রবিবার, ২২ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

ঢাকায় ভোট পড়েছে ৫.২৮ শতাংশ

উপনির্বাচনে তিনটিই নৌকার, ঢাকা-১০ শফিউল গাইবান্ধা-৩ স্মৃতি বাগেরহাট-৪ মিলন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকায় ভোট পড়েছে ৫.২৮ শতাংশ

নজিরবিহীন কম ভোটার উপস্থিতির মধ্যদিয়ে গতকাল ঢাকা-১০, গাইবান্ধা-৩ ও বাগেরহাট-৪ আসনের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়েছে। ঢাকা-১০ আসনে ইভিএমে ভোট হলেও বাকি দুই আসনে  ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ করেছে কমিশন। ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তিনি ভোট পেয়েছেন ১৫ হাজার ৯৫৫টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী শেখ রবিউল আলম ভোট পেয়েছেন মাত্র ৮১৭টি। এ আসনে মোট ভোট পড়েছে ৫.২৮ ভাগ। 

গাইবান্ধা-৩ এ বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি। তিনি পেয়েছেন ২ লাখ ১৪ হাজার ৮৮২  ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক ডা. মইনুল হাসান সাদিক ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৪১ হাজার ৪০৮ ভোট। বাগেরহাট-৪ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন  নৌকা প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি  পেয়েছেন ১ লাখ ৮২ হাজার ৭৪৫  ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পাটির্র সাজন কুমার মিস্ত্রি লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩ হাজার ৭৪৪ ভোট।

ঢাকা উপনির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে নতুন করে ভোটের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির শেখ রবিউল আলম রবি। ভোট গণনা শেষে গতকাল রাতে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কমকর্তা জি এম সাহাতাব উদ্দিন। বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফলে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের কাজী মোহাম্মদ আবদুর রহীম (বাঘ) ভোট পেয়েছেন ৬৩টি। মুসলিম লীগের নবাব খাজা আলী হাসান আসকারী (হারিকেন) ভোট পেয়েছেন ১৫টি। বাংলাদেশ কংগ্রেসের মিজানুর রহমান (ডাব) ভোট পেয়েছেন ১৮টি। জাতীয় পার্টির হাজী মো. শাহজাহান (লাঙ্গল) ভোট পেয়েছেন ৯৭টি।

করোনা প্রকোপের মধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে এই তিন উপনির্বাচন স্থগিত করার দাবি উঠেছিল। স্বাস্থ্য অধিদফতরও বলেছিল, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে সংক্রমণের ঝুঁকি আছে। কিন্তু তা উপেক্ষা করেই ঢাকা-১০, গাইবান্ধা-৩ ও বাগেরহাট-৪ আসনে উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণে অটল থাকে ইসি। গতকাল তিন নির্বাচনী এলাকায় ভোটার উপস্থিতি হয় নগণ্য সংখ্যক। ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে, ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৫.২৮ ভাগ। কমিশন মনে করছে, বাগেরহাট-৪ ও গাইবান্ধা-৩ আসনে ৪০ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে। সর্বশেষ চট্টগ্রাম-৮ উপনির্বাচনে ২২ ভাগ ভোট পড়েছিল।

ঢাকায় আড়াই ঘণ্টায় ১ ভোট : সকাল ১১টা ১৭ মিনিট। ঢাকা-১০ আসনের শুক্রাবাদ নিউ মডেল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের নারী ভোটকেন্দ্রের ৬ নম্বর কক্ষে ২ ঘণ্টা ১৭ মিনিটে ভোট পড়েছে মাত্র একটি। ১১টা ২৮ মিনিটে ৫ নম্বর কক্ষে ভোট পড়েছে একটি। ৪ নম্বর কক্ষে ভোট পড়েছে দুটি। এটা ছিল মাত্র কয়েকটি ভোট কক্ষের চিত্র। ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে এমনই ভোট পড়েছে বলে জানা গেছে। বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, ভোটার না থাকায় অলস সময় কাটিয়েছেন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা। খোশগল্প করতে দেখা গেছে কর্মকর্তাদের। 

১৫ শতাংশ ভোট না দিয়ে বিপদে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা : ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে হাজারীবাগের মনেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে মোট ভোটের ১৫ শতাংশ দিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই কর্মকর্তা বলছেন, তিনি ভোট না দিয়ে দিলে তাকে কেন্দ্র থেকে বের হতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। সরকারি দলের এক কর্মী এই হুমকি দেন বলে তার অভিযোগ।

অবশেষে ভোট দিলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী : দ্বিতীয় দফায় কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পেরেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। গতকাল বেলা সাড়ে ৩টায় কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদান করেন তিনি। প্রিসাইডিং অফিসার আহসানুল হক জানান, ‘নির্বাচন কমিশন থেকে আপডেট করে এসডি কার্ড নিয়ে আসা হয়েছে। এখন প্রথম চান্সেই ফিঙ্গার প্রিন্ট কাজ করেছে। এর আগে গতকাল সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে লেক সার্কাস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে আসেন এই প্রার্থী। এক ঘণ্টা ১৫ মিনিট অপেক্ষা করেও ভোট দিতে পারেননি। অপেক্ষা করতে করতে পরে ১১টা ৫ মিনিটে তিনি ভোট কেন্দ্র থেকে চলে যান। প্রথমে ছবিযুক্ত তালিকা দেখে তার পরিচয় শনাক্ত করা হয়। কিন্তু ফিঙ্গারপ্রিন্ট না মেলায় জটিলতা সৃষ্টি হয়। পরে বাইরে রাখা প্রার্থীর গাড়ি থেকে ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে আসা হয়। এতেও কাজ হয়নি। মেশিন অফ করে চালু করা হয়। নির্বাচনী কর্মকর্তারা তার কাছে থাকা অন্য একটি কার্ড দিয়েও চেষ্টা করেন। টিস্যু দিয়ে আঙ্গুল মুছে ম্যাচ করানোর চেষ্টা করা হয়। প্রথমবারে ভোট দিতে না পারার বিষয়ে প্রার্থী বলেন, টেকনোলজিতে এমন সমস্যা হয়। গতবার জাতীয় নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ক্ষেত্রেও এমনটি হয়েছিল। এটা হতেই পারে।

জাপা প্রার্থী শাহজাহানের অভিযোগ : ঢাকা-১০ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. শাহজাহান অভিযোগ করে বলেছেন, গতকাল সকাল থেকেই জাপার পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সকাল সাড়ে ৯টায় কুইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজে তিনি ভোট দিতে গেলে সরকারি দলের কর্মীরা তাকে কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়নি। সেখানে তাকে নাজেহাল করা হয়। তার ছেলে সাজ্জাদ এর প্রতিবাদ করলে তাকেও লাঞ্ছিত করা হয়। এ সময় পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকলেও কোনো ভূমিকা নেয়নি। গতকাল দুপুরে শাহজাহানের জিগাতলার বাসভবনে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এমন অভিযোগ করেন তিনি।

গাইবান্ধা-৩ আসনেও ভোটার কম : গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানিয়েছেন কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের কম উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। কেন্দ্রগুলোতে ঘুরে ভোটারদের দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে ভোট দেওয়ার দৃশ্য চোখে পড়েনি। প্রতিটি কেন্দ্রেই হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা হলেও তা ব্যবহার করেছেন খুবই অল্প সংখ্যক মানুষ। এদিকে জোর করে নৌকায় সিল মেরে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন বিএনপি প্রার্থী ডা. মইনুল হাসান সাদিক।  তিনি বলেন, ১৩২টি কেন্দ্রেই নৌকা প্রার্থীর সমর্থকরা জোর করে নৌকা মার্কায় সিল মেরে ভোট নিয়েছেন। পুলিশ ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা সিল মেরে নিতে সহযোগিতা করেছেন। পলাশবাড়ী উপজেলার সুইগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রসহ অনেক কেন্দ্র থেকে বিএনপির পোলিং এজেন্টকে বের করে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী মইনুল রাব্বী চৌধুরী একই অভিযোগ করে বলেন, এটা কোনো ভোটই নয়। এভাবে ভোট হয় না। যেখানে সব কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ নৌকায় সিল মেরে নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রার্থী উম্মে কুলসুম স্মৃতি বলেন, ভোট সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি। তবে বিএনপি প্রার্থী ভোটে নিশ্চিত পরাজয় জেনে ভোট সম্পর্কে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

বাগেরহাটে দুপুরের পর কেন্দ্র ফাঁকা : বাগেরহাট প্রতিনিধি জানিয়েছেন বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) সংসদীয় আসনে সকালে ভোট কেন্দ্রগুলোতে কিছু ভোটারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও দুপুরের পর থেকে কেন্দ্রগুলো ভোটারশূন্য হয়ে পড়ে। তবে, কোনো সহিংসতা ছাড়াই কেন্দ্রগুলোতে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি কেন্দ্রে নির্বাচন কমিশন করোনা সতর্কিত ব্যানারসহ মাত্র একটি সাবান ও একটি হ্যান্ড স্যানিটাইজার ‘হ্যাক্সিসল’ দিলেও তা ছিল অপর্যাপ্ত।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাজন কুমার মিস্ত্রি অভিযোগ করেছেন প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দেওয়া ভয়ভীতির কারণে সাধারণ ভোটারসহ তার কর্মী-সমর্থক ও এজেন্টসহ বিপুল সংখ্যক ভোটার ভোট কেন্দ্রে আসতে পারেনি। অনেক কেন্দ্র থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা তার এজেন্টদের বের করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জাপা প্রার্থী। তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আমিরুল আলম মিলন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, জাপা প্রার্থী তো ভোট কেন্দ্রে এজেন্টই দিতে পারেনি।

সর্বশেষ খবর