বুধবার, ২৫ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

আরও একজনের মৃত্যু, নতুন আক্রান্ত ৬

নিউইয়র্কে নতুন একজনসহ দেশে-বিদেশে মৃত্যু ১০ বাংলাদেশির স্পেনে আক্রান্ত ৩২, টোলারবাগে আরও তিনজন

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট চারজন কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন। নতুন ছয়জনসহ এ পর্যন্ত দেশে ৩৯ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে এক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। স্পেনে ৩২ বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

দেশ-বিদেশ মিলিয়ে করোনা কেড়ে নিয়েছে ১০ বাংলাদেশির প্রাণ। দেশে বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ২৭ হাজার ১৮০ জন। এ ছাড়া স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর টোলারবাগে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত প্রথম ব্যক্তির মেয়ে, জামাই এবং তাদের গৃহকর্মীও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। নতুন আক্রান্ত ছয়জনের মধ্যে তারা তিনজন। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে অনলাইন ব্রিফিংয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘আক্রান্ত ছয়জনের মধ্যে একজন সৌদি আরব থেকে ওমরাহ করে এসেছেন। চারজন আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এসেছিলেন এবং বাকি একজনের বিষয়ে আমরা বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করছি।’ কক্সবাজারে একজন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার বিষয়ে জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন বলেন, জেলার চকরিয়া উপজেলার খুঁটাখালীতে ষাটোর্ধ্ব ওই নারী ১৩ মার্চ সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরেন। তিনি কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছিল। গতকাল সকালে রিপোর্ট হাতে পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, রিপোর্ট পাওয়ার পরপরই তাকে চিকিৎসা প্রদানকারী চিকিৎসক ও নার্সদের কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। রোগীকে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল থেকে চট্টগ্রামের বিশেষ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে এই নারীর গ্রামের বাড়ি এবং আশপাশ এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। ওই নারী সৌদি আরব থেকে এসে চট্টগ্রামের যে বাড়িটিতে ছিলেন, ওই বাড়িটিও লকডাউন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ২৭ হাজার ১৮০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় স্বাস্থ্য বাতায়নে কল এসেছে ৪২ হাজার ৫৭৮টি, ৩৩৩-এ কল এসেছে ২ হাজার ৮৪৩টি, আইইডিসিআরে কল এসেছে ২ হাজার ৭৩০টি। গত ২৪ ঘণ্টায় ৯২টি নমুনা নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার জন্য এ পর্যন্ত নমুনা নেওয়া হয়েছে মোট ৭১২টি। আইসোলেশনে আছেন ৪০ জন। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কুইন্স হাসপাতালে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে এক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে শুধু নিউইয়র্কেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া বাংলাদেশির সংখ্যা দাঁড়াল তিনজনে। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এই বাংলাদেশি নারীর মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছেন। সব মিলিয়ে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ১০ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে দেশে মারা গেছেন চারজন এবং বাকি ছয়জন মারা গেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। তবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিধিনিষেধের কারণে বিদেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সঠিক সংখ্যা জানা যাচ্ছে না। এর আগে সোমবার জানা যায়, গাম্বিয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক বাংলাদেশি ইমাম মৃত্যুবরণ করেছেন। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইতালিতে অন্তত চারজন বাংলাদেশির মৃত্যুর তথ্য জানা যায়। তাদের মধ্যে গেল সপ্তাহে যুক্তরাজ্যে মারা যাওয়া মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইতালির নাগরিক। স্পেনের বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত স্পেনে ৩২ জন বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। স্পেনে বর্তমানে বৈধ এবং অবৈধ বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার।

এদিকে দেশব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে ‘আইসোলেশনে’র আওতায় নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ক্যাম্পাসে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এদিকে কক্সবাজারে প্রথম একজন কভিড-১৯ আক্রান্ত করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। আক্রান্ত রোগী একজন বয়স্ক নারী। তিনি কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী এলাকার বাসিন্দা। গত ১৫ মার্চ তিনি সৌদি আরব থেকে ওমরা হজ করে এসেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরের এক চিকিৎসককে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। গত দুই দিন ধরে তিনি জ্বর, সর্দি, কাশি ও গলাব্যথায় ভুগছেন।

অন্যদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানানো হয়েছিল সন্ধ্যার পর সব মার্কেট বন্ধ করে দেওয়ার। একই আহ্বান জানিয়েছিল সিটি করপোরেশনও। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সন্ধ্যার পর নয়, টানা পাঁচ দিনের জন্য সিলেটের সব মার্কেট বন্ধ করে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে সব ধরনের সাপ্তাহিক হাটবাজার বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

পার্সোনাল প্রকেটটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) না থাকায় করোনা আক্রান্তের ভয়ে কর্মবিরতিতে থাকা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেই ১৭৫ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক কর্মস্থলে ফিরেছেন।

হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন হবিগঞ্জে ৮৭৪ জন, শরীয়তপুরে ৩৭৭ জন, টাঙ্গাইলে ৭২০ জন, কিশোরগঞ্জে ৩৯৪ জন, বগুড়ায় ৫৫৪ জন, কুড়িগ্রামে ১৭৬ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৭৬৯ জন, ঝালকাঠিতে ১২৪ জন, দিনাজপুরে ১৬৯ জন, এ জেলার এক মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ও এক শিশুকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। সিলেটে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৩২৮ জন, এ পর্যন্ত সিলেটে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ২ হাজার ১৭৬ জন। এ ছাড়া গাইবান্ধায় হবিবুল্লাহপুর গ্রামের ২৪ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এদিকে হঠাৎ করে মাদারীপুরে ক্লিনিকগুলোতে নিয়মিত চিকিৎসাও বন্ধ রয়েছে। প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ না থাকায় করোনাভাইরাসের আতঙ্কে নোয়াখালীতে ডাক্তার, নার্সসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দায়িত্বরতরা চিকিৎসায় অনীহা প্রকাশ করছে। বিপাকে পড়েছে সাধারণ রোগীরা। যশোরে ফেরা প্রবাসীদের বাড়িতে বাড়িতে গতকালও লাল পতাকা টাঙানোর কাজ চলেছে। রাজশাহী নগরীর দড়িখরবোনা এলাকার একটি বাড়িতে স্ট্রিকার লাগিয়ে দিয়েছে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ।

সর্বশেষ খবর