রবিবার, ২৯ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

গুজব ছড়ালেই গ্রেফতার

জিন্নাতুন নূর

করোনাভাইরাস নিয়ে যে কোনো ধরনের গুজবের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে সরকার। গুজব ছড়ালেই আইনি ব্যবস্থা নিয়ে গ্রেফতার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে কাজও শুরু করেছে বিভিন্ন সংস্থা। গুজব সৃষ্টিকারী এক চিকিৎসকসহ একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। সত্যতা যাচাই ছাড়া কোনো তথ্য সামাজিক যোগাযোগসহ অন্যান্য মাধ্যমে প্রচার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক, ইসলামী চিন্তাবিদ ও চিকিৎসকরা বলছেন, যখন কোনো খবর আসবে প্রথমেই তা যাচাই করতে হবে। যাচাই করা হলো ইসলামের দৃষ্টিতে ফরজ। কোন কথাটা যাচাই করতে হবে আর কোনটা হবে না তা নিজে সিদ্ধান্ত না নিয়ে কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন মনে করলে তা প্রচার করবে। আর গুজবের আশ্রয় নিয়ে গুজব রটনাকারীরা অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। এ মুহূর্তে করোনাভাইরাস নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় কোনোভাবেই যাতে গুজব না ছড়ায় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কেউ গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করলে তা প্রতিরোধ করতে হবে।

জানা যায়, করোনাভাইরাস নিয়ে ছড়িয়ে পড়া আতঙ্কের আগুনে ঘি ঢালার কাজ করছে এ ভাইরাসটিকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন গুজব। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পেছনে অদ্ভুত সব কারণ যেমন আছে তেমনি এ ভাইরাসের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন অবাস্তব চিকিৎসা পদ্ধতির কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ কেউ বলছে রসুন, লবঙ্গ, আদাজল খেলে করোনাভাইরাস ভালো হয়। আবার কেউ থানকুনি পাতা চিবিয়ে খাওয়ার কথা বলছে। নাটোরের বাগাতিপাড়ায় গুজব ছড়ানো হয়- করোনার কারণে ফ্রিজে কাঁচা মাছ, মাংস রাখলে বাড়ি গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ফ্রিজ ভেঙে দেবে। গাইবান্ধার মাঠের হাটে মাইকিং করে গুজব ছড়ানো হয়েছে- করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে কালিজিরা, আদা ও গোলমরিচ বেটে খেতে হবে। রংপুর ও দিনাজপুরে গুজব ছড়ায়- লবঙ্গ, সাদা এলাচ, আদা পানিতে সিদ্ধ করে খেলে মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবে না। করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ছড়ানো হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়ও। মসজিদে মসজিদে আজান দেওয়া, এক ছেলে সন্তানের মায়েদের নারকেল গাছে পানি দেওয়ার মতো গুজব ছড়ানো হয়। জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরাও করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, কিছু অতি উৎসাহী মানুষ করোনাভাইরাস নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে। শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে ইসলাম বলে আমাদের আতঙ্কিত না হতে। আতঙ্কের কোনো প্রশ্ন নেই। একজন মুসলমান বিশ্বাস করে যা হওয়ার তা আল্লাহ করবেন। অতিরিক্ত আতঙ্কিত হয়ে একজনের লাভটাই বা কী! এজন্য আমি বলব আতঙ্কিত না হয়ে আমাদের আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের সতর্কতাকে অবলম্বন কর’। এজন্য একজনের পক্ষে যতটুকু সতর্কতা অবলম্বন করা তা করতে হবে, এটিই এক ধরনের নির্দেশ। তৃতীয়ত, এসব পরিস্থিতিতে অনেক ধরনের গুজব ছড়াতে থাকে। গুজবের বিষয়ে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, যখন কোনো খবর আসবে প্রথমেই তা যাচাই করতে হবে। যাচাই করা হলো ইসলামের দৃষ্টিতে ফরজ। যাচাই না করে কোনো কথা বলবে না। কোন কথাটা যাচাই করতে হবে আর কোনটা হবে না তা নিজে সিদ্ধান্ত না নিয়ে কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন মনে করলে তা প্রচার করবে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল আবদুর রশিদ (অব.) বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যারা ফেসবুকে গুজব ছড়ায় তাদের পরিচয় যদি শনাক্ত করা যায় তাহলে আমরা দেখব যে এদের রাজনৈতিক পরিচয় অনেকটা এক। আমরা বাংলাদেশে দেখছি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যারা গুজব ছড়াচ্ছে তারা ইসলামিস্ট। আবার শাসক দলের বাইরে যারা আছে তাদের অনেকেই গুজব ছড়াচ্ছে। এই দলের লোকেদের ধারণা পৃথিবীর অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনার সংক্রমণ ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছাবে। আর একে ব্যবহার করে তারা অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে বাংলাদেশের অবস্থা এবং আমাদের সীমিত সম্পদ ও পদক্ষেপের মধ্যেও করোনা পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রিত রয়েছে। সম্প্রতি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক করোনায় ৫ লাখ মানুষ মারা যাবে এমন একটি গবেষণা প্রচার করেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে- এই যে ৫ লাখ মানুষের হিসাব তিনি দিয়েছেন এটি কীসের ওপর ভিত্তি করে দিয়েছেন? এগুলো মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি করছে। আবার যেহেতু এখনো করোনাভাইরাস প্রতিরোধের কোনো প্রতিষেধক তৈরি হয়নি এজন্য কেউ কেউ বলছেন এটি আল্লাহর গজব। আবার যারা দায়িত্বশীল নাগরিক তারা গুজব ছড়াচ্ছেন না বরং মানুষকে আশ্বস্ত করার জন্য সতর্কতামূলক পরামর্শ দিচ্ছেন।

জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার খবরে আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে এখন সচেতনতা বৃদ্ধিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সচেতনতা তৈরিতে সরকারকে একা কাজ করলে চলবে না। এজন্য সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি বলেন, সামাজিকভাবে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন সভা, সেমিনার ও র‌্যালির মাধ্যমে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। এ মুহূর্তে করোনাভাইরাস নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় কোনোভাবেই যাতে গুজব না ছড়ায় সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে। কেউ গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করলে তা প্রতিরোধ করতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর