শিরোনাম
শনিবার, ১৪ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে শুধুই দল-উপদল কোন্দল

মাহমুদ আজহার

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে শুধুই দল-উপদল কোন্দল

করোনাভাইরাসের কারণে মতিঝিলের ইডেন কমপ্লেক্সে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের সভা ও জমায়েত নিষিদ্ধ করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন  গণফোরাম। তবে আজ বিকাল ৩টায় যে কোনো মূল্যে বর্ধিত সভা করার ঘোষণা দিয়েছেন গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু। এ ঘোষণার মধ্যদিয়ে কার্যত দুই ভাগ হয়ে গেল গণফোরাম। একাংশে ড. কামাল হোসেন ও ড. রেজা কিবরিয়া। অন্য অংশে মোস্তফা মহসীন মন্টু, সুব্রত চৌধুরী ও আবু সাইয়িদ। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার নিজেকে সভাপতি ও ড. রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন ড. কামাল হোসেন। আহ্বায়ক কমিটিতে ঠাঁই হয়নি সুব্রত চৌধুরী, আবু সাইয়িদ ও মোস্তফা মহসীন মন্টুসহ ডজনখানেক নেতার। তারা ক্ষুব্ধ হয়ে আজ মতিঝিলে ইডেন কমপ্রেক্সে দলের কার্যালয়ে কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ডেকেছেন। বৈঠকে নতুন কমিটির রূপরেখাও চূড়ান্ত হতে পারে। পদবঞ্চিত ও বিক্ষুব্ধ নেতাদের             একজন জানান, ওই অফিসে আর ড. কামালসহ বর্তমান কমিটির নেতাদের কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হবে না। এ প্রসঙ্গে গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, গণফোরামের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যারা কাজ করেছেন, তাদেরই এখন দুই দিন ধরে আসা নেতারা ড. কামাল হোসেনকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে বের করে দেবেন, তা তো হবে না। ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে গুটিকয়েক নেতা আছেন, বসে বসে গুটি চালান আর প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কাউকে বহিষ্কার করেন। গঠনতন্ত্র বা গণতন্ত্রের ধার ধারেন না। মুখে বড় বড় কথা বাস্তবে স্বৈরতন্ত্র- এভাবে দল চলবে তা হবে না। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে শুধু গণফোরামই নয়, নাগরিক ঐক্য বাদে সব দলেই অস্থিরতা চলছে। দলীয় কোন্দলে বিপর্যস্ত ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলো। এর মধ্যে বিএনপি এখন নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত। বিশেষ করে দল গোছানো আর বেগম জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে এককভাবে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়েই সময় কাটাচ্ছে দলটি। ঐক্যফ্রন্টের আরেক দল জেএসডিও দুই ভাগে বিভক্ত। আ স ম রবের নেতৃত্বে একাংশ। অন্যটির নেতৃত্বে রয়েছেন জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন। আগামী ২০ মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবে মালেক রতন জাতীয় কনভেনশনের ডাকও দিয়েছেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি রাখা হয়েছে বিকল্প ধারার মহাসচিব মেজর (অব.) এম এ মান্নানকে। এ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। শেষ পর্যন্ত আবদুল মালেক রতন কি বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর জোট যুক্তফ্রন্টেই যোগ দেবেন- এ নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। এ প্রসঙ্গে আবদুল মালেক রতন বলেন, উপনিবেশিক ধারার রাজনীতির পরিবর্তে দেশজ ধারার ভিত্তিতে তৃতীয় (নতুন) রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। আমাদের আরও দুটি লক্ষ্য আছে। এগুলোর সঙ্গে যদি অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর যুক্তফ্রন্টের মিল হয়, তাহলে আমাদের ফ্রন্টে যেতেও কোনো সমস্যা নেই। তিনি আরও বলেন, জেএসডির সাত স্থায়ী কমিটির মধ্যে চারজন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ে দুজন, সাংগঠনিক সম্পাদক পর্যায়ে তিনজন ছাড়াও বেশ কয়েকজন সহসভাপতি রয়েছেন। মূল জেএসডি বলতে আমরাই। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে মূলত এখন চারটি দল। এগুলো হলো- বিএনপি, গণফোরাম, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য। শুরুতে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগও ছিল। কিন্তু বাস্তবসম্মত কোনো কর্মসূচি না দেওয়ায় ঐক্যফ্রন্ট থেকে বেরিয়ে যান তিনি। বর্তমানে চার দলের মধ্যে নাগরিক ঐক্য বাদে সবগুলো দলই নানামুখী সংকটে। অপেক্ষাকৃত ছোট দল হলেও মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। সরকারবিরোধী রাজপথে নানামুখী কর্মসূচি ও জনসমস্যা নিয়ে অনেকটা এককভাবেই মাঠে রয়েছে দলটি। বিএনপি দল গোছানো নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করছে। এ ছাড়া বেগম জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে রাজপথে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছে। তবে বিএনপিপ্রধান খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দলের ভিতরে নেতৃত্ব, বেগম জিয়ার মুক্তি দাবিতে কঠোর কর্মসূচি না যাওয়াসহ নানামুখী সমস্যা রয়েছে। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও কেন্দ্রের ওপর ক্ষুব্ধ। এ নিয়ে বিএনপির হাইকমান্ড দলের ভিতরে ঐক্য বজায় রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা আশা করছেন, প্রতিকূল পরিস্থিতি এরিয়ে বিএনপি এখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি এখন দেশে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। এক যুগ ধরে বিএনপি ক্ষমতার বাইরে। দুই বছর ধরে আমাদের দলের প্রধান বেগম জিয়াও জেলে। তারপরও বিএনপির ঐক্য অটুট রয়েছে। ছোটখাটো ভুলত্রুটি শুধরে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। 

গণফোরাম মতিঝিল কার্যালয়ে সভা নিষিদ্ধ : করোনাভাইরাসের কারণে মতিঝিলের ইডেন কমপ্লেক্সে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের সভা ও জমায়েত নিষিদ্ধ করেছে গণফোরাম। গতকাল বিকালে দলের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।

 দলের সহকর্মীদের উদ্দেশে এক বিবৃতিতে রেজা কিবরিয়া বলেন, করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী মহামারী আকার ধারণ করেছে। সে জন্য সরকার ও প্রশাসন গণজমায়েত না করার জন্য সতর্ক করেছে। এ অবস্থায় গণফোরাম কার্যালয়ে পরবর্তী নোটিস না দেওয়া পর্যন্ত সভা করা যাবে না।

সর্বশেষ খবর