রাজধানীতে বনানীর সুইট ড্রিম হোটেলের সামনে শেহজাদ খান (৪৫) নামে এক ব্যবসায়ীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। গতকাল ভোরে হোটেলের সামনে কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ থেকে গুরুতর অবস্থায় তাকে কয়েকজন পথচারী উত্তরার একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। নিহতের স্বজনরা বলেছেন, তাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। গতকাল ভোর রাত পৌনে ৪টার দিকে সুইট ড্রিম হোটেলের সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা গেছে শেহজাদ খানকে। তিনি বনানীর বি কে ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার ছিলেন। অভিযোগ উঠেছে, সুইট ড্রিম কর্তৃপক্ষ আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা নেয়নি। বারের সামনে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকা ওই ব্যবসায়ীকে কয়েকজন শ্রমিক সিএনজিতে তুলে উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্র জানায়, ব্যবসায়ী শেহজাদ খান মঙ্গলবার রাতে সুইট ড্রিম বারে প্রবেশ করেন। সেখানে তার সঙ্গে আরেক ব্যক্তির কথা কাটাকাটি হয়। রাত ২টার দিকে দুজনই একবার বের হন। পরে তারা আবার বারের ভিতরে প্রবেশ করেন। বারের ভিতরে তাদের মধ্যে প্রথম দফা হাতাহাতি হয়। ভোর ৪টার দিকে তারা আবার বার থেকে বের হয়ে এলে রাস্তায় দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এ সময় অচেতন অবস্থায় রাস্তায় পড়ে ছিলেন ব্যবসায়ী শেহজাদ খান। ঘটনাটি বার ও রেস্টুরেন্টের নিরাপত্তারক্ষীরা কর্তৃপক্ষকে জানায়। কিন্তু তারপরও তাকে যথাসময়ে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়নি। ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি। রাত আড়াইটার দিকে একটি ভিডিও ফুটেজে আরও চারজনের সঙ্গে লিফটে নামতে দেখা গেছে শেহজাদকে। বনানী কাঁচাবাজার সংলগ্ন হোটেল সুইট ড্রিমের নিচে অজ্ঞাত ব্যক্তির হাতাহাতিতে অচেতন অবস্থায় রাস্তায় ওই ব্যবসায়ী পড়ে ছিলেন বলে তারা জানতে পেরেছেন। কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে তা ময়নাতদন্ত করলে জানা যাবে। জানা গেছে, সকালে সুমন, নাঈম ও সাদ্দাম নামে তিন ব্যক্তি অচেতন ওই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যান। সুমন জানান, সকালে তারা তিনজন একসঙ্গে কারওয়ান বাজারে কাঁচামাল নামাতে যাচ্ছিলেন। বনানী সুইট ড্রিম হোটেলের পাশে অচেতন অবস্থায় একজনকে পড়ে থাকতে দেখে তারা এগিয়ে যান। সে সময় আরও কয়েকজন লোক ছিল। তারা ওই ব্যক্তির পকেটে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে উত্তরার একটি ঠিকানা পান। পরে তাকে উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যান তারা। সুমন বলেন, সুইট ড্রিমের নিরাপত্তাকর্মীরা অচেতন ওই ব্যক্তিকে শুধু সিএনজিতে তুলে দিয়েছে। তারা কেউ সঙ্গে যায়নি। নিহত ব্যবসায়ীর দ্বিতীয় স্ত্রী ফারিয়া জাহান দীপ্তি জানান, তার স্বামী একজন এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যবসায়ী। তার ধারণা, কেউ তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। সম্প্রতি তার স্বামী কোটি টাকার একটি টেন্ডার পেয়েছিলেন। সেই সূত্র ধরেই তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে তিনি অভিযোগ করেন। শেহজাদ যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ডধারী। জানা গেছে, শেহজাদের প্রথম স্ত্রী হীরা বর্তমানে মেয়ে সাইকাকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। আড়াই বছর আগে হীরার সঙ্গে তার ডিভোর্স হয়ে যায়। পরে তিনি দীপ্তিকে বিয়ে করেন। ভাটারা এলাকায় দীপ্তিকে নিয়ে বসবাস করতেন শেহজাদ। কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর থানার ভাগলপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে শেহজাদ। দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে শেহজাদ ছিলেন দ্বিতীয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হোটেলের কেউ কথা বলতে রাজি হননি। হোটেল সুইট ড্রিমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফয়সল আল ইসলামকে কয়েক দফা ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।