে কোয়ারেনটাইনে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশ থেকে  আসা আরও বেশ কিছু ব্যক্তিকে বাড়িতে কোয়ারেনটাইন করে রাখা হয়েছে। মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সাতজনের নাক-মুখের লালা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে কেউ আক্রান্ত হয়নি। করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেছেন, উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বিদেশ ফেরতদের করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাক বা না থাক তাদের বাড়িতে ১৪ দিন কোয়ারেনটাইন থাকতে হবে। এ সময়ের মধ্যে পারতপক্ষে বাইরে বের হওয়া যাবে না ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। তবে যদি একান্তই বাইরে যেতে হয় তবে মাস্ক পরে যেতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাজারের যে কোনো সাবান দিয়ে ট্যাপের পানিতে ২০ সেকেন্ড হাত ধুলেই ভাইরাস চলে যায়। উদ্বিগ্ন হয়ে স্যানিটাইজার কেনার জন্য অহেতুক ভিড় করার কোনো দরকার নেই। গত রবিবার বিকালে দেশে করোনাভাইরাসে তিনজন শনাক্ত হওয়ার ঘোষণা দেয় আইইডিসিআর। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে তখন বলা হয়, এই তিনজনের মধ্যে দুজন ইতালি থেকে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। তাদের কাছে থেকে একজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

ব্রিটিশ-বাংলাদেশির মৃত্যু : নভেল করোনাভাইরাসে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। ম্যানচেস্টারে বসবাসরত এই ব্যক্তি সম্প্রতি ইতালি ঘুরে এসেছিলেন; যে দেশটি করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে হিমশিম খাচ্ছে। করোনাভাইরাসে যুক্তরাজ্যে রবিবার তৃতীয় যে ব্যক্তির মৃত্যু হয়, তিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বলে বিবিসি বাংলা জানিয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদপত্র গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ষাট বছর বয়সী ওই ব্যক্তি নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত জটিলতায় ভুগছিলেন। তিনি নর্থ ম্যানচেস্টার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। যুক্তরাজ্যের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা অধ্যাপক ক্রিস হুইটি গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘আমি বেদনার সঙ্গে জানাচ্ছি যে কভিড-১৯ রোগে আক্রান্তদের মধ্যে তৃতীয় জনের মৃত্যু হয়েছে। ‘তিনি সম্প্রতি করোনাভাইরাস সংক্রমিত এলাকা ভ্রমণ করে এসেছিলেন। তার স্বাস্থ্যগত নানা জটিলতাও ছিল।’ তার ছেলে বিবিসি বাংলাকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে ১৯৮৯ সালে ইতালি পাড়ি দিয়েছিলেন তার বাবা। ছিলেন মিলানের ৫০ কিলোমিটার দূরে সুইজারল্যান্ড সীমান্তের এক শহরে। চার-পাঁচ বছর আগে যুক্তরাজ্যে আবাস গড়লেও প্রতিবছরই ইতালি যেতেন বেড়াতে। এ বছর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি ইতালি বেড়াতে গিয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। ২৯ ফেব্রুয়ারি ফিরে আসেন ম্যানচেস্টারে। ছেলে বলেন, ‘তখনো তিনি সুস্থ। কিন্তু তিন দিন পর সব যেন ওলটপালট হয়ে গেল।’

রাজবাড়ীতে ইতালি ফেরত বাবা-ছেলে পর্যবেক্ষণে :  রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলায় করোনাভাইরাস সন্দেহে ইতালি ফেরত বাবা ও ছেলেকে নিজ বাড়িতে পর্যবেক্ষণে (হোম কোয়ারেনটাইনে) রাখা হয়েছে। বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, ইতালি ফেরত বাবা ও ছেলে সুস্থ আছেন। তাদের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা দেয়নি। আতঙ্ক নয়, মূলত করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাদের ১৪ দিন ‘হোম কোয়ারেনটাইনে’ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মানিকগঞ্জে বিদেশ ফেরত ৫৯ জন ‘হোম কোয়ারেনটাইনে’ : করোনাভাইরাসের জীবাণু থাকতে পারে, এমন আশঙ্কায় মানিকগঞ্জে বিদেশ থেকে আসা ৫৯ ব্যক্তিকে নিজ বাড়িতে বিশেষ ব্যবস্থায় (হোম কোয়ারেনটাইন) রাখা হয়েছে। তাদের ও তাদের পরিবারের লোকজনকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হয়েছে।  জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকাল ৫টা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ৫৯ ব্যক্তি বিভিন্ন দেশ থেকে বাড়িতে ফিরেছেন। তাদের মধ্যে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় চারজন নারীসহ ৩২ জন, সাটুরিয়ায় ১৮ জন, শিবালয়ে ৬ জন, দৌলতপুরে ২ জন এবং সিঙ্গাইরের ১ জন ব্যক্তি আছেন। তারা ইতালি, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন। তাদের সবাইকে নিজ বাসায় বিশেষ ব্যবস্থায় রাখা হয়েছে।

সৌদি ফেরত দম্পতি কোয়ারেনটাইনে : সৌদি আরব থেকে ফেরত আসা এক দম্পতিকে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকায় গতকাল ভোরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বিমানবন্দর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ইনচার্জ শাহরিয়ার সাজ্জাদ জানান, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকায় ওই দম্পতিকে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সম্প্রতি এই দম্পতির এক ছেলে চীন ভ্রমণ করে, সেও তাদের সঙ্গে দেশে আসে। তবে তাকে বিমানবন্দর থেকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফিরিয়ে দেওয়া হলো ভারতীয় নাগরিককে : করোনাভাইরাসবাহী সন্দেহে সুভাষ সরকার (৩০) নামে এক ভারতীয় নাগরিককে ফেরত পাঠিয়েছে আখাউড়া স্থলবন্দর চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন হেলথ ডেস্ক কর্তৃপক্ষ। গতকাল বেলা ১১টার দিকে তিনি ভারতের আগরতলা আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট হয়ে বাংলাদেশের আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে আসেন। এ সময় নোম্যান্সল্যান্ডে ওই ব্যক্তিকে পরীক্ষা করেন ইমিগ্রেশনে অস্থায়ী হেলথ ডেস্কের স্বাস্থ্যকর্মীরা। তার গায়ে অতিরিক্ত তাপমাত্রা এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় তাকে মাস্ক পরিয়ে দেওয়া হয়। সুভাষ সরকার ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলার মধ্য ভুবন বন এলাকার শরৎ সরকারের ছেলে। তার পাসপোর্ট নম্বর (ঞ-৮৪৬১৯৯৫)। সিলেটের লাখাই উপজেলার রাধানগর গ্রামে তার ফুফুর বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল বলে জানা গেছে।

শাহ আমানত বিমানবন্দরে বসছে থার্মাল স্ক্যানার : করোনাভাইরাস প্রতিরোধে একটি থার্মাল স্ক্যানার মেশিন গতকাল দুপুরে চট্টগ্রামে এসে পৌঁছেছে। ইতিমধ্যে থার্মাল স্ক্যানার মেশিনটি শাহ আমানত বিমানবন্দরে বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। বসানোর পর এই স্ক্যানারের মধ্য দিয়ে যাত্রীদের বের করা হবে।

পাবনায় তিনজন ‘হোম কোয়ারেনটাইনে’ : পাবনায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে বিদেশ ফেরত তিন ব্যক্তিকে ‘হোম কোয়ারেনটাইনে’ রাখা হয়েছে। ওই তিনজনের শরীরে এখনো করোনার কোনো লক্ষণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এদিকে করোনা মোকাবিলায় জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন, জেলার প্রতিটি হাসপাতালে পৃথক আইসোলেশন সেন্টার তৈরি ও শহরের একটি বিদ্যালয়কে আইসোলেশন কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ এ কথা জানান।

সিলেটে মহিলা হাসপাতাল থেকে উধাও! : সিলেটে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহভাজন এক মহিলা চিকিৎসা নিতে এসে হাসপাতাল থেকে উধাও হয়ে গেছেন! কয়েকদিন আগে সৌদি আরব থেকে আসা ওই মহিলার অসুস্থতার সঙ্গে করোনার লক্ষণ পাওয়ায় তাকে পরীক্ষার কথা বলেছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর তিনি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান। গতকাল মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে।

অবশেষে ওসমানী বিমানবন্দরে বসানো হলো ‘থার্মাল স্ক্যানার’ : অবশেষে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বসানো হয়েছে ‘থার্মাল স্ক্যানার’। গতকাল এই স্ক্যানারটি বসানো হয়। থার্মাল স্ক্যানার বসানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ ম ল। তিনি জানান, বিদেশ থেকে আমদানিকৃত নতুন থার্মাল স্ক্যানার (জ্বর পরিমাপক স্বয়ংক্রিয় আধুনিক যন্ত্র) গতকাল সকাল ৮টায় ওসমানী বিমানবন্দরে বসানোর কাজ শুরু হয়। দুপুর ১২টায় এটি বসানোর কাজ শেষ হয়। সিভিল সার্জন আরও জানান, থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে এখন বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের শরীরের তামপাত্রা পরিমাপ করা হচ্ছে। এ ছাড়া যাত্রীদের হেলথ ডিক্লারেশন ফর্ম দেওয়া হচ্ছে। শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন, রবীন্দ্র ভবন বন্ধের সিদ্ধান্ত গোটা বিশ্বের সঙ্গে নভেল করোনাভাইরাসে কাঁপছে পশ্চিমবঙ্গও। মারণ এই ভাইরাস আতঙ্কে চলতি বছর রাজ্যটির বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসব স্থগিত রাখা হয়েছিল। দিল্লি থেকে ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্ট কমিশন (ইউজিসি)-এর তরফে করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্কতামূলক বার্তা আসার পরই বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে এবারের দোল উৎসব বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর এবার বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসে অবস্থিত বাংলাদেশ ভবন, রবীন্দ্র ভবন এবং শান্তিনিকেতন গৃহ বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করা হলো।

‘হোম কোয়ারেনটাইনে’ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক : ইতালি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন শেষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসার পর এক শিক্ষককে ১৫ দিনের জন্য নিজ বাসায় থাকার (হোম কোয়ারেনটাইন) পরামর্শ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু  তৈয়ব।

সৌদিগামী ৬৮ বাংলাদেশিকে ফিরতে হচ্ছে বাহরাইন থেকেই : করোনাভাইরাসের কারণে যাতায়াত বন্ধ করায় বাহরাইন বিমানবন্দরে আটকা পড়েছেন সৌদি আরবগামী ৬৮ বাংলাদেশি।  বাহরাইনের স্থানীয় সময় সোমবার ভোর সোয়া ৫টার দিকে গালফ এয়ারের একটি ফ্লাইটে করে ট্রানজিট যাত্রী হিসেবে বাংলাদেশের এ নাগরিকরা বাহরাইনে অবতরণ করেন। সংযোগ ফ্লাইটে তাদের কর্মস্থল সৌদি আরবে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সৌদি আরব আগেই বাহরাইনের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। ওই ৬৮ যাত্রীর মধ্যে ৬২ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী। তাদের মধ্যে ১৫ জন নতুন ভিসায় ও ৫৩ জন দেশে ছুটি কাটিয়ে নিজ কর্মস্থলে ফিরছিলেন বলে জানা গেছে।

 সৌদি আরব যেতে তাদের বাংলাদেশে ফেরত আসতে হচ্ছে। বাহরাইনে বাংলাদেশ দূতাবাসের লেবার কাউন্সেলর শেখ মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সোমবার কয়েকজন যাত্রীকে গালফ এয়ারে করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের মঙ্গলবার রাতের ফ্লাইটে বাংলাদেশে পাঠানো হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর