বুধবার, ১১ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

বিশ্বব্যাপী বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যু

ইতালি অবরুদ্ধ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সতর্কতা, মৃত্যু ৪ হাজার ছাড়াল, যুক্তরাষ্ট্রে হাঁচি দেওয়ার পর ঘুরিয়ে দেওয়া হলো উড়োজাহাজ

প্রতিদিন ডেস্ক

প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস গতকাল পর্যন্ত বিশ্বের ১১১ দেশে ছড়িয়েছে। আর আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ১৪ হাজারের বেশি মানুষ। এর মধ্যে ফ্রান্সের সংস্কৃতিমন্ত্রী ফ্রঁক রিয়েস্তা রয়েছেন। এই ভাইরাসে মৃত্যু বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ৪ হাজার ২৬ জনে। নতুন সংক্রমণ ও মৃত্যুর ৯৯ শতাংশই করোনার উৎপত্তিস্থল চীনের বাইরে। করোনার ভয়াবহতায় ইতালি কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। আর বাংলাদেশে আক্রান্ত তিনজনেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। নতুন করে আর কারও শরীরে করোনার উপস্থিতি পায়নি সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। প্রতিষ্ঠানটির  পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছেন, ওই তিনজনের অবস্থা ‘স্থিতিশীল’ রয়েছে।

এদিকে সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরা এক দম্পতির মধ্যে শ্বাসকষ্টের লক্ষণ থাকায় তাদের ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে পাঠানো হয়েছে কোয়ারেন্টিনে। তাদের বয়স ৬০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে।

বিমানবন্দর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসক ডাক্তার শাহারিয়ার বলেন, ‘তাদের শ্বাসকষ্ট ছিল। সেখানে চিকিৎসা করানোর পরও ভালো হচ্ছিল না। এ অবস্থায় তারা দেশে চলে আসেন। তাদের শারীরিক অবস্থা তেমন খারাপ নয়, তবে তাদের শরীরে নভেল করোনাভাইরাস আছে কিনা নিশ্চিত হওয়া দরকার।’ এ জন্য তাদের কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। একই ফ্লাইটে তাদের ছেলেও দেশে ফিরেছেন, যিনি সৌদি আরবে যাওয়ার আগে চীন ভ্রমণ করেছিলেন। তবে তার মধ্যে কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ পাওয়া যায়নি।

করোনাভাইরাসে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। ম্যানচেস্টারে বসবাসরত এই ব্যক্তি সম্প্রতি ইতালি ঘুরে এসেছিলেন।

৬০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত জটিলতায় ভুগছিলেন। করোনার বিস্তার রোধে ফেনীর ছাগলনাইয়া ও ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরার শ্রী নগর সীমান্তহাট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে করোনা নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফর স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যেহেতু জাপানেও করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়েছে, সেহেতু সফর স্থগিত করা হয়েছে।

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ১৮ জন এবং আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ১৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

মৃত ও আক্রান্তদের বেশিরভাগই চীনের মূলভূখন্ডের বাসিন্দা। দেশটিরই উহান শহরেই গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসটির সংক্রমণ প্রথম শনাক্ত হয়েছিল। তারপর থেকে বিশ্বজুড়ে ভাইরাসটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লেও এখন চীনে নতুন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। নতুন আক্রান্তের ৯৯ শতাংশ খবর এখন আসছে চীনের বাইরে থেকে। চীনের বাইরে ইতালি ৪৬৩, ইরান ২৩৭, দক্ষিণ কোরিয়া ৫৪, ফ্রান্স ৩০, স্পেন ২৮, যুক্তরাষ্ট্র ২৬, জাপান ১৬, ইরাক ৭, যুক্তরাজ্য ৫, হংকং ৩, অস্ট্রেলিয়া ৩, জার্মানি ২, ফিলিপিন্স, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, আর্জেন্টিনা, মিসর, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড ও কানাডায় একজন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

ইতালি কার্যত অবরুদ্ধ : করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ইতালিজুড়ে চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। জনসমাগমে জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। ফলে ইউরোপের সাড়ে ছয় কোটি মানুষের এই দেশ কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। নাগরিকদের সবাইকে যার যার বাড়িতে অবস্থানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারও জরুরি কাজে দূরে কোথাও যেতে হলে অনুমতি নিতে বলেছে।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্তে সোমবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, যারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে, তাদের সুরক্ষার জন্যই এ কড়াকড়ি। সোমবার ইতালিতে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ৩৬৬ জন থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৬৩ জন। আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। চীনের মূল ভূখ- বাদ দিলে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ইতালিতেই সবচেয়ে বেশি। ফ্রান্সের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রবিবার সংক্রমণ ধরা পড়ার পর থেকে নিজেকে গৃহবন্দী করে রেখেছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী ফ্রঁক রিয়েস্তা। সোমবার ২৮৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ফ্রান্সে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪১২ জনে। এর মধ্যে অন্তত ৩০ জন মারা গেছেন। এদিকে নতুন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমতে থাকায় করোনায় প্রাদুর্ভাবের উৎসস্থল চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানের সব অস্থায়ী হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যাদের মধ্যে রোগের লক্ষণ ছিল মৃদু, তাদের চিকিৎসা ও সংক্রমণের উৎস থেকে দূরে রাখতে সরকারি জিমনেসিয়াম, প্রদর্শনী কেন্দ্র ও কয়েকটি ইনডোর স্টেডিয়ামকে অস্থায়ী হাসপাতালে পরিণত করেছিল চীন।

এক মাসেরও বেশি সময় ধরে এমন ১৬টি অস্থায়ী হাসপাতালে প্রায় ১২ হাজার রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ জার্মানিতে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১১২ জনের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা হয়নি বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন কংগ্রেসের দুই রিপাবলিকান সদস্য, টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজ ও অ্যারিজোনার রিপ্রেজেন্টেটিভ পল গোসার, নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক রোগীর সংস্পর্শে আসার পর নিজেরাই কোয়ারেন্টিনে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও সম্প্রতি ওই দুজনের সংস্পর্শে এসেছিলেন।

সেরে উঠতে লাগতে পারে ‘ছয় সপ্তাহ’ :

কেউ নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে পুরোপুরি সেরে উঠতে ছয় সপ্তাহের মতো সময় লাগতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক ডা. মাইক রায়ান।

সোমবার ব্রিফিংয়ে তিনি বলেছেন, যাদের মধ্যে সংক্রমণের মাত্রা বেশি, তাদের সেরে ওঠার জন্য কয়েক মাসও সময় লেগে যেতে পারে।

নভেল করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ ডাক্তারদের জানা নেই। এ ভাইরাসের সংক্রমণে যে উপসর্গগুলো দেখা দেয়, মূলত সেগুলোর চিকিৎসাই তারা দিচ্ছেন।

১৩ হটলাইন : দেশে নভেল করোনাভাইরাসের রোগী ধরা পড়ার পর মানুষের ফোন কলের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় হটলাইনে নম্বর চারটি থেকে বাড়িয়ে ১৩টি করেছে সরকার। নম্বরগুলো হচ্ছে- ১৬২৬৩, ০১৪০১১৮৪৫৫১, ০১৪০১১৮৪৫৫৪, ০১৪০১১৮৪৫৫৫, ০১৪০১১৮৪৫৫৬, ০১৪০১১৮৪৫৫৯, ০১৪০১১৮৪৫৬০, ০১৪০১১৮৪৫৬৩, ০১৪০১১৮৪৫৬৮, ০১৯২৭৭১১৭৮৪, ০১৯২৭৭১১৭৮৫, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯৩৭১১০০১১। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হটলাইনের নম্বরটিও (১৬২৬৩) এখন নভেল করোনাভাইরাস সংক্রান্ত তথ্য জানাতে ব্যবহৃত হবে। বাকি ১২টি নম্বর আইইডিসিআরের।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর