শনিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

সর্দি কাশি জ্বর নিয়ে আরও তিনজনের মৃত্যু

শতাধিক বাড়ি লকডাউন

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক বাড়ছেই। দেশে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন পাঁচজন। পাশাপাশি এর মধ্যে সর্দি, কাশি ও জ্বর নিয়ে মারা গেছেন আরও তিনজন।

জানা গেছে, মেহেরপুর সদর উপজেলার কোলাগ্রামে শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে এসে সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। রাতেই ওই বাড়িতে লাল পতাকা টাঙিয়ে দেওয়াসহ আশপাশের আরও কয়েকটি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করে মেহেরপুর থানা পুলিশ। এ ছাড়া মাগুরার মহম্মদপুরে করোনা উপসর্গ নিয়ে বাকি মিয়া (৪৮) নামে এক কৃষক গতকাল সকালে মারা গেছেন। স্থানীয় প্রশাসন মৃতের বাড়ি ও সংস্পর্শে আসা নিকটাত্মীয়সহ প্রতিবেশীদের কয়েকটি বাড়ি লকডাউন করেছে। মৃতের নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বাসিন্দা এক পোশাকশ্রমিক সর্দি, কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত বুধবার গাজীপুরের একটি হাসপাতালে মারা যান। বৃহস্পতিবার তার লাশ বাড়িতে নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে দাফন করা হয়। এরপর লাশ আনা ও দাফনের কাজে যুক্ত লোকজনের সাতটি পরিবারের সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, এ পরিস্থিতিতে সরকারের নির্দেশে সারা দেশে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কারও মধ্যে করোনা উপসর্গের খোঁজ মিললেই তাকে আইসোলেশনে নিয়ে তার নমুনা পাঠানো হচ্ছে পরীক্ষাগারে। করোনামুক্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত লকডাউন করা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট বাড়ি বা এলাকা। এ ছাড়া কারও মধ্যে করোনা উপসর্গ দেখা দিলেই তৎক্ষণাৎ তা জানানোর জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। শতাধিক বাড়ি লকডাউন : গতকালও করোনা সন্দেহে কুমিল্লা, বগুড়া, মাগুরা, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক বাড়ি লকডাউন করে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে জানা যায়, কুমিল্লার হোমনা উপজেলার ঝগড়ার চর ও খোদেদাইদপুর গ্রামে করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে দুই ব্যক্তির বাড়ি লকডাউন করেছে প্রশাসন। ওই দুই বাড়িতে মানুষের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা এবং অন্যদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। সন্দেহভাজনদের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে এবং একজনকে জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুছ ছালাম জানান, দুজনের একজন গত চার দিন আগে ঢাকা থেকে বাড়ি আসেন। তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করেন। অন্যজন আইনজীবী। দুজনেরই করোনার উপসর্গ রয়েছে।

সাতক্ষীরায় করোনা উপসর্গ নিয়ে এক কলেজছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় ওই ছাত্রের বাড়িসহ আশপাশের পাঁচটি বাড়ি লকডাউন করেছে প্রশাসন। গতকাল ভোরে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে হোসেন আলী নামে ওই ছাত্র নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। তার বাড়ি সদর উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামে। সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন শাফায়াত জানান, নিহত কলেজছাত্রের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। সাতক্ষীরা সদর ইউএনও দেবাশীষ চৌধুরি বলেন, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত লকডাউন ওই পাঁচ বাড়ির ১৮ সদস্য কেউ বাইরে আসতে পারবেন না। এলাকাবাসীকেও বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে না আসতে সতর্ক করা হয়েছে। বগুড়া করোনা আইসোলেশন কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ধুনট উপজেলার নিমগাছী ইউনিয়নের শিয়ালী গ্রামের এক ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষার জন্য গত বুধবার রাজশাহী ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে তার বাড়িসহ তিনটি বাড়ি লকডাউন করে উপজেলা প্রশাসন। এ ব্যাপারে গতকাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিয়া সুলতানা বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে লকডাউন করা হয়েছে। এসব পরিবারে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত হবে। জানা যায়, ঢাকায় গার্মেন্টে চাকরি করা ৪৫ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি ২৪ মার্চ সর্দি, জ্বর ও কাশি নিয়ে গ্রামের বাড়ি যান। ২৯ মার্চ চিকিৎসকের কাছে গেলে তাকে আইসোলেশন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এদিকে করোনা সন্দেহে বগুড়ার কাহালু পৌর শহরে টিঅ্যান্ডটি অফিসসংলগ্ন আরেকটি বাড়ি লকডাউন করে খাদ্য সরবরাহ করছে উপজেলা প্রশাসন। করোনা উপসর্গ নিয়ে এক যুবক ২৬ মার্চ কুমিল্লার কর্মস্থল থেকে বগুড়ায় বাবার ওই ভাড়াবাড়িতে যান। তাকে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে করোনা আক্রান্ত হয়ে এক নারীর মৃত্যুতে নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলার রসূলবাগের শতাধিক বাড়ি বৃহস্পতিবার রাত থেকে ‘লকডাউন’ করা হয়েছে। শ্বাসকষ্ট ও জ্বর নিয়ে মৃত্যুবরণ করা ওই নারীর লাশ স্বজনরা স্বাভাবিক মৃত্যু মনে করে পারিবারিকভাবে দাফন করলেও তার নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর। বৃহস্পতিবার দুপুরে তার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কথা নিশ্চিত করে আইইডিসিআর। জানা যায়, ২৯ মার্চ শ্বাসকষ্ট, জ্বরসহ ওই নারীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে তাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে স্বজনরা তাকে কুর্মিটোলায় না এনে বাড়ি নিয়ে যান। পরদিন অবস্থার অবনতি ঘটলে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী পৌরসভার এক প্রবাসীর বাড়ি লকডাউন করেছে উপজেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে তিনিসহ ওই পরিবারের একাধিক সদস্য জ্বর, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত থাকায় ওই পরিবারের নয় সদস্যকে স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের দ্বিতীয় তলায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

এদিকে করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি এক রোগী গত বৃহস্পতিবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গেছেন। ফলে তার নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা নিতে আসা এক রিকশাচালককে (৪৫) গতকাল আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে। বাগেরহাটে কর্মরত এক পুলিশ সদস্যকে করোনা সন্দেহে জেলা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভাওরাইদ থেকে সর্দি, শ্বাসকষ্ট, গলাব্যথা, পাতলা পায়খানাসহ এক অজ্ঞাত নারীকে উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে মারা যাওয়া রফিকুল ইসলামের নমুনা পরীক্ষায় করোনার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর