শিরোনাম
রবিবার, ১৫ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

অভাবনীয় সাফল্যে উজ্জীবিত বাংলাদেশ

ক্ষুদ্র ও হালকা শিল্পে ঘটছে বিপ্লব, তথ্য-প্রযুক্তিতে জীবন-জীবিকার নানা ক্ষেত্র, জাহাজ নির্মাণ শিল্পের সাফল্য, বাংলাদেশি ওষুধের বিশ্বজুড়ে রপ্তানি বাজার ও তৈরি পোশাকশিল্পের গৌরবদীপ্ত সম্মান, চাকরি খোঁজা তারুণ্যের চাকরি দেওয়ার সামর্থ্য, নানামুখী নতুন পেশাজীবী যুক্ত হচ্ছে জাতীয় অর্থনীতিতে

সাঈদুর রহমান রিমন

অভাবনীয় সাফল্যে উজ্জীবিত বাংলাদেশ

একাত্তরে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ উপাধি পাওয়া বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের আশ্চর্য প্রদীপ। একে একে উন্মোচিত হচ্ছে সম্ভাবনার দ্বার। নব্বই দশকেও তুলনামূলক অচেনা বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিস্ময়। দেশজুড়ে অবকাঠামো উন্নয়নের পথ ধরে বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করছে পদ্মা বহুমুখী সেতু। এ ছাড়া রাজধানীতে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি), রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, পরিকল্পিত বহুমুখী অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলাসহ উন্নয়নের বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে দেশজুড়ে। পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরুর পর থেকেই অসীম সাহসে একের পর এক মেগা প্রকল্প নিয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে দেশ।

বিভিন্ন খাতে নিয়োজিত বিপুল শ্রমশক্তি তাদের শ্রমে-ঘামে বিনির্মাণ করছে বিস্ময়কর উত্থানের পটভূমি। প্রিয়জনদের ফেলে রেখে প্রবাসের নির্বাসনে শ্রম বিক্রি করে দেশে উন্নয়নের স্বপ্ন বুনছেন ১ কোটি বাংলাদেশি। দেশের সাধারণ মানুষ অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। সরকার, রাজনীতি কিংবা বিশ্ব পরিস্থিতির ঝক্কি-ঝামেলা পেছনে ফেলে নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই গড়তে প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। তারাই বদলে দিচ্ছেন বাংলাদেশের দৃশ্যপট। পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংক হাত গুটিয়ে নেওয়ার পরও নিজস্ব অর্থায়নে এত বড় অবকাঠামো নির্মাণের মধ্য দিয়েই সাফল্যমন্ডিত গল্পের যাত্রা শুরু হয়েছিল। সেই স্বপ্নময় পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান বাস্তবতা। আমদানিনির্ভর বাংলাদেশ ক্রমেই রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হচ্ছে, রপ্তানি ক্ষেত্রে ঘটছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। প্রচলিত পণ্যের পাশাপাশি অপ্রচলিত পণ্যও রপ্তানি বাড়ছে। চা, চামড়া, সিরামিক থেকে শুরু করে মাছ, শুঁটকি, সবজি, পেয়ারা, চাল, টুপি, নকশিকাঁথা, বাঁশ-বেত শিল্পের তৈরি পণ্য, মৃৎশিল্প রপ্তানি বাড়ছে বিভিন্ন দেশে। গত কয়েক বছর ধরে আরেক বিপ্লব ঘটিয়ে চলেছে দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পও। বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত খুলনা শিপইয়ার্ড যুদ্ধজাহাজ পর্যন্ত নির্মাণ করার সাফল্য দেখিয়েছে।

সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারস (পিডব্লিউসি)-এর তৈরি করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৫০ সাল পর্যন্ত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে শীর্ষ তিনটি দেশের একটি হবে বাংলাদেশ। শুধু তা-ই নয়, এ সময়ে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ভিত্তিতে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৩তম বড় অর্থনীতির দেশ। পিডব্লিউসি বলছে, পিপিপির ভিত্তিতে বাংলাদেশ এখন ৩১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। এ হিসাবে ২০৩০ সালে বাংলাদেশের অবস্থান হবে ২৮, আর ২০৫০ সালে ২৩। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ‘জাপান ও চীন বাংলাদেশকে দেখছে ভবিষ্যতের বড় বিনিয়োগের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে। অন্যদিকে ভারত বাংলাদেশকে দেখছে পারস্পরিক বিনিয়োগ, সংযোগ স্থাপন, বাণিজ্য ও সম্প্রীতির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্রতিবেশী হিসেবে।’ বিশ্বের প্রভাবশালী সাময়িকী ইকোনমিস্ট আরও আগেই বলে দিয়েছে, ‘কী করা যায়, সেটা দেখিয়ে দেওয়ার মডেলে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। কী করে উন্নয়নের মডেলে পরিণত হওয়া যায়, সেটা দেখিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ।’ একই সময় বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুর স্পষ্ট মন্তব্য ছিল : ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি উড়ন্ত সূচনায় রয়েছে। শিগগিরই দেশটি এশিয়ার নতুন বাঘ হিসেবে আবির্ভূত হবে।’

বেশ কয়েক বছর ধরেই দেশে কোনো হরতাল-অবরোধ, রাজনৈতিক অরাজকতা নেই। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহে আশাতীত উন্নতি হয়েছে। রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন অবকাঠামো আধুনিকতার আদল পেয়েছে। এসব কারণে দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের পুরোপুরি আস্থাশীল পরিবেশ বিদ্যমান। এ ছাড়া চলমান মেগা প্রকল্পগুলোও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহী করে তুলেছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বর্তমান বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের সুবিধা গ্রহণ করছেন উদ্যোক্তারা। শুধু উৎপাদন আর অর্থনীতিতেই নয়, সামাজিক উন্নয়নেও ভারতকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এই বিপুল সম্ভাবনা এশিয়া ও পশ্চিমা দুনিয়ার দেশগুলোকে আকৃষ্ট করছে। চারদিকেই সুখবরের ছড়াছড়ি। মাত্র কদিন আগেই এ দেশের অনূর্ধ্ব-১৯ জুনিয়র টাইগাররা ক্রিকেটে বিশ্বকাপ জয় করে সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বরিশাল, খুলনাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সাগরের বুক চিরে জেগে উঠছে নতুন নতুন ভূখ-। এর পরিমাণ প্রায় ২০ হাজার বর্গকিলোমিটারের বেশি।

নানা খাতে ঈর্ষণীয় অর্জন : স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের যত অর্জন আছে, তার মধ্যে কৃষিতে অর্জন সর্বাধিক। একদিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেই সঙ্গে দিন দিন কমছে আবাদযোগ্য জমি। তা ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। ধান, গম ও ভুট্টা উৎপাদনে বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়েছে বাংলাদেশ। ফসলের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের সাফল্য ক্রমেই বাড়ছে। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) বেশ কয়েকটি নতুন জাত ছাড়াও পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন করেছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) বিজ্ঞানীরা মোট ১৩টি প্রতিকূল পরিবেশে সহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন।

সবজি উৎপাদনে তৃতীয় আর চাল ও মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে। ধানের ক্ষেত্রে বিশ্বে গড় উৎপাদনশীলতা প্রায় তিন টন। আর বাংলাদেশে তা ৪ দশমিক ১৫ টনেরও বেশি। ইতিমধ্যে এ দেশ থেকে চাল রপ্তানিও শুরু করেছে সরকার। দেশের অভাবনীয় অগ্রযাত্রা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একসময় সবাই আমাদের অবহেলার চোখে দেখত। বাংলাদেশ নাম শুনলেই বলে উঠত-ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দরিদ্রের দেশ। এখন সারা বিশ্ব বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে ঘোষণা করেছে। প্রধানমন্ত্রী গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আলোচনা সভায় জাতীয় অগ্রগতির এই বিশ্বস্বীকৃতিকে গর্বভরে স্মরণ করেন।

সর্বশেষ খবর