বুধবার, ১১ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকায় হবে প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মাতারবাড়ীতে নির্মিত হবে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পসহ ২৪ হাজার ১১৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ের নয়টি প্রকল্প অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির  (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একনেক চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলানগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে ‘মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্পে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, নয়টি প্রকল্পের মোট খরচ ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ১১৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে খরচ করা হবে ৬ হাজার ১৫১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ২ হাজার ২১৩ কোটি ২৫ লাখ ও বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১৫ হাজার ৭৪৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা খরচ করা হবে।

মন্ত্রী বলেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর কোনো আবেগের জায়গা নয়, এটা প্রয়োজন। এ প্রকল্পের কিছু ব্যয় বেশি ধরা আছে। এ ক্ষেত্রে সব ব্যয় সরলীকরণ করলে হবে না। এর যথেষ্ট কারণও আছে। যেমন পায়রা ও মাতারবাড়ীর জমির কনফিগারেশন এক নয়। এ ছাড়া মাতারবাড়ীর সড়ক কোনো সাধারণ সড়ক হবে না। এগুলো মূলত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো হবে। প্রকল্পটিকে স্বপ্নের প্রকল্প হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এতে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে।’

মন্ত্রী বলেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের কাজ দ্রুত শুরু করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। বাকি ২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল ও ২ হাজার ২১৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সংযোগ সড়কের সক্ষমতা বাড়ানো হবে। একই সঙ্গে কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, যা থেকে ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চাহিদা মেটানো এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে দ্রুত বন্দরসেবা দেওয়া সম্ভব হবে বলে প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পগুলো হলো- ‘লেবুখালী-রামপুর-মির্জাগঞ্জ সংযোগ সড়ক নির্মাণ’; ‘কচুয়া-বেতাগী-পটুয়াখালী-লোহালিয়া-কালাইয়া সড়কের ১৭তম কিলোমিটারে (জেড ৮০৫২) পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ’; ‘স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ফায়ারিং রেঞ্জের আধুনিকায়ন’; ‘জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা কার্যালয়ের ২০ তলা ভিতবিশিষ্ট দুটি বেইজমেন্টসহ ১০ তলা (সংশোধিত ২০ তলা) প্রধান কার্যালয় নির্মাণকাজ (দ্বিতীয় সংশোধিত)’; ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন’; ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন’; ‘জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার পাকেরদহ ও বালিজুরি এবং বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার জামথল এলাকা যমুনা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা’ এবং ‘ঢাকা স্যানিটেশন ইমপ্রুভমেন্ট’ প্রকল্প।

প্রধানমন্ত্রীকে শীর্ষেন্দুর চিঠিতে সেতু মিলল পায়রায় : পটুয়াখালীর পায়রা নদীর ওপর প্রায় ২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সেতু হচ্ছে। এতে ব্যয় হবে ১ হাজার ৪২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে নিজ এলাকার পায়রা নদীতে সেতু চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি দিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছিল পটুয়াখালীর শিশু শীর্ষেন্দু বিশ্বাস। সেই চিঠির জবাব দিয়ে সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এবার সে আশ্বাস পূরণ করল সরকার। স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে শীর্ষেন্দুর। সেতু নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্পসহ নয়টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার পায়রা নদীর ওপর ১ হাজার ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘কচুয়া-বেতাগী-পটুয়াখালী-লোহালিয়া-কালাইয়া সড়কের ১৭তম কিলোমিটারে পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়েছে। মন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের সবার মনে আছে, একটি সেতু চেয়ে শিশু শীর্ষেন্দু প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখেছিল। শিশুটির চিঠিতে অনেক মানবিক যুক্তি ছিল। যদিও প্রয়োজনের তাগিদেই এখানে সেতু হতো। কিন্তু এখন খুব দ্রুত হচ্ছে। বলতে পারেন, শীর্ষেন্দুর চিঠিতে প্রকল্পটি শীর্ষে উঠেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত মানবিক, দয়ালু। শিশুকে দেওয়া কথা রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। আমি শিশু শীর্ষেন্দুকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। মার্চ ২০২০ থেকে ডিসেম্বর ২০২৫ মেয়াদে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর