সোমবার, ৬ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্যাকেজ

দুর্নীতি অনিয়ম সহ্য করব না : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্যাকেজ

করোনাভাইরাসকান্ডে দেশের অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব উত্তরণে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকালে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন।

প্যাকেজ ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই যেন সততার সঙ্গে কাজ করেন। এই সুযোগ নিয়ে কেউ যেন কোনো রকমের দুর্নীতি, অনিয়ম বা অপব্যবহার না করেন। এটা আমার সোজা কথা। আমরা যদি সঠিকভাবে কাজ করতে পারি তাহলে কোনো পর্যায়ের মানুষই অসুবিধায় পড়বেন না।’ 

বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেশ কিছু ফেসবুক পেইজে এই ব্যতিক্রমী সংবাদ সম্মেলন সরাসরি সম্প্রচার ও প্রচার করা হয়। সংবাদ সম্মেলন বলা হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে সেখানে কোনো সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন না।

গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি ছাড়া সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের বিষয়টি একাধিকবার তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। করোনা পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের প্রতি শুভ কামনা রেখে শেখ হাসিনা বলেন, সংবাদ সম্মেলন করলে আমরা সাংবাদিকদের ডাকি। আমরা আজকে ব্যতিক্রমধর্মী ব্যবস্থা নিয়েছি এ কারণে যে, আপনারা (সাংবাদিকরা) ঘোরাঘুরি করতে গিয়ে যেন কোনোভাবে (করোনাভাইরাসে) সংক্রমিত না হন। আপনারা পরে একদিন এসে মন খুলে প্রশ্ন করবেন।

সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির প্রধানমন্ত্রীর প্যাকেজ সম্পর্কে নিজস্ব অভিমত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি ইতিপূর্বে রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন/ভাতা পরিশোধ করার জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি আপৎকালীন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলাম। এটিসহ মোট আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের পরিমাণ হবে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, যা জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৫২ শতাংশ। দেশবাসীর যাতে কষ্ট লাঘব হয় এবং তারা ব্যবসা-বাণিজ্য যথাযথভাবে চালিয়ে যেতে পারেন সে জন্যই সরকারের এসব প্যাকেজ। ঘোষিত আর্থিক সহায়তার প্যাকেজসমূহ দ্রুত বাস্তবায়িত হলে আমাদের অর্থনীতি পুনরায় ঘুরে দাঁড়াবে এবং আমরা কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কাছাকাছি পৌঁছতে পারব। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে আশ্চর্য এক সহনশীল ক্ষমতা এবং ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা। ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে যে জাতি মাত্র ৯ মাসে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে, সে জাতিকে কোনো কিছুই দাবিয়ে রাখতে পারবে না।   

প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ-১ : ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদান : ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্পসুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রদানের লক্ষ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ সুবিধা প্রণয়ন করা হবে। ব্যাংক-ক্লায়েন্ট রিলেশনসের ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সংশ্লিষ্ট শিল্প/ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ঋণ প্রদান করবে। এ ঋণ সুবিধার সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। প্রদত্ত ঋণের সুদের অর্ধেক অর্থাৎ ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ ঋণগ্রহীতা শিল্প/ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে এবং অবশিষ্ট ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে প্রদান করবে।

প্যাকেজ-২ : ক্ষুদ্র (কুটির শিল্পসহ) ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদান : ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রদানের লক্ষ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ সুবিধা প্রণয়ন করা হবে। ব্যাংক-ক্লায়েন্ট রিলেশনসের ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ঋণ প্রদান করবে। এ ঋণ সুবিধার সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। প্রদত্ত ঋণের ৪ শতাংশ সুদ ঋণগ্রহীতা শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে এবং অবশিষ্ট ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে প্রদান করবে।

প্যাকেজ-৩ : বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবর্তিত ইডিএফ (Export Development Fund)-এর সুবিধা বাড়ানো : Back-to-back LC এর আওতায় কাঁচামাল আমদানি সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইডিএফের বর্তমান আকার ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে। ফলে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অতিরিক্ত ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ইডিএফ তহবিলে যুক্ত হবে। ইডিএফের বর্তমান সুদের হার LIBOR  + ১ দশমিক ৫ শতাংশ (যা প্রকৃতপক্ষে ২ দশমিক ৭৩%) থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হবে। প্যাকেজ-৪ : প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিম নামে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ হাজার কোটি টাকার একটি নতুন ঋণ সুবিধা চালু করবে। এ ঋণ সুবিধার সুদের হার হবে ৭ শতাংশ। প্যাকেজ-৫ : এর আগে রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন/ভাতা পরিশোধ করার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি আপৎকালীন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

সবাইকে দেশীয় পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সম্ভাব্য এই বৈশ্বিক ও দেশীয় অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য রপ্তানি খাতের পাশাপাশি দেশীয় পণ্যের প্রতি আমাদের বিশেষ নজর দিতে হবে। এক্ষেত্রে আমি সবাইকে দেশীয় পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’

সব শ্রেণির মানুষের জন্য ৪ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাৎক্ষণিক, স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদি এ তিন পর্যায়ে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চারটি কার্যক্রম নিয়ে এ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে সরকার। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত চারটি কার্যক্রম হলো : সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করা : সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে ‘কর্মসৃজনকে’ মূলত প্রাধান্য দেওয়া হবে। বিদেশ ভ্রমণ এবং বিলাসী ব্যয় নিরুৎসাহিত করা হবে। আমাদের ঋণের স্থিতি-জিডিপির অনুপাত অত্যন্ত কম (৩৪%) বিধায় অধিকতর সরকারি ব্যয় সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করবে না। আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ :  ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে কতিপয় ঋণ সুবিধা প্রবর্তন করা হবে। অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পুনরুজ্জীবিত করা, শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজে বহাল রাখা এবং উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অক্ষুণœ রাখাই হলো আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের মূল উদ্দেশ্য।

সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি : দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগণ, দিনমজুর এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত জনসাধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণে বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি করা হবে। এর আওতায় উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমগুলো হলো : বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ; ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রয়; লক্ষ্যভিত্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ; ‘বয়স্ক ভাতা’ এবং ‘বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের জন্য ভাতা’ কর্মসূচির আওতা সর্বাধিক দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০টি উপজেলায় শতভাগে উন্নীত করা; এবং  জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত অন্যতম কার্যক্রম গৃহহীন মানুষের জন্য গৃহনির্মাণ কর্মসূচি দ্রুত বাস্তবায়ন করা ইত্যাদি। নভেল করোনাভাইরাস মহামারীতে দেশের অর্থনীতির ওপর সম্ভাব্য যেসব বিরূপ প্রভাব পড়ছে, তার একটি খতিয়ান প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরে বলেন, ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে লকডাউনের ফলে স্বল্পআয়ের মানুষ যেমন সংকটে পড়েছে, তেমনি সরকারের রাজস্ব সংগ্রহ ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাও হুমকির মুখে পড়েছে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের দ্রুত বিস্তার, স্বাস্থ্য পরিষেবার ওপর সৃষ্ট বিপুল চাপ এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে নজিরবিহীন লকডাউন ও যোগাযোগ স্থবিরতা বিশ্ব অর্থনীতির ওপর ইতিমধ্যেই ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। শিল্প উৎপাদন, রপ্তানি বাণিজ্য, সেবা খাত বিশেষত পর্যটন, এভিয়েশন ও হসপিটালিটি খাত, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ, কর্মসংস্থান ইত্যাদি ক্ষেত্রে ধস নেমেছে। শুধু সরবরাহ ক্ষেত্রেই নয়, চাহিদার ক্ষেত্রেও ভোগ ও বিনিয়োগ চাহিদা হ্রাস পেতে শুরু করেছে। আইএমএফ ইতিমধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা শুরু হয়েছে বলে ঘোষণা করেছে। পুঁজিবাজারে বিশ্বব্যাপী বিগত কয়েক সপ্তাহে ২৮-৩৪ শতাংশ দরপতন ঘটেছে।

OECD (Organisation for Economic Co-operation and Development)-এর হিসাব মতে, মন্দা প্রলম্বিত হলে বিশ্ব¦ প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের ফলে বিশ্বব্যাপী বিপুল জনগোষ্ঠী কর্মহীন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মন্দা দীর্ঘস্থায়ী হলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব এই প্রথম এমন মহামন্দা  পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর কী ধরনের বা কতটুকু নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, তা এখনো নির্দিষ্ট করে বলার সময় আসেনি। তবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব তুলে ধরছি : তা হলো, আমদানি ব্যয় ও রপ্তানি আয়ের পরিমাণ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অর্থবছর শেষে এই হ্রাসের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। চলমান মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং ব্যাংক সুদের হার হ্রাসের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বিলম্বের কারণে বেসরকারি বিনিয়োগ প্রত্যাশিত মাত্রায় অর্জিত না হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সার্ভিস সেক্টর বিশেষত হোটেল-রেস্টুরেন্ট, পরিবহন এবং এভিয়েশন সেক্টরের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের চাহিদা হ্রাসের কারণে এর মূল্য ৫০ শতাংশের অধিক হ্রাস পেয়েছে; যার বিরূপ প্রভাব পড়বে প্রবাসী-আয়ের ওপর। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে বলে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক প্রাক্কলন করেছে। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে মনে হচ্ছে এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ ছুটি বা কার্যত লকডাউনের ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন বন্ধ এবং পরিবহন সেবা ব্যাহত হওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস এবং সরবরাহ চেইনে সমস্যা হতে পারে। চলতি অর্থবছরের রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম হবে। এর ফলে অর্থবছর শেষে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিন বছর ধরে ধারাবাহিক ৭ শতাংশের অধিক হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রধান চালিকাশক্তি ছিল শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং সহায়ক রাজস্ব ও মুদ্রানীতি। সামষ্টিক চলকসমূহের নেতিবাচক প্রভাবের ফলে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেতে পারে। বাংলাদেশে সময়মতো ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে আল্লাহর রহমতে এখনো আমাদের এখানে ব্যাপক সংক্রমণ ঘটেনি এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। গত বছর ডিসেম্বর মাসের শেষে চীনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পরপরই আমরা এ বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিই। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা ও আইইডিসিআর যৌথভাবে কাজ শুরু করে। আইইডিসিআরে কন্ট্রোল রুম খোলা হয় এবং রোগটি মোকাবিলায় প্রস্তুতি শুরু করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পৃথক কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী জানান, ভাইরাসসহ সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণ করে National Preparedness and Response Plan for COVID-19, Bangladesh   প্রণয়ন করা হয়েছে। পরিকল্পনার আওতায় তিন স্তরবিশিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়: বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তিদের মাধ্যমে যেন ভাইরাস না ছড়ায় সেজন্য বিদেশে গমন এবং বিদেশ থেকে আগমন নিরুৎসাহিত করা; দেশের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমিত ব্যক্তির আগমন ঘটলে দ্রুত শনাক্তকরণ এবং এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে ভাইরাসের বিস্তার রোধ; চিহ্নিত আক্রান্ত ও অসুস্থ ব্যক্তিদের দ্রুত পৃথক করে যথাযথ চিকিৎসা প্রদান। গত জানুয়ারি থেকেই এই তিন স্তরের কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয় বলে জানান তিনি।

গত ২৬ মার্চ থেকে ১৭ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে যারা মারা গেছেন তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে শেখ হাসিনা বলেন, একটি মৃত্যুও আমাদের কাম্য নয়। করোনায় আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন প্রধানমন্ত্রী তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার কাছে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন তথ্য এসেছে। অনেকে খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। বিশেষ করে ছোট ছোট ব্যবসায়ী যেমন আমাদের কৃষি, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতিসহ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পোলট্রি, ডেইরিসহ বিভিন্ন ব্যবসায় যারা নিয়োজিত তারা সবাই একটা সমস্যায় পড়ে গেছেন। তারা তাদের ঋণ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। তাদের এই দুশ্চিতা দূর করার জন্য আমরা এ ব্যবস্থাটা নিয়েছি। আশাকরি তাদের আর সমস্যা হবে না। কেউ কষ্ট করুক এটা আমি চাই না। সবার কষ্ট লাঘব করাই আমাদের দায়িত্ব। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা এই প্যাকেজটি ঘোষণা করেছি। এর সুফলটা সবাই পাবেন।

শবেবরাত ও নববর্ষ ঘরে বসে পালনে ফের আহ্বান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সামনে শবেবরাত রয়েছে। এই শবেবরাতেও আপনারা ঘরে বসে দোয়া করুন, যেন মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের বরাত ভালো রাখেন। আপনারা দোয়া করুন যেন এই মহামারী থেকে বাংলাদেশের জনগণসহ বিশ্ববাসী মুক্তি পায়। তিনি বলেন, আমরা প্রতিবছর মহাউৎসবে বাংলা নববর্ষ পালন করি। কিন্তু এ বছর সেটি করা যাবে না। ঘরে বসে নববর্ষ পালন করুন, ডিজিটাল মাধ্যমে নববর্ষ পালন করুন।

সর্বশেষ খবর