বুধবার, ১৮ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

ভ্যাকসিনের টেস্ট আমেরিকায়, চেষ্টা অন্য দেশগুলোরও

প্রতিদিন ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে বসবাসকারী দুই সন্তানের জননী জেনিফার হলারের (৪৩) শরীরে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসির সিয়াটলে কেইসার পার্মানেন্ট রিসার্চ সেন্টারে গত সোমবার থেকে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোও করোনা প্রতিরোধক ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, এপি। মার্কিন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত একজনের শরীরে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে। তবে এর কার্যকারিতা বুঝে উঠতে কয়েক মাস সময় লাগবে। এদিকে ভ্যাকসিন গ্রহণ করার পর জেনিফার হলার বলেছেন, ‘করোনাভাইরাসের কাছে এই মুহূর্তে আমরা সবাই অসহায়। এটা আমার জন্য সুবর্ণ সুযোগ যে আমি কিছু করতে পারছি।’ যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, এই ভ্যাকসিন ফলপ্রসূ হবে কিনা তা জানতে বেশ কয়েক মাস লেগে যাবে। এ ছাড়া এই ভ্যাকসিন বাজারে আসতে এক থেকে দেড় বছর অপেক্ষা করতে হতে পারে। করোনা ভ্যাকসিন তৈরি দলের বিজ্ঞানী ড. লিসা জ্যাকসন জানান, তারা সবাই এই জরুরি অবস্থায় যতটুকু পারেন তা-ই করতে চান। ভ্যাকসিন তৈরির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরুর কথা জানিয়ে মার্কিন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ (এনআইএইচ) সোমবার প্রেস বিবৃতিও জারি করে। তাতে বলা হয়, ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরিই আছে। এখন তার ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে। প্রথমে ইঁদুরের ওপর হয়েছে। এরপর মানুষের ওপর প্রয়োগ হচ্ছে। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথের অর্থায়নে এক মাস ধরে মানবদেহে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালানো হবে। কমপক্ষে ৪৫ স্বেচ্ছাসেবীর শরীরে করোনার ভ্যাকসিনের এই পরীক্ষা চালানো হবে।

করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ কিট উদ্ভাবন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের : এদিকে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ কিট উদ্ভাবনের দাবি করেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তাদের বিশেষজ্ঞ গবেষকদের একটি টিম এটি উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে এবং এ কিট অনুমোদনের জন্য তারা বাংলাদেশের ওষুধ প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছে। অনুমোদন পেলে তারা ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে উৎপাদন শুরু করতে পারবে।

অন্য দেশগুলোর চেষ্টা : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও হংকং, অস্ট্রেলিয়া, ইসরায়েল এমনকি ভারতেও এই মারণ ভাইরাসকে প্রতিরোধ করার উপায় আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানী-গবেষকরা। অস্ট্রেলিয়ার তিন বিজ্ঞানী কেইথ চ্যাপেল, পল ইয়ং এবং ট্রেন্ট মুনরো দাবি করেছেন, ‘সার্স-সিওভি-১৯ ভাইরাল স্ট্রেনের স্পাইক প্রোটিন হোস্ট সেলের সঙ্গে জোড় বাঁধার আগেই তাকে থামিয়ে দিতে হবে। বিষদাঁত ভেঙে দিলেই আর আক্রমণ করতে পারবে না করোনা। ভ্যাকসিন বানানোর মূল ফর্মুলা এটাই। ইউনিভার্সিটি অব কুইনসল্যান্ডের এবং ন্যানোটেকনোলজি ল্যাবে ‘এস স্পাইক’ নামে এই ভ্যাকসিন তৈরির কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে।’ কুইনসল্যান্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক কেইথ চ্যাপেল বলেছেন, ‘২৫০টি ভ্যাকসিনের ফর্মুলা বানানো হয়েছিল ল্যাবে। তার থেকেই ট্রায়ালে এস-স্পাইক ভ্যাকসিনকেই করোনা-রোধের আদর্শ ওষুধ হিসেবে মনে হয়েছে বিজ্ঞানীদের।’ চ্যাপেল বলেন, এ বছরের মাঝামাঝি মানুষের ওপর প্রয়োগ করা যাবে এই ভ্যাকসিন। অধ্যাপক এবং গবেষক মুনরো জানিয়েছেন, করোনার সংক্রামকরোগ কভিড-১৯ এর সঙ্গে একদিকে যেমন মিডল ইস্ট রেসপিরেটারি সিন্ড্রোম (মার্স)-এর মিল আছে, তেমনি কিছুটা হলেও মিল আছে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সঙ্গে। এই ভাইরাল স্ট্রেনের কাজই হলো হোস্ট সেলের প্রোটিনের সঙ্গে জুটি বেঁধে কোষে অ্যান্ট্রি নেওয়া। ফুসফুসের দফারফা করে একে একে শরীরের নানা অঙ্গ বিকল করা। তাই গোড়াতেই যদি মোক্ষম আঘাত হানা যায় অর্থাৎ, ভাইরাল প্রোটিনকেই রুখে দেওয়া যায় তাহলে সে আর বাহক প্রোটিনের সঙ্গে জোট বাঁধতে পারবে না। নতুন এই ড্রাগে রয়েছে ল্যাবে বানানো পলিপেপটাইড অর্থাৎ অ্যামাইনো অ্যাসিডের সিকুয়েন্স যা ভাইরাল প্রোটিনকে নিষ্ক্রিয় করে দেবে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়াবে। এদিকে কানাডায় অবস্থিত একটি বায়োটেক কোম্পানি মেডিকাগো (যা মিতসুবিশি তানাবি ফার্মা কোম্পানির সাবসিডিয়ারি) দাবি করেছে, তারা করোনাভাইরাসের একটি ভাইরাস-লাইক-পার্টিকেল তৈরি করেছে। এদের সংক্ষেপে বলে ভিএলপি।

এই ভিএলপি অনেকগুলো প্রোটিনের দ্বারা তৈরি এবং এদের আকার এবং গঠন মূল ভাইরাসের মতোই কিন্তু এদের মধ্যে ভাইরাসের জেনেটিক বস্তু নেই। এই ভ্যাকসিনগুলো সফল হলে এটা নিরাপদ কি না, সেটা নিশ্চিত করার জন্য বেশ কিছু ধাপ পেরোতে হবে। তারপর অনুমতি মিললে সারা বিশ্বে বড় আকারে বিতরণ করা হবে। এ ছাড়া চীন নিওক্লিওটাইড অ্যানালগ নামে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল গত ফেব্রুয়ারিতেই শুরু করেছে।

সর্বশেষ খবর