রবিবার, ১৫ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধু সশস্ত্র প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন ভিতরে ভিতরে

অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

বঙ্গবন্ধু সশস্ত্র প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন ভিতরে ভিতরে

১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর হলো নির্বাচন। ৩ জানুয়ারি আমরা শপথ নিলাম। ১২ জানুয়ারি ইয়াহিয়া খান ঢাকা আসলেন। শপথে পড়লাম- আমরা ছয় দফার সঙ্গে কোনো বিশ্বাস ঘাতকতা করব না। বঙ্গবন্ধু বক্তৃতায় বলেছিলেন, কেউ যদি বিশ্বাসঘাতকতা করে, তাকে জ্যান্ত কবর দেবেন। এও বলেছিলেন, ‘আমি যদি করি, আমাকেও জ্যান্ত কবর দেবেন।’ অর্থাৎ, ইয়াহিয়া খান আসার আগেই বঙ্গবন্ধু মেসেজটা দিলেন যে, তুমি যাই নিয়ে আসো না কেন, ছয় দফার সঙ্গে কোনো আপস নেই।

৭ মার্চ নিয়ে অনেক পন্ডিত লেখেন, বঙ্গবন্ধু সেদিন স্বাধীনতা ঘোষণা করলেই পারতেন। উনারা কী পটভূমি জানেন? ওইদিনই বেলুচিস্তানের কসাইখ্যাত টিক্কা খানকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। পাকিস্তান হওয়ার পর বেলুচিস্তান স্বাধীন হওয়ার জন্য বিদ্রোহ করেছিল। তখন টিক্কা খান সেখানে ম্যাসাকার করে বেলুচিস্তান ফের পুনঃদখল করে। ৭ মার্চ আমরা যখন ভাষণ শুনছিলাম, তখন একটি প্লেনের শব্দ শোনা যায়। ওই প্লেনে টিক্কা খান সেদিন বাংলাদেশে আসে। রমনার রেসকোর্সে সেদিন একদিকে মুক্তিকামী লাখো জনতা, অন্যদিকে সশস্ত্র পাকিস্তানি ফোর্স। এর মধ্যে কয়েক দিনে পাকিস্তান আর্মির গুলিতে হাজার লোক মারা গেছে। এ জন্যই বঙ্গবন্ধু হয়েছিলেন কৌশলী। তিনি স্বাধীনতার সমস্ত কথাই বলে গেছেন কিন্তু দুটি জায়গায় পাকিস্তানকে আটকে দেন। নির্বাচিত গণপ্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফেরত নিতে হবে। আর যেভাবে হত্যাকান্ড হয়েছে তার বিচার করতে হবে। এর ফলে সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলেও প্রকৃতপক্ষে কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষণা হয়ে যায়। তার আগে ফেব্রুয়ারি মাসে ইয়াহিয়া খান তার উপদেষ্টা পরিষদ ভেঙে দেন। ওয়্যার ক্যাবিনেট গঠন করেন ইয়াহিয়া খান। বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরে বললেন, তার পথ তাকেই পরিষ্কার করতে হবে। ২০ তারিখে খবর পেলেন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান মেজর জেনারেল ওমর পশ্চিম পাকিস্তানের সব নির্বাচিত এমএলএকে ডেকে অধিবেশনে যোগদান না করতে বলছেন। এজন্য ২১ তারিখে বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, যেসব ষড়যন্ত্র হচ্ছে বাঙালির বিরুদ্ধে, বার বার হয়েছে এর তোয়াক্কা আমরা করি না। এবার হয় আমরা মুক্তি অর্জন করব, স্বশাসন প্রতিষ্ঠা করব, দাসত্ব বন্ধন ছিঁড়ে ফেলে দেব, বাংলার মানুষকে মুক্ত করব। ২১ ফেব্রুয়ারি হঠাৎ দেখলাম আবদুর রাজ্জাক সাহেব হাজির। আমাকে বললেন, সাইয়িদ, আমার সঙ্গে যেতে হবে, হিলির দিকে যাব। আমরা জয়পুরহাটে গিয়ে আবুল হাসনাত সাহেবের বাড়িতে উঠলাম। আমাদের রেখে রাজ্জাক ভাই চলে গেলেন। ঘণ্টা দেড়েক পর ফিরলেন। বললেন, নগরবাড়ী ঘাটে তোরা একটা বাড়ি দেখ সেখানে এক্সপ্লোসিভ রাখতে হবে।

লেখক : সত্তরে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্য ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ। অনুলেখক : শামীম আহমেদ।

সর্বশেষ খবর