শনিবার, ২১ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

শিবচরে প্রয়োজন ছাড়া বের হচ্ছে না কেউ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ

লক্ষ্মীপুর ও মাদারীপুর প্রতিনিধি

মাদারীপুরের শিবচরে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশনা দেওয়ার পর গতকাল সকাল থেকে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শিবচরে করোনা রোধে ওষুধ, কাঁচাবাজার, মুদি দোকান ছাড়া অন্য সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে উপজেলা প্রশাসন। এদিকে লক্ষ্মীপুরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ছাড়া শহরের সব দোকানপাট আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছেন বণিক সমিতির নেতারা। গতকাল সমিতির সভাপতি এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু গণমাধ্যমকর্মীদের এ তথ্য জানান। সরেজমিন দেখা যায়, শিবচর কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। ওষুধ, কাঁচাবাজার, মুদি দোকান ছাড়া অন্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণার ফলে বিভিন্ন হাট-বাজার ও আবাসিক এলাকায় লোকসমাগম অন্য দিনের তুলনায় খুবই কম দেখা গেছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ মানুষ বাইরে বের হচ্ছে না। এদিকে করোনার প্রভাব পড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারে। চালের দাম বেড়েছে প্রতি বস্তায় প্রকারভেদে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। কাগজে-কলমে প্রশাসন ঘোষণা না দিলেও রাস্তাঘাট, দোকানপাটে নেই জনসমাগম। খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না মানুষ। স্বাস্থ্য বিভাগ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে দেশের সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করেছে শিবচর উপজেলাকে। আর এরই প্রভাবে আতঙ্কিত মাদারীপুরের অন্য উপজেলার মানুষও। এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। যদিও প্রশাসন বলছে, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বাজারব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ রাখা হবে। করোনা সংক্রমণ রোধে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় ওষুধের দোকান, কাঁচাবাজার ও মুদি দোকান ছাড়া অন্যান্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণার পরে থেকে জেলাজুড়ে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। শিবচরের বিভিন্ন হাট-বাজার জনশূন্য হয়ে গেছে। আতঙ্ক দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এতে জেলাজুড়েই দ্রব্যমূল্য লাগামহীন বেড়েছে। আতঙ্ক ছড়িয়েছে পুরো মাদারীপুরে। মাদারীপুরের সিভিল সার্জন মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, জেলায় সম্প্রতি বিদেশ থেকে ফিরেছেন ৩ হাজারের বেশি মানুষ, যার অধিকাংশই শিবচর উপজেলার বাসিন্দা। এ কারণে যারা করোনভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, এর বেশি ভাগই শিবচরের। তাই হোম কোয়ারেন্টাইন মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মাদারীপুরের সহকারী পুলিশ সুপার আবির হোসেন বলেন, করোনার মতো ইস্যুকে নিয়ে যারা প্রতারণা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ এড়ানোর জন্য শিবচর পৌরসভার দুটি ওয়ার্ড ও দুটি ইউনিয়নের দুই গ্রামের মানুষের চলাচল সীমিত করা হয়েছে। এই উপজেলায় গণপরিবহন, বিশেষ করে বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া গণজমায়েতসহ সব ধরনের মিছিল-মিটিং বন্ধ রাখা হয়েছে।’ তিনি শিবচর উপজেলাকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ দাবি করে বলেন, এ এলাকায় প্রবাসীর সংখ্যা বেশি। তিনি বলেন, মাদারীপুরের চার উপজেলা, চার পৌরসভা ও ৬০টি ইউনিয়নে করোনা প্রতিরোধে কমিটি করেছে প্রশাসন। এ ছাড়া জেলা প্রশাসন থেকে একটি সেলও গঠন করা হয়েছে। সাধারণ মানুষকে তিনি আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। করোনার সুযোগে যারা দ্রব্যমূল্য বাড়াবে, তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। এদিকে লক্ষ্মীপুরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ছাড়া শহরের সব দোকানপাট আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছেন বণিক সমিতির নেতারা। গতকাল সমিতির সভাপতি এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু গণমাধ্যমকর্মীদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, বিদেশফেরত প্রবাসীরা হোম কোয়ারেন্টাইন না মানায় করোনাভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে বণিক সমিতি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সমিতির পক্ষ থেকে খাবারের হোটেল, কমিউনিটি সেন্টার বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া জনসমাগম হয় এমন সব ধরনের অনুষ্ঠান না করার আহ্বানও জানানো হয়েছে। গতকাল বিকাল থেকে শহরে প্রায় দোকানই বন্ধ দেখা গেছে। লোকজনের উপস্থিতিও কম লক্ষ করা গেছে। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসন সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে রয়েছে। বিকালে পৌর শহরের বিভিন্ন দোকানে অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে একাধিক ব্যবসায়ীকে অর্থদন্ড প্রদান করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইদুল ইসলাম। জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. আবদুল গফফার বলেন, এ পর্যন্ত জেলায় ৪৫০ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। নিয়ম ভঙ্গকারীদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে কাজ করছে প্রশাসন।

সর্বশেষ খবর