শুক্রবার, ২০ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় থমকে গেছে বিশ্ব

৯ হাজার ৮৪৪ মৃত্যু, ১৭৬ দেশে আক্রান্ত ২ লাখ ৩৭ হাজার ৯১২, ভারতে জনতার কারফিউ

প্রতিদিন ডেস্ক

করোনায় থমকে গেছে বিশ্ব

মানুষশূন্য ইতালির রোমের রাস্তা -এএফপি

করোনাভাইরাসে থমকে গেছে বিশ্ব। বন্ধ হয়ে গেছে সব রকম স্বাভাবিক কার্যক্রম। আক্রান্ত দেশগুলোতে চলছে স্তব্ধাবস্থা। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৭৬টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। ২৪ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯ হাজার ৮৪৪ জন। সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে ইউরোপের দেশ ইতালিতে। সেখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪০৫ জনে। যা এ যাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর চীনে মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ২৪৫ জন। এ ছাড়া ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতিও নাজুক। ইরানি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইরাজ হারিরছি গতকাল জানিয়েছেন, ‘ইরানে প্রতি ঘণ্টায় আক্রান্ত হচ্ছেন ৪৩ জন এবং মারা যাচ্ছেন তিনজন।’ পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রেও একদিনে মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের। এদিকে আগামী রবিবার থেকে ভারতে সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত প্রতিদিন কারফিউ জারি থাকার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সূত্র : আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী বন্ধ হয়ে গেছে আকাশ, স্থল ও জলপথ। অনেক দেশেই জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে স্কুল-কলেজ-প্রতিষ্ঠান। মানুষকে পথে বেরুতেও নিষেধ করা হয়েছে। গতকাল ইংল্যান্ডের সব ধরনের ফুটবল খেলা স্থগিত করা হয়েছে। জুনে ভিয়েতনামে অনুষ্ঠিতব্য আসিয়ার শীর্ষ সম্মেলনও স্থগিত করা হয়েছে। খবরে বলা হচ্ছে, চীন থেকে ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইরান, জার্মানি থেকে স্পেন- করোনার থাবায় থমকে গেছে জনজীবন। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পুরো বিশ্ব যোগাযোগ ব্যবস্থা। একের পর এক ভেঙে খান খান হয়ে যাচ্ছে গ্লোবাল কনসেপ্ট। বিশ্বজুড়ে মহামারী আকার ধারণ করা এ ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল চীনের পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসলেও মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্য। এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে ভারতে আগামী রবিবার সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত প্রতিদিন কারফিউ জারি থাকার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গতকাল রাত ৮টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এ ঘোষণা দেন। ভাষণে মোদি বলেন, রবিবার থেকে দেশে ‘জনতা কারফিউ’ কার্যকর হবে। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দেশজুড়ে কারফিউ জারি থাকবে। তিনি এই সময় ঘরের বাইরে বের না হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি দেশের প্রত্যেক নাগরিককে এই কারফিউ বাধ্যতামূলকভাবে মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে আরও উল্লেখ করেন, আতঙ্কিত হয়ে কেউ অযথা অতিরিক্ত কেনাকাটা করবেন না, অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি রুখতে ইকোনমিক রেসফন্স টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে, ধৈর্য ধরুন সজাগ থাকুন সচেতন থাকুন, আগামী কয়েক বছর ৬০-৬৫ বছর বয়সীরা ঘরে থাকুন। তিনি বলেন, খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে যাবেন না। আমাকে কয়েক সপ্তাহ সময় দিন। একজোট হয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। মানব সভ্যতা এখন সংকটে। প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের থেকেও করোনার গ্রাসে অনেক বেশি দেশ। তিনি উল্লেখ করেন, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত গোটা  দেশে মুহূর্তে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১৭৩ হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে চারজনের।

এদিকে আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ড ওমিটারের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, গতকাল দুপুর পর্যন্ত ১৭৬টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৯ হাজার। এ সংখ্যা হয়েছে ৯ হাজার ৩০৩ জনে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২৭ হাজার ৪৯৫ জনে। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮৫ হাজার ৯৬১ জন। চীনে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৮০ হাজার ৯২৮ জন। গতকাল নতুন আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ৩৮ জন।  চীনের পর সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত দেশ ইতালি। নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষেধক না থাকায় দেশীয় কিছু সম্ভাব্য প্রতিষেধক দেশব্যাপী ছড়ালেও কোনোভাবেই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আসছে না। মৃতের চেয়ে কয়েকগুণ লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। দেশটিতে প্রাণহানির ঘটনার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেদেশে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ হাজার ৭১৩ জন। প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজার ৯৭৮ জন। উল্লেখ্য, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরেই অবরুদ্ধ রয়েছে গোটা ইতালি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এ সময়সীমা আরও বাড়ানো হতে পারে। জনগণকে আপাতত বাড়ির বাইরে বের না হতে অনুরোধ জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। ইরানে ১৮ হাজার ৪০৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪৬ জন। এ পর্যন্ত মোট মারা গেছেন ১ হাজার ২৮৪ জন। ওয়ার্ল্ড ওমিটারসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গতকাল দুপুর ১টা পর্যন্ত সারা বিশ্বে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭৯ জন। এ ছাড়া এ পর্যন্ত মারা গেছেন ২০৫ জন যুক্তরাষ্ট্রে, ১৫২ জন দক্ষিণ কোরিয়ায়, ৭২ জন জাপানে, অস্ট্রেলিয়ায় ৪০ জন, ভারতে দুজন, মেক্সিকোর ২৫ জন, আর্মেনিয়ার ৫ জন, তাইওয়ানের ৮ জন, কলম্বিয়ার ৯ জন, বুলগেরিয়ার ২ জন, জর্জিয়ার ২ জন, কাজাখস্তানের ১ জন, নিউজিল্যান্ডের ৮ জন। রাশিয়ায়ও গতকাল প্রথম ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৪৭ জন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর