সোমবার, ১৬ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

সাংবাদিক আরিফের জামিন, ডিসি প্রত্যাহার

সম্পাদক পরিষদের গভীর উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক ও কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মধ্যরাতে কারাদন্ডে দন্ডিত কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করে। পরে কারাগার থেকে মুক্তিও পেয়েছেন আরিফ। এদিকে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে আরিফকে নির্যাতনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকদের ওপর সাম্প্রতিক হামলা ও নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংবাদপত্র সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ। একই সঙ্গে মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত দিয়ে সাংবাদিককে গ্রেফতার, কারাদন্ড ও জরিমানা, নির্যাতনের ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে সম্পাদক পরিষদের বিবৃতিতে।

আরিফুলের আইনজীবী শাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুজাউদ্দৌলার আদালতে জামিন আবেদনের শুনানি শেষে ২৫ হাজার টাকার মুচলেকায় আইনজীবী আহসান হাবীব নীলুর জিম্মায় আরিফের জামিন মঞ্জুর করা হয়।

প্রত্যাহার হচ্ছেন ডিসি : জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, কুড়িগ্রামে বাড়িতে অভিযান চালিয়ে সাংবাদিককে ধরে নিয়ে নির্যাতন চালানোর পর মাদক মামলা দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়ার ঘটনাটি ছিল পরিকল্পিত। সে জন্য জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে অভিযুক্ত অন্যদেরকেও প্রত্যাহার করা হবে। গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান মন্ত্রী।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক পরিকল্পিতভাবে ঘটিয়েছেন এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পেয়েছে মন্ত্রণালয়। তারই ভিত্তিতে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, তার প্রথম যে ন্যূনতম শাস্তি তা হলো প্রত্যাহার করে নেওয়া। সেটি হচ্ছে। এরপর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে। তার ভিত্তিতে বিভাগীয় তদন্ত হবে আবারও। সে অনুযায়ী তার বিচার হবে। শাস্তি হবে।

সম্পাদক পরিষদের বিবৃতি : দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকদের ওপর সাম্প্রতিক হামলা ও নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংবাদপত্র সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ। একই সঙ্গে মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত দিয়ে সাংবাদিককে গ্রেফতার, কারাদন্ড ও জরিমানা, নির্যাতনের ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল পরিষদের পক্ষে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক নঈম নিজাম।

বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, কিছুদিন ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাংবাদিক আটক ও নির্যাতনের খবর প্রকাশিত হচ্ছে। বিশেষ করে বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে পুলিশ মধ্যরাতে আটক করার পর রাতেই এক বছরের সাজা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠায়। এটা শুধু নিন্দনীয়ই নয়, দুঃখজনক ও পীড়াদায়কও বটে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মধ্যরাতে এভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত দিয়ে সাংবাদিক গ্রেফতার, কারাদন্ড ও জরিমানা, নির্যাতনের ঘটনায় সম্পাদক পরিষদ বিস্মিত। আমরা আরিফুলের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি করছি। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহারের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া ঢাকার সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের নিখোঁজের ঘটনায় সম্পাদক পরিষদ উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা আশা করব কাজলকে খুঁজে বের করে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। সম্পাদক পরিষদ বাংলাদেশ প্রতিদিনের মেহেরপুর প্রতিনিধি মাহবুবুল হক পোলেনের ওপর হামলা, তার বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনায়ও নিন্দা জানিয়েছে।

মানববন্ধন ও বিক্ষোভ : আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের বিবরণ অনুযায়ী, সাংবাদিক আরিফকে অবৈধভাবে গ্রেফতার ও নির্যাতনের প্রতিবাদ এবং ঘটনার হোতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকাল সাংবাদিকরা লক্ষ্মীপুর প্রেস ক্লাবের সামনে, যশোর প্রেস ক্লাবের সামনে, কুমিল্লার কান্দিরপাড় টাউন হলের সামনে, দিনাজপুর প্রেস ক্লাবের সামনে, বরিশাল আশ্বিনী কুমার হলের সামনে, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা কার্যালয়ের সামনে, পিরোজপুর টাউনক্লাব সড়কে, ময়মনসিংহের ভালুকা প্রেস ক্লাবের সামনে, কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে, নোয়াখালী প্রেস ক্লাবের সামনে, সিলেট শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করেন।

সর্বশেষ খবর