রবিবার, ১৫ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

কানাডায় যত পদক্ষেপ

সৈকত রুশদী, টরেন্টো থেকে

তিন কোটি ৭৭ লাখ জনসংখ্যার দেশ কানাডায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এ পর্যন্ত (১৪ মার্চ) ১৯৮ জন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে অশীতিপর একজন নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে এবং অপর একজনের অবস্থা গুরুতর। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী সোফি গ্রেগোইর ট্রুডো রয়েছেন। আর আগাম সতর্কতা হিসেবে যারা ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন বা সঙ্গনিরোধ কাল পালন করছেন তার মধ্যে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, সংসদে অন্যতম বিরোধী দল নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এনডিপি) নেতা জগমিৎ সিং এবং টরন্টোর মেয়র জন টোরি। স্বেচ্ছা অন্তরীণ অবস্থা থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে ১৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আপৎকালীন ব্যবস্থা গ্রহণ সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সংসদের অধিবেশন স্থগিত করা হয়েছে। বিদেশে ও দেশে বিমান চলাচল ও সব ধরনের ভ্রমণ সীমিত করা হয়েছে। বিদেশ থেকে আগত বা প্রত্যাগত প্রত্যেককে ১৪ দিনের স্বেচ্ছা-অন্তরীণে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার কথা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরে ও নগরীতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে চলাফেরা না করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যাতে করে নিজেকে সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা করা যায় এবং নিজে আক্রান্ত হলে অন্যকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা যায়। সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার জন্য করণীয় স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা বিধি গণমাধ্যমে এবং প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে বিরতিহীনভাবে প্রচার করা হচ্ছে। সংক্রমণ হয়েছে বলে লক্ষণ দেখা গেলে বা সন্দেহ হলে হটলাইনে ও হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে যোগাযোগের জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বহু আদালত ও অফিসের কার্যক্রম দুই সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করায় উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে তিন সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জনসমাগম এড়াতে ক্রীড়া, বিনোদন ও কমিউনিটি কেন্দ্রগুলো, এমনকি গ্রন্থাগারও দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ রাখা হচ্ছে। সব ধরনের সভা-সমাবেশ, প্রদর্শনী ও ক্যাম্প স্থগিত করা হয়েছে। বিশেষায়িত হাসপাতাল ছাড়াও সব হাসপাতালকে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। আর্থিক প্রণোদনার অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংক অব কানাডা ঋণের ওপর সুদের হার নয় দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো ০.৫০ শতাংশ কমিয়ে ০.৭৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। কেন্দ্রীয় সরকার করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার (৬৭০০ কোটি টাকা) সংস্থান করেছে। এর বেশিরভাগ ব্যয় হবে স্বাস্থ্য খাতে। স্বল্প আয়ের মানুষদের ঘরে থাকার কারণে হারানো আয়ের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়াও আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য গুচ্ছ প্রণোদনা তহবিল ৩০ মার্চের বাজেটে ঘোষণা করা হবে। প্রস্তুতির বিস্তারিত গণমাধ্যমে বারবার প্রচার করা হচ্ছে। কোনো গণমাধ্যমে সরকারের নেওয়া এই আপৎকালীন পদক্ষেপের সমালোচনা করতে দেখা বা শোনা যাচ্ছে না। কোনো ওষুধে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের রোগ নিরাময় হচ্ছে না বলে মৃত্যু ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। সে কারণে সংক্রমণের বিস্তার রোধে এই আগাম সতর্কতা। প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী সোফির করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সংবাদে কিছু নাগরিকের আতঙ্কিত হতে দেখা গেছে। তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে সুপার মার্কেটগুলোতে। খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সরবরাহ কেনায় অনেকেই ঝাঁপিয়ে পড়ে পণ্যের তাকগুলো খালি করে ফেলেছেন।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, টরন্টো-কানাডা। ১৪ মার্চ ২০২০

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর