রবিবার, ২২ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

খাদ্য সংকট নেই, মজুদ করবেন না : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

খাদ্য সংকট নেই, মজুদ করবেন না : প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কিছু লোক আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে খাবার জিনিস কিনে মজুদ করছেন। আমি খুব পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমাদের খাদ্যদ্রব্যের কোনো সমস্যা নাই। গতকাল সকালে রাজধানীর সিটি কলেজ কেন্দ্রে ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে ভোট প্রদান শেষে তিনি এ কথা বলেন।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে বাইরে ঘোরাঘুরি না করার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাইরে ঘোরাঘুরি না করে যতদূর সম্ভব নিজের ঘরে থাকুন। আর নিজেকে, পরিবার ও সাধারণ মানুষকে সুরক্ষিত রাখেন। আগামীতেও যে সব অনুষ্ঠান আছে, যেখানে লোক সমাগম হয়, সেগুলো আমরা বন্ধ করে দেব। বিশেষ করে ২৬ মার্চ সাভার স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণের কথা আমি আলোচনা করব। আমার মনে হয়, সেটাও আমাদের স্থগিত রাখতে হবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল, ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনের আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ?কে কষ্ট দেবেন না। আতঙ্কিত হয়ে বাজারে চাপ সৃষ্টি করে সীমিত আয়ের মানুষদের কষ্ট চাপিয়ে দেবেন না। খাদ্য নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বিদেশ থেকে আসা প্রবাসীদের ঘোরাঘুরি না করার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, বিদেশ থেকে যারা আসছেন তারা এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াবেন না। কারণ আপনি তো নিজে সংক্রামিত হতে পারেন, নিজের পরিবারকে সংক্রামিত করবেন আবার আরও ১০ জনের মাঝে ছড়াবেন। কাজেই অন্যের জীবনকে এভাবে বিপদগ্রস্ত করা মোটেই সমীচীন নয়। সবাই এ ব্যাপারে সচেতন হবেন এটাই চাই। তিনি বলেন, ‘বিদেশ থেকে যারা আসছেন, তারা অনেক সময় এর বাহক হয়ে থাকেন। যারা বিদেশ থেকে আসছেন তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, তারা নিজের জন্য, নিজের পরিবারের সবার নিরাপত্তার জন্য ১৪টা দিন যাতে কোয়ারেন্টাইনে থাকেন। তার মাধ্যমে যাতে তার পরিবারের সদস্য ও সাধারণ জনগণ কেউ যেন সংক্রামিত না হয়, সে ব্যাপারে তাদের নিজেদের সতর্ক থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে এখন ১৭ লাখ মেট্রিক টন চাল সরকারি গুদামেই মজুদ আছে। সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিক টন গমও আমাদের মজুদ আছে। এ ছাড়াও আমাদের বেসরকারি রাইস মিলারদের কাছেও প্রচুর পরিমাণে খাদ্য মজুদ আছে। বড় কৃষকদের কাছেও ধান, চাল মজুদ আছে। তা ছাড়া আমাদের খেতে ফসল আছে, কৃষক ফসল ফলাচ্ছে। তরকারি, শাক-সবজি আমাদের প্রচুর উৎপাদন হচ্ছে। আমাদের লবণ উৎপাদন প্রচুর হচ্ছে। সেদিন একজনকে দেখলাম তিনি বলেছেন, তিনি ৩০ কেজি লবণ কিনে রেখেছেন। এটা কতদিন খাবেন তা আমি জানি না। সেটা দিয়ে তিনি কী করবেন। আর পিয়াজের একবার দাম বাড়ার ফলে অনেকেই প্রচুর পিয়াজ কিনে মজুদ করেছিলেন। ফলাফল এই হয়েছিল যে পিয়াজগুলো পচে যাওয়াতে তা ফেলে দিতে হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে যার যতটুকু প্রয়োজন সেটুকুই আপনারা সংগ্রহ করেন। এই কারণে বাজারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হলে জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেয়। এতে যার টাকা আছে সে হয়তো কিনতে পারছেন কিন্তু যারা সীমিত আয়ের তাদের জন্য তো এত কেনা সম্ভব না, তাদের কষ্ট হয়ে যায়। অন্যকে এভাবে কষ্ট দেওয়ার অধিকার কারও নাই। সেক্ষেত্রে আমি বলব, আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে এটা নজরদারিতে রাখা উচিত। সাধারণ মানুষের প্রতিও আহ্বান জানাব আপনারা নজরদারিতে রাখেন।

জনগণের উদ্দেশে সরকার প্রধান বলেন, সবাইকে নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। হাঁচি, কাশি আসলে কাপড় দিয়ে নাক ডেকে রাখতে হবে বা কনুই দিয়ে হাতটা ডেকে রাখা অথবা যেখানে সেখানে না যাওয়া।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কীভাবে এই করোনাভাইরাস থেকে আমরা জনগণকে মুক্ত রাখতে পারি, এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া এবং তা প্রচারেরও ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আইইডিসিআর এ ব্যাপরে যথেষ্ট সতর্ক এবং তারা বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন। সে দিক থেকে বলব বাংলাদেশ এখনো মোটামুটি ভালো আছে। তিনি বলেন, আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা কয়েকটি হাসপাতালও সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছি যেখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা নিচ্ছি। ডাক্তার, নার্সসহ ওখানে যারা কর্মকর্তা আছেন, তাদেরও নিরাপত্তার ব্যবস্থা আমরা করছি। এ ছাড়াও বিদেশ থেকে আমদানি আর আমাদের দেশে প্রস্তুত করা মাস্কসহ নিরাপত্তার জন্য সবধরনের উপকরণ অব্যাহতভাবে সংগ্রহ করে যাচ্ছি। আমাদের ইমিগ্রেশনে যে সব পুলিশ কর্মকর্তা ও সেখানে যারা কর্মরত আছেন সবার নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিচ্ছি। সর্বোপরি নিরাপত্তার জন্য যখন যা প্রয়োজন হয় সেটা আমরা করে যাচ্ছি। কাজেই এদিক থেকে আমরা আমাদের যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। গণমাধ্যমের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত সতর্কতা বার্তা দেওয়া হচ্ছে। আমি শুধু আশা করব আমাদের দেশবাসী যাতে এটা মেনে চলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ইতিমধ্যে আপনারা জানেন আমাদের লোক সমাগম হয় এমন কর্মসূচি আমরা বাতিল করে দিয়েছি বা স্থগিত করে দিয়েছি। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর উদযাপন করার জন্য অনেক কর্মসূচি আমরা নিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে লোক সমাগম হবে বলে আমরা সেটাও বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আমরা যে এটাকে কতটা গুরুত্ব দিয়েছি সেটা আপনারা অনুধাবন করতে পারেন। আমরা তো জন্মশতবার্ষিকী একবারই পেলাম। আর তো পাবো না। কিন্তু তারপরও আমরা জনসাধারণের নিরাপত্তা, কল্যাণে আমরা এই কর্মসূচি স্থগিত করে রেডিও, টেলিভিশন আর অনলাইনে প্রচার করেছি। এ ছাড়া আগামীতেও যে সব অনুষ্ঠান আছে, যেখানে লোক সমাগম হয় সেগুলো আমরা বন্ধ করে দেব।

সর্বশেষ খবর