শিরোনাম
শনিবার, ২১ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

ইতালি এখন মৃত্যুপুরী

বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়াল, মিলিয়ন মানুষের মৃত্যুর শঙ্কা গুতেরেসের

প্রতিদিন ডেস্ক

ইতালি এখন মৃত্যুপুরী

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে এক দিনে মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ২১০ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ১৮৭-এ। ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২৯ হাজার ৪৯০ জন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৬৭ হাজার ৯৩৬। সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থায় থাকা ইতালিতে নতুন করে মারা গেছেন ১৩ ডাক্তারসহ ৬২৭ জন। সূত্র : ওয়ার্ল্ডোমিটার ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। ইতালির সর্বশেষ পরিস্থিতি অনুযায়ী, দেশটি নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণে এখন মৃত্যুপুরী। এখানে প্রথম মৃত্যু ঘটেছিল গত ২১ ফেব্রুয়ারি, তখন চীনে মৃতের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৩০০-এর বেশি। তবে চীনে ক্রমান্বয়ে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ইতালি। প্রথম মৃত্যুর এক মাস না গড়ানোর আগেই দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ছাপিয়ে গেছে চীনকে। অথচ ইতালিতে প্রথম মৃত্যু ঘটেছিল চীনে মৃত্যুর দেড় মাসের বেশি সময় পর। ইতালির কর্মকর্তারা গতকাল ২৪ ঘণ্টায় ১৩ ডাক্তারসহ ৪২৭ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছেন। এ নিয়ে ইতালিতে মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৪ হাজার ৩২-এ। অন্যদিকে গতকাল পর্যন্ত চীনে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৪৮-এ। শুরুতে চীনে মৃতের সংখ্যা হু হু করে বাড়তে থাকলেও মাস দুয়েকের মধ্যে তারা পরিস্থিতি অনেকটাই সামলে নিতে পেরেছে। যে হুবেই প্রদেশে থেকে এ ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ঘটেছিল বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে, সেখানে এখন আর কোনো নতুন রোগী পাওয়া যাচ্ছে না। ইতালি গত ১২ মার্চ থেকে সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ, দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে প্রায় গোটা দেশকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠালেও সংক্রমণ ঠেকাতে তারা হিমশিম খাচ্ছে। ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ইতালিতে প্রায় সব ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও জমায়েত অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ রয়েছে। এ লকডাউনের সময় অনবরত বৃদ্ধি করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্টে ঘোষণা দিয়েছেন, লকডাউনের কারণে পুরো ব্যবস্থা ভেঙে পড়া থেকে রক্ষা পেয়েছে। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর খুব দ্রুত স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফেরত যাওয়া সম্ভব হবে না। ইতালির স্থানীয় দৈনিক পত্রিকার খবর অনুসারে, আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হওয়া ২ হাজার ৩ জন উত্তরাঞ্চলীয় তিনটি এলাকার। এসব এলাকাতেই ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি।

মিলিয়ন মানুষের মৃত্যুর শঙ্কা : জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ১৯ মার্চ এক ভিডিও কনফারেন্সে সাংবাদিকদের বলেছেন, বিশ্বব্যাপী সমন্বিত পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকানো না গেলে তা দুনিয়াজুড়ে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিতে পারে। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘আমরা যদি ভাইরাসটিকে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়তে দিই, বিশেষত বিশ্বের সবচেয়ে দুর্বল অঞ্চলগুলোয়; তাহলে এটি লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করবে।’ গুতেরেস বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী সংহতি কেবল নৈতিক কারণেই নয়, এটি সবার স্বার্থে প্রয়োজন।’ জি-২০ দেশের নেতাদের প্রতি দরিদ্র দেশগুলোয় সহযোগিতা জোরদার করার আহ্বান জানান তিনি।

সর্বশেষ তথ্য : গতকাল ২৪ ঘণ্টায় যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২০০ আর যুক্তরাজ্যে ১৫০ ছাড়িয়েছে। চীনে নতুন করে মারা গেছেন তিনজন, স্পেনে ১৭১, ইরানে ১৪৯, বেলজিয়ামে ১৬, যুক্তরাষ্ট্রে ১০, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৩, ডেনমার্কে ৩, পর্তুগালে ২, ইন্দোনেশিয়ায় ৭, পোল্যান্ডে ১, ইকুয়েডরে ১, পেরুতে ২, ফিলিপাইনে ১, পাকিস্তানে ১, ভারতে ১ ও মালয়েশিয়ায় ১ জন। খবরে বলা হয়েছে, ভারতে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে, ইসরায়েলে এক দিনেই আক্রান্ত বেড়েছে ২৪৪ জন। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ ডায়নামিকস-ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিসি (সিডিডিইপি) বলেছে, ভারতে আক্রান্ত হতে পারে ৩০ কোটি মানুষ। এতে সেখানে করোনা সুনামির শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এদিকে শ্রীলঙ্কা গতকাল থেকে দেশজুড়ে কারফিউ জারি করেছে, স্থগিত করেছে আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় পার্লামেন্ট নির্বাচন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাতিল করেছেন জি-৭ বৈঠক। এ ছাড়া স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টাইনে গেছেন মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। দেশব্যাপী নামানো হচ্ছে সেনাবাহিনী। বেলজিয়ামে লকডাউন : করোনাভাইরাস আতঙ্কে এবার সারা দেশে লকডাউন ঘোষণা করেছে বেলজিয়াম সরকার। ১৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত পুরো বেলজিয়ামে এ লকডাউন চলবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। এর আগে সব ধরনের স্কুল-কলেজ, সভা-সেমিনার বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। জরুরি কাজ ছাড়া কাউকে বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। শুধু ফার্মেসি, খাবারের দোকান ও পোস্ট অফিস ছাড়া বাকি সব বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জরুরি কাজ থাকলেও লোকজনের মধ্যে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বেলজিয়ামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৯৫-এ।

স্পেনে মৃতের সংখ্যাও ছাড়াল ১ হাজার : স্পেনে বিদ্যুৎগতিতে বেড়ে চলেছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। গতকাল স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২০ হাজার ৪১০ জন। মৃত্যুর মিছিলও যেন থামানো যাচ্ছে না। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম আরটিভির সর্বশেষ তথ্যানুসারে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ১ হাজার ৪১ জন। মৃত্যুর হার ২৪ ঘণ্টায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৫৮৮ জন।

বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসে আক্রান্তের দিক দিয়ে স্পেনের অবস্থান এখন তৃতীয়। দেশটিতে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জরুরি রাষ্ট্রীয় সতর্কতা জারিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক নেওয়া হয়েছে সরকারের আওতায়। ১৩ মার্চ থেকে হাসপাতালের সব স্বাস্থ্যকর্মীর ছুটি বাতিল এবং সব সময় প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালভাদর ইয়্যা প্রাথমিকভাবে ৩০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়ার ঘোষণা দিলেও পরবর্তীতে ৫০ হাজার নতুন স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে মেডিকেল শিক্ষার্থী ও অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসকদেরও সংযুক্ত করতে বাধ্য হচ্ছে সরকার। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দেশের সাতটি শহরে ইতিমধ্যে সেনাবাহিনীর বিশেষ ইউনিট মোতায়েন করা হয়েছে। সবাইকে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা : করোনাভাইরাসের কারণে আগামী দুই সপ্তাহের জন্য ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন গভর্নর। গতকাল এ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে গভর্নর আনিস বাসুয়েদান বলেন, বার, সিনেমা হলসহ জনবিনোদনমূলক সবকিছুই সোমবার থেকে বন্ধ থাকবে। গণপরিবহন চলাচলও সীমিত রাখা হবে। তিনি বিভিন্ন কোম্পানিকে তাদের কর্মীদের বাসা থেকেই কাজের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান। গভর্নর আরও বলেন, ‘জাকার্তায় আমাদের মেডিকেল টিম অনেক বেশিসংখ্যক করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করছে। আমাদের চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষমতা সীমিত। যত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে সে অনুপাতে আমাদের পর্যাপ্ত হাসপাতাল নেই, কর্মীও নেই।’ জরুরি এ পরিস্থিতিতে জাকার্তায় যারা দিনমজুরি করেন তাদের দৈনিক মজুরি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন গভর্নর বাসুয়েদান। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে জাকার্তায় শুক্রবারের জুমার নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় জমায়েতও দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর