সোমবার, ১৬ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

রাষ্ট্র্রীয় সামাজিক ব্যক্তি তিন পর্যায়েই আছে গাফিলতি

জিন্নাতুন নূর

রাষ্ট্র্রীয় সামাজিক ব্যক্তি তিন পর্যায়েই আছে গাফিলতি

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে রাষ্ট্র্রীয়, সামাজিক ও ব্যক্তিগত তিন পর্যায়েই বাংলাদেশের গাফিলতি আছে। বলা যায়, করোনা ইস্যুতে বর্তমানে আমরা ভয়াবহ পরিবেশের মধ্যে আছি। এমনকি এই ভাইরাস রোধে আমাদের সম্মিলিত কোনো উদ্যোগ নিতেও দেখা যাচ্ছে না। আর সরকারের ভিতরও এ ইস্যুতে প্রস্তুতির যথেষ্ট অভাব আছে কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গতকাল এসব কথা বলেন।

এই শিক্ষাবিদ বলেন, করোনা প্রতিরোধে প্রথমত রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদ্যোগী হতে হবে। সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এই দুটি খাতই নজরদারি করছে। আর এর করণীয় সরকার ঠিক করবে। দ্বিতীয়ত সমাজকে এই মহামারী মোকাবিলায় এগিয়ে আসতে হবে। একজন গ্রামবাসী যদি সিদ্ধান্ত নেন যে ইতালিফেরত বাংলাদেশিকে অবশ্যই কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে তবে তা বাস্তবায়ন করা আমাদের সমাজে সম্ভব। তৃতীয়ত ব্যক্তি পর্যায়েও আমাদের করোনা প্রতিরোধে কার্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে করোনা প্রতিরোধে উদ্যোগের অভাব থাকলে এই ভাইরাস সমাজ ও ব্যক্তি পর্যায়েও সঞ্চারিত হবে। আমাদের এখানে সে অর্থে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সামাল দিতে কোনো প্রস্তুতি নেই। তবে কোয়ারেন্টাইনে রাখার জন্য ৫০০টি বিছানা বা ভালো টয়লেটের ব্যবস্থা করা আমাদের সরকারের জন্য কঠিন কিছু নয়। যেখানে সরকার বর্তমানে অনেক মেগা প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছে আবার হাজার হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে লুট হয়ে যাচ্ছে সেখানে মাত্র ৫০০ মানুষের কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা সরকার করতে পারবে না এটা আমার কাছে অস্বাভাবিক লাগছে। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার দুই মাসের বেশি সময় পার হয়েছে। এ সময়ে করোনা মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি আমাদের সংগ্রহ করে রাখা উচিত ছিল। মনজুরুল ইসলাম বলেন, পশ্চিমবঙ্গে মাত্র তিনজন করোনায় আক্রান্ত হলেও তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। কিন্তু আমাদের এখানে পরিস্থিতি সে অবস্থায় যায়নি বলে দায়িত্বপ্রাপ্তরা মন্তব্য করছেন। আমার প্রশ্ন, পরিস্থিতি কখন তৈরি হবে তা আমাদের শিক্ষামন্ত্রী বা স্বাস্থ্যমন্ত্রী কীভাবে জানেন?

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করলে অসুবিধাই বা কী! বড় অর্থনীতির দেশগুলোতে রাস্তাঘাট ভুতুড়ে হয়ে গেছে আর আমাদের দেশে মানুষ দিব্যি চলাফেরা করছে। ধরে নিলাম আমাদের দেশে ভয়ঙ্কর কিছু হবে না কিন্তু আমাদের ন্যূনতম প্রস্তুতি তো থাকতে হবে। তিনি বলেন, আশকোনা হেলথ ক্যাম্পটি বিমানবন্দরের খুব কাছে সেখানে সরকার চাইলেই ব্যবসায়ীরা তিন দিনের মধ্যে কোয়ারেন্টাইন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সরবরাহ করতে পারবেন। মাত্র এই সামান্য কজন মানুষকে সরকার সেবা দিতে পারবে না এমনটি আমি বিশ্বাস করি না।

এই শিক্ষাবিদ বলেন, মার্কিন এক বিশেষজ্ঞের মতে, এক্সট্রিম কেইসে করোনায় কয়েক লাখ মানুষেরও মৃত্যু হতে পারে। ধরে নিলাম এক্সট্রিম পর্যায়ে বাংলাদেশ যাবে না। কিন্তু আমাদের হাত গুটিয়ে থাকলেও তো চলবে না। আর যদি কিছু হয় তবে পরিস্থিতি আমরা কীভাবে মোকাবিলা করব তার কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই। শুনেছি দেশে এমিরাইটসে আসা ভিআইপি যাত্রীদের সরাসরি নিজ নিজ বাড়িতে যেতে দেওয়া হয়েছে অথচ কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুুডোর স্ত্রীও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

মনজুরুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এক ধরনের গাছাড়া ভাব লক্ষ্য করতে পারছি। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আমরা বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছি না। সরকারি কর্মকর্তাদের কথা শুনে মনে হলো তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার জন্য বসে আছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর একার পক্ষে এত কাজ করার ক্ষমতা নেই। বড় বড় চিকিৎসককে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে এখন করণীয় ঠিক করতে হবে।

এই কথাসাহিত্যিক বলেন, করোনা প্রতিরোধে ব্যক্তি পর্যায়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা রয়ে গেছে। রাষ্ট্র থেকে করোনা প্রতিরোধে প্রস্তুতির অভাব থাকলেও রাষ্ট্র্র ব্যক্তিদের নির্দেশনা দিচ্ছে কিন্তু আমরা কজনইবা তা মানছি। প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও আমরা স্বার্থপরের মতো হ্যান্ডওয়াশসহ অন্যান্য দ্রব্য কিনছি। আবার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কোনো লক্ষণও এখানে দেখা যাচ্ছে না। স্কুলগুলোতে টয়লেট অপর্যাপ্ত আর সেখানে হাত ধোয়ার পরিবেশও নেই। স্কুলের বাচ্চাদের অভিভাবকদের দেখছি স্কুল বন্ধের জন্য বেশ সোচ্চার কিন্তু তাদের উচিত ছিল এই পরিস্থিতিতে স্কুলে টয়লেট তৈরির ব্যবস্থা করা। যা তারা করছেন না। স্কুলগুলোও নিজেরা এসব কাজ করতে পারত। কিন্তু সরকার বিরক্ত হয়ে এমপিও বন্ধ করে দিতে পারে এই ভয়ে তাও করছে না। আবার ব্যক্তি পর্যায়ে আমরা দেখছি কোনো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নেই। মানুষ মুখ না ঢেকে হাঁচি দিচ্ছে, রাস্তায় থু-থু ফেলছে। এই কাজগুলো  এখন সবচেয়ে অনিরাপদ। অর্থাৎ ব্যক্তি থেকে যে পরিমাণ বিপদ সৃষ্টি হচ্ছে তা বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোথাও দেখছি না।

সর্বশেষ খবর