শুক্রবার, ৩ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

দেশে আরও দুজন শনাক্ত

এক হাজার নমুনা পরীক্ষা আজকের মধ্যে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে আরও দুজন শনাক্ত

দেশে আরও দুজনের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এ পর্যন্ত দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৫৬ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ২৬ জন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ছয়জন। দেশে মৃতের সংখ্যা কত হতে পারে- এমন অনুমান করার সময় এখনো আসেনি বলে মন্তব্য করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) শাখার পরিচালক হাবিবুর রহমান। ঢাকার বাইরে রাজশাহী ও রংপুরে করোনা টেস্ট শুরু হয়েছে। বরগুনায় করোনা আক্রান্ত সন্দেহে স্কুলপড়ুয়া এক ছাত্র ও তার বাবার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। শেরপুরের নকলা ও কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে আক্রান্ত সন্দেহে বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। বগুড়ায় আইসোলেশনে মারা যাওয়া শিশুটির পুলিশ প্রহরায় দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শ্বাসকষ্ট নিয়ে লক্ষ্মীপুরে  একজন বৃদ্ধ মারা গেছেন। তার মৃত্যুর পর ওই বাড়ির ১৫টি পরিবারকে লকডাউন করা হয়েছে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস শাখার পরিচালক হাবিবুর রহমান অনলাইন ব্রিফিংয়ে দেশে নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরেন। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহিদুল্লাহও ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।

হাবিবুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪১ জনের নমুনা সংগ্রহ করে নতুন করে দুজনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। নতুন আক্রান্ত দুজনই পুরুষ; একজনের বয়স ৩০-৪০ বছরের মধ্যে, আরেকজনের ৭০-৮০ এর মধ্যে। তারা কীভাবে সংক্রমিত হলেন জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখনো তাদের কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং করতে পারিনি। ইনভেস্টিগেশন করছি।’

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও পাঁচজনকে আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন আইসোলেশনে আছেন ৭৮ জন। সারা দেশে এখন কোয়ারেন্টাইনে আছেন ১৬ হাজার ৭০০ জন। বিপুলসংখ্যক প্রবাসী দেশে ফিরলেও অনেকের বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না কেন- একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘যে সংখ্যায় এসেছে তাদের সবাই কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। এ সংখ্যা পর্যায়ক্রমে কমে যাচ্ছে। যারা নতুন আসছেন, তাদের কোয়ারেন্টাইনে নিচ্ছি। যাদের ১৪ দিন হয়ে গেছে, তাদের কোয়ারেন্টাইনমুক্ত করছি।’ স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস শাখার পরিচালক জানান, সম্ভাব্য আক্রান্তদের নমুনা পরীক্ষা ও আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ১২ হাজার ৪৪৮ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৭৭০ জনের চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু করেছে। সারা দেশে চিকিৎসকদের জন্য ৩ লাখ ৫৭ হাজার ২৫০টি পারসোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) বিতরণ করা হয়েছে। এমআইএস পরিচালক বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়েছি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক দেশের সব বিভাগের পরিচালকদের জানিয়েছেন, প্রতিটি উপজেলা থেকে অন্তত দুটি করে নমুনা পাঠাতে হবে। আজ অন্তত ১ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা হবে।’ ঢাকায় মহাখালীর জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (আইপিএইচ), আইইডিসিআর ছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, আইসিডিডিআরবি, আর্মড ফোর্সেস ইনস্টিটিউট অব প্যাথলজি, শিশু হাসপাতাল ও চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে শুরু হয়েছে কভিড-১৯-এর পিসিআর টেস্ট। ঢাকার বাইরে ময়মনসিংহ মেডিকেল, রংপুর মেডিকেল ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টেস্টিং ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজে (রমেক) করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। দুজনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজে (রামেক) স্থাপিত ল্যাবে দ্বিতীয় দিনে তিনজনের নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। বগুড়ার একজন ও রাজশাহীর দুজনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয় বলে জানিয়েছেন ইনচার্জ ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান ডা. সাবেরা গুল নাহার। বরগুনার পাথরঘাটা থেকে স্কুলপড়ুয়া ছাত্র ও তার বাবা সরকারি কর্মকর্তার নমুনা সংগ্রহ করে করোনা টেস্টের জন্য পাঠানো হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আবুল ফাত্তাহ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নারায়ণগঞ্জে প্রথম মৃত্যু, এলাকা লকডাউন : নারায়ণগঞ্জ জেলায় প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক নারী (৫০) মারা গেছেন। ওই নারীর মৃত্যুর পর নমুনা সংগ্রহ করলে রিপোর্টে পজেটিভ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় বন্দর উপজেলার একটি এলাকা লকডাউন করেছে প্রশাসন। জানা গেছে, ৩১ মার্চ বন্দরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের রসুলবাগ এলাকার বাসিন্দা ওই নারী ঢাকার কুর্মিটোলা হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সেখান থেকে আইইডিসিআর তার নমুনা সংগ্রহ করে। গতকাল রিপোর্টটি পজেটিভ আসে।

এই ঘটনায় গতকাল রাতে বন্দর উপজেলা প্রশাসন থেকে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের রসুলবাগ এলাকাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। লকডাউন ঘোষণাকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. ইমতিয়াজ আহম্মেদ, উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শুল্কা সরকার, নারায়ণগঞ্জ ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা ও সদর উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম, আইইডিসিআর-এর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর