সোমবার, ১৬ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা
দেশে কোয়ারেন্টাইনে ২৩১৪

আক্রান্ত তিনজন সুস্থ হয়ে বাড়িতে, চিকিৎসা চলছে দুজনের

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে বিদেশ থেকে ফেরা ২ হাজার ৩১৪ জন দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিজ বাড়িতে ‘কোয়ারেন্টাইনে’ আছেন। আক্রান্ত তিনজন চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেছেন। নতুন যে দুজনের দেহে সংক্রমণ পাওয়া গেছে,  তারাও শারীরিকভাবে ‘ভালো’ আছেন। তাদের চিকিৎসা চলছে। গতকাল রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, এই মুহূর্তে হাসপাতালে ‘আইসোলেশনে’ আছেন ১০ জন। আর চারজন হাসপাতালে ‘কোয়ারেন্টাইনে’ আছেন। জনগণের মধ্যে ভুল ধারণা তৈরি হতে পারে। এ জন্য হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানুষের সংখ্যাটি আগে জানানো হতো না। আপনারা (সাংবাদিকরা) চেয়েছেন বলে বিষয়টি প্রকাশ করলাম। আমাদের ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই সংখ্যাটি আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি। আমাদের সিভিল সার্জনরা এ তথ্য দিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আইইডিসিআরের হটলাইনে ৩ হাজার ৭০৬টি কল এসেছে, যার মধ্যে ৩ হাজার ৬৭১টি কল নভেল করোনাভাইরাস সংক্রান্ত। এখন পর্যন্ত মোট ২৩১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত পাঁচজনের শরীরে নভেল করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, গত সপ্তাহের শুরুতে যে তিনজনের শরীরে নভেল করোনাভাইরাস পাওয়া গিয়েছিল, চিকিৎসা শেষে তারা সবাই বাড়ি ফিরে গেছেন। আর নতুন যে দুজনের দেহে শনিবার সংক্রমণ পাওয়া গেছে, তারাও শারীরিকভাবে ‘ভালো’ আছেন। তাদের একজন ইতালি, একজন জার্মানি থেকে এসেছেন। দুজনেই পুরুষ, একজনের বয়স ২৯, আরেকজন চল্লিশোর্ধ। এদের একজনের ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। দুজনেরই জ্বর এবং কাশি ছিল। তবে এ মুহূর্তে তাদের শারীরিক অবস্থা ভালো। এখনো অনেকে সেবা নিতে সরাসরি আইইডিসিআরে চলে আসছেন জানিয়ে মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় এরকম ৭১ জনের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাদের। এভাবে সরাসরি আইইডিসিআরে না আসার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, এতে সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়। আপনারা যে গণপরিবহন ব্যবহার করবেন, যে যানবাহন দিয়ে আসবেন সেখানে থাকা মানুষের মধ্যেও কিন্তু এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে এলেই সাধ্যের বাইরে চলে যেতে পারে। যদি আপনারা চলে আসেন, তাহলে আইইডিসিআরে এই সেবাটি বন্ধ করে দিয়ে বাইরে থেকে নমুনা সংগ্রহ করার ব্যবস্থায় থাকব। এখন পর্যন্ত ২১০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, আরও কতটি নমুনা পরীক্ষার কিট রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আরও দুই হাজারের বেশি কিট রয়েছে আইইডিসিআরের কাছে। কিছু কিট আসার পথে রয়েছে।

পরীক্ষার প্রস্তুতির মধ্যে হাসপাতাল থেকে পলায়ন : করোনা আক্রান্ত কিনা সেই পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের প্রস্তুতির মধ্যে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গেছেন একজন রোগী। বাহরাইন প্রবাসী ওই ব্যক্তি জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে এখানে ভর্তি হয়েছিলেন বলে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া জানিয়েছেন। গতকাল সকালে তার বিষয়ে করণীয় নিয়ে চিকিৎসকদের বৈঠকের মধ্যেই ৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তিনি পালিয়ে যান।

বরিশালে একজন আত্মগোপনে : বরিশাল জেলায় কোয়ারেন্টাইনে থাকা ১১ জনের মধ্যে একজনকে খুঁজে পাচ্ছে না স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। তবে তাকে সন্ধানের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন বরিশালের সিভিল সার্জন। এদিকে বরিশালে উদ্বোধনের দুই দিন পরই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

‘হোম কোয়ারেন্টাইনের’ অনেকেই স্বাভাবিক জীবনে : কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’ থাকা আটজনকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। দিনাজপুরে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা দুজন আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছে সিভিল সার্জন।

জেলায় জেলায় হোম কোয়ারেন্টাইনে : করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় বিদেশফেরত প্রবাসীদের জেলায় জেলায় তাদের বাড়ি এবং হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ইতালি থেকে আসা ১৪২ জন প্রবাসীর মধ্যে ৪৮ জনকে গাজীপুর মহানগরের পূবাইলের মেঘডুবি এলাকার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। শনিবার রাতে তাদের ওই হাসপাতালে আনা হয়। বিদেশফেরত এসব প্রবাসীদের কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিনা তা পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন। এ ছাড়া বাগেরহাটের শরণখোলায় করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে আবদুল আউয়াল হাওলাদার (৬৪) নামের এক রোগীকে উপজেলা হাসপাতালে রাখা হয়েছে। বগুড়ায় নতুন করে বিদেশফেরত আরও ১১ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এ জেলায়  মোট ২০ জনকে কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হলো। কিশোরগঞ্জে নতুন করে ১৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা ব্যক্তির সংখ্যা ৯৯ জন।  গোপালগঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় বিদেশফেরত আরও ২২ ব্যক্তিতে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এনিয়ে মোট ৩৩ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হলো। লক্ষ্মীপুর সদরের এক ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে বেড়েছে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার সংখ্যাও। গতকাল ১৯০ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ। রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় রবিবার পর্যন্ত ৯৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে চারজন রাজশাহী জেলার। তবে এখন পর্যন্ত কোনো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা যায়নি বলে নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক গোপেন্দ্রনাথ আচার্য।

গাজীপুরে তালা ভেঙে বিক্ষোভ : করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ইতালি থেকে দেশে আসা প্রবাসীদের কোয়ারেন্টাইনে রাখায় তারা গতকাল গাজীপুরে হাসপাতালের তালা ভেঙে বিক্ষোভ করেছেন। বিকালে পূবাইলে ‘মেঘডুবি ২০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র’-এর কলাপসিবল গেইটের তালা  ভেঙে তারা এই বিক্ষোভ করেন। গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুুল্লাহ আল জাকী জানান, প্রবাসীরা বিদেশ থেকে দেশে অনেক  বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানোর কথা তুলে ‘তাদের কোন অপরাধে’ আটকে রাখা হয়েছে জানতে চান। এসব বলে তারা বিক্ষোভ শুরু করেন।

এক পর্যায়ে তারা ওই হাসপাতালের ভিতরের কলাপসিবল গেইটের তালা ভেঙে হাসপাতাল চত্বরে বের হয়ে আসেন।

সর্বশেষ খবর