শনিবার, ১৪ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

ব্যাংক নোটে করোনা ছড়ানোর আশঙ্কা

ছেঁড়া-ফাটা পুরনো নোট তুলে নেওয়া হচ্ছে

মানিক মুনতাসির

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের জীবাণু ব্যাংক নোটের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। চীনের উহানে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। যার ফলে চীন সরকার তাদের বাজার থেকে বিপুল পরিমাণ ব্যাংক নোট ও ধাতব মুদ্রা তুলে নিয়ে পুড়িয়েও ফেলেছে। সেই আশঙ্কা থেকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করেছে বাংলাদেশে ব্যাংক। পর্যায়ক্রমে ছেঁড়া ফাটা পুরনো নোট বাজার থেকে তুলে নেওয়া হচ্ছে। তবে এখনই এ ধরনের সব নোট বাজার থেকে তাৎক্ষণিকভাবে তুলে নেওয়া সম্ভব নয় বলেও মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য টাকা ধরার পর পরই হাত ধুয়ে ফেলা কিংবা সেনিটাইজার ব্যবহারের পরামর্শও দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্র জানায়, দৈনন্দিন জীবন চালাতে কেনাকাটা কিংবা যে কোনো ধরনের লেনদেনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো এখনো প্রায় ৯০ ভাগই ব্যাংক নোটের ওপর নির্ভরশীল। আর একই নোট দিনে কয়েকবার পর্যন্ত হাতবদল হতে থাকে। এর ফলে ব্যবহারকারীদের হাতবদলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে করোনাভাইরাসের জীবাণু। এক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে সচেতনতা গড়ে তোলাই উত্তম পন্থা। টাকা ধরার পর পরই হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলা কিংবা সেনিটাইজার ব্যবহার করে হাতকে জীবাণুমুক্ত করা জরুরি। সেই সঙ্গে টাকা গণনার ক্ষেত্রে মুখের থু-থু ব্যবহার না করারও নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতিমধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ক্যাশ কাউন্টার থেকেও গ্রাহকদের এ ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে ব্যাংকে থাকা পুরনো ও ছেঁড়া-ফাটা ময়লাযুক্ত নোট গ্রাহকদের দেওয়া হচ্ছে না। যতটা সম্ভব নতুন নোট দেওয়া হচ্ছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা পুরনো বা ছেঁড়া ফাটা নোটগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিতে ব্যাংকগুলোর প্রতি মৌখিক পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মূখপাত্র সিরাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, পুরনো নোট বদলে নতুন নোট দেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নিয়মিত কার্যক্রম। তবে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ব্যাংকগুলোকে পুরনো নোট বিতরণ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংকের কাছে থাকা পুরনো নোটগুলো দ্রুত বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং দৈনন্দিন প্রয়োজনের তাগিদে এবং করোনার ঝুঁকি কমাতে গ্রাহকদের ক্যাশলেস বা নগদবিহীন লেনদেন বাড়ানোর ব্যাপারেও নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, কাগুজে নোটের পাশাপাশি ধাতব মুদ্রাতেও লুকিয়ে থাকতে পারে করোনাসহ নানা ধরনের রোগ জীবাণু। ফলে কাগুজে নোট ও ধাতব মুদ্রা ব্যবহারের ব্যাপারে বিশ্ববাসীকে সতর্ক করা হয়েছে। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী লেনদেনে কাগুজে নোট ব্যবহারের পরিবর্তে ডিজিটাল মাধ্যমে পরিশোধের পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। একই সঙ্গে ব্যবহাকারীদের সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকারও পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

২০১৫ সালে দিল্লির ইনস্টিটিউট অব জিনোমিকস অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজির বিজ্ঞানীরা তাদের এক গবেষণাপত্রে জানান, ভারতের বাজারে চালু থাকা ব্যাংক নোটগুলোর ডিএনএ পরীক্ষা করে তাতে অন্তত ৭৮ রকম বিপজ্জনক জীবাণুর অস্তিত্বের উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছেন-যা থেকে মারাত্মক সব রোগ ছড়াতে পারে। এমনকি বাংলাদেশের একদল গবেষক গত বছরের আগস্ট মাসে বলেছিলেন, তারা বাংলাদেশি কাগুজে নোট ও ধাতব মুদ্রায় তিন হাজার রকমের ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পেয়েছেন, যা সাধারণত মলমূত্রের মধ্যে থাকে। ফলে ব্যাংক নোট কিংবা ধাতব মুদ্রা থেকেও প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ প্রসঙ্গে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক মিরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য বিষয়ক এক সেমিনারে বলেন, ব্যাংক নোটেও করোনার জীবাণু ছড়াতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এ ব্যাপারে সতর্ক করেছে। আমরাও বলছি এ বিষয়ে জনসচেনতনতা খুবই জরুরি।

সর্বশেষ খবর