রবিবার, ৫ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

দিল্লির তাবলিগের বাংলাদেশি মুসল্লিরা সংকটে, উদ্বেগ

আক্রান্তরা হাসপাতালে

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যেই দিল্লির তাবলিগ জামাতে যোগ দেওয়া ৯৬০ জন বিদেশি মুসল্লিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে ভারত। এ তালিকায় রয়েছেন ১১০ জন বাংলাদেশি। অবশ্য তালিকার অর্ধেকই বাংলাদেশি ও ইন্দোনেশিয়ান। সবচেয়ে বেশি ৩৯৭ জন ইন্দোনেশিয়ার, এরপর ১১০ জন বাংলাদেশি, ৭৭ জন কিরগিজস্তানের, ৭৫ জন মাালয়েশিয়ার, ৬৫ জন থাইল্যান্ডের ও ৬৩ জন মিয়ানমারের, শ্রীলঙ্কার ৩৩ জন, ইরানে ২৪ জন, ভিয়েতনামের ১২ জন, ফিলিপাইনের ১০ জন, কাজাখস্তানের ১৪ জন, চীনের ৯ জন, যুক্তরাজ্যর ৯ জন, ফ্রান্সের ৩ জন, তাঞ্জানিয়ার ৮ জন, আলজেরিয়ার ৭ জন, দক্ষিণ আফ্রিকার ৪ জন, যুক্তরাষ্ট্রের ৪ জন এবং তিনজন ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর নাগরিক আছেন। ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর, দিল্লির নিজামুদ্দিনের তাবলিগ জামাতে যোগ দেওয়া বাংলাদেশিদের নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। হরিয়ানার পালওয়ালে উদ্ধার করা ১০ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে পুলিশ ভিসা নীতি ভঙ্গের অভিযোগে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছে বলে স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে। এই ১০ জনের মধ্যে তিনজনের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৪৯৩ জন বাংলাদেশি তাবলিগে যোগ দিয়েছিলেন। তাদের অধিকাংশই বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছেন। বাংলাদেশিসহ বিদেশিদের চিহ্নিত করতে তল্লাশি অভিযান চলছে। তবে হরিয়ানায় তিনজন ছাড়া বাকি কতজন বাংলাদেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তার কোনো তালিকা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে নিজামুদ্দিনের তাবলিগের সদর দফতর থেকে উদ্ধার করা বিদেশিদের মধ্যে ৭৩ জন বাংলাদেশির সন্ধান পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও দিল্লির ছয়টি মসজিদে আশ্রয় নেওয়া আরও ২১ জন বাংলাদেশির খোঁজ পাওয়া গেছে। এদের সবাইকেই কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। পশ্চিমবঙ্গে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৯ জন বাংলাদেশিকে চিহ্নিত করে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এরা সবাই তাবলিগে যোগ দিয়েছিলেন। এদিকে মুম্বাইয়ের মুম্ব্রার কৌসাতে একটি মসজিদ থেকে ১৩ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের বাধোহিতে কয়েকটি মসজিদ থেকে ১১ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করে করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে তাদের শরীরে কোনো সংক্রমণ ধরা পড়েনি বলে সেখানকার মুখ্য মেডিকেল অফিসার জানিয়েছেন। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, ভারতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। গত তিন দিনে ১ হাজার ২৫১ জন থেকে বেড়ে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাফে ২ হাজার ৫৪৭ জনে দাঁড়িয়েছে। এ পর্যন্ত প্রাণঘাতী এ মহামারীতে ভারতে মারা গেছে ৬৮ জন। সংক্রমিত মোট রোগীর ২৫ ভাগই গত মাসে দিল্লির মারকাজ নিজামুদ্দিন মসজিদে অনুষ্ঠিত তাবলিগ জামাত থেকে ছড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে আরও ৪৭৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ২৪৭ জনই তাবলিগ জামাতের। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৬৭ দেশের ওই ৯৬০ জনের ভারতীয় ভিসা বাতিল করা হয়েছে। তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর পাশাপাশি আইনিব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভবিষ্যতে তাবলিগ জামাতে অংশগ্রহণ করতে চেয়ে ভিসার আবেদন করলে তাদের আর ভিসা দেওয়া হবে না বলেও জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্রের বরাতে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকা জানিয়েছে, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, মাালয়েশিয়া, কিরগিজস্তান, চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ২ হাজার বিদেশি মুসল্লি যোগ দিয়েছিলেন তাবলিগ জামাতে। সেসব প্রতিনিধি এবং তাদের সংস্পর্শে আসা মিলিয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট ৫৫০ জনের কভিড-১৯ পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। এর মধ্যে ৯টি দেশের কালো তালিকাভুক্ত ৪০০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল হিসেবে চিহ্নিত চীন থেকে আসা ছয় জনের দেহেও এ ভাইরাস পাওয়া গেছে। আরও অনেকে ভর্তি দিল্লিসহ দেশের ২৩টি রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে। কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন অনেকে। এই আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। সুস্থ হয়ে উঠলে তাদের কোয়ারেন্টাইন সেন্টার থেকে ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের অফিসের পক্ষ থেকে টুইটারে বলা হয়েছে, ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে তাবলিগ জামাতের কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৯৬০ বিদেশি প্রতিনিধির ভিসা বাতিল করা হয়েছে। ভিসা বাতিলের পর তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনিব্যবস্থা নেওয়া হবে। সবাইকে নিজের দেশে ফেরত পাঠানো হবে। ফরেনার্স অ্যাক্টের ১৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী ভিসার অপব্যবহারের অভিযোগ আনা হবে। কারণ ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে কোনো ধর্মীয় কার্যকলাপে যোগ দেওয়া যায় না। তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য রাজ্যগুলোকে নির্দেশ পাঠানো হবে। এ ছাড়া বিপর্যয় মোকাবিলা আইনেও অভিযোগ করা হবে কালো তালিকাভুক্তদের বিরুদ্ধে।

সর্বশেষ খবর