শিরোনাম
সোমবার, ৬ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

নতুন আক্রান্ত ১৮ মৃত্যু বেড়ে ৯

সংক্রমণ বেশি হলে মোকাবিলা করা অসম্ভব : স্বাস্থ্য অধিদফতর

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়েছে দেশে। এক দিনেই নতুন ১৮ জনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। ফলে এক লাফে আক্রান্ত বেড়ে হয়েছে ৮৮ জন। দেশে গত ৮ মার্চ প্রথমবারের মতো নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার পর এটাই ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হওয়া রোগীর সর্বোচ্চ সংখ্যা।

সরকার করোনাভাইরাস পরীক্ষার আওতা বাড়ানোর পর রোগী শনাক্ত হওয়ার সংখ্যাও বাড়ছে। আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯ জন। ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হওয়া ৫৫ বছর বয়সী এই ব্যক্তির বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। আক্রান্তদের মধ্যে আরও তিনজন সুস্থ হয়েছেন। ফলে এ পর্যন্ত মোট ৩৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশের ১৪টি কেন্দ্রে সংগৃহীত ৩৬৭টি নমুনার ফলাফলে ১৮ জনের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ১৩ জনের কভিড-১৯ নিশ্চিত করেছে আইইডিসিআর। বাকি পাঁচজনের পরীক্ষা হয়েছে ঢাকার বাইরের গবেষণাগারে। নতুন রোগীদের মধ্যে ১৫ জন পুরুষ, তিনজন নারী। মোট ৩৩ জন সুস্থ হয়ে ওঠায় এখন মোট ৪৬ জন রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে আছেন ৩২ জন, আর ১৪ জন বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। ওই ১৪ জনের লক্ষণ উপসর্গ খুবই মৃদু। তারা আমাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। ডা. ফ্লোরা বলেন, আক্রান্তদের মধ্যে ১১ থেকে ২০ বছর বয়সের একজন, ৩১ থেকে ৪০ এর মধ্যে দুজন, ৪১ থেকে ৫০ এর মধ্যে চারজন, ৫১ থেকে ৬০ এর মধ্যে ৯ জন, এবং দুজন ষাটোর্ধ্ব। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ১২ জন ঢাকার, পাঁচজন নারায়ণগঞ্জের এবং একজন মাদারীপুরের। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজার ৮০২ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইন, ২৬৭ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টাইনে গেছেন ১ হাজার ১১১ জন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে গেছেন ৯ জন। এ পর্যন্ত ৫৩ হাজার ৪১২ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। ফলে এখন কোয়ারেন্টাইনে আছেন ১২ হাজার ৬৫৯ জন। এখন পর্যন্ত মোট ৫২০ জনকে আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ১০ জনকে আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ৮৪ জন।

নিয়ন্ত্রণে চীন ও কোরিয়ার পথে বাংলাদেশ : করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুর যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছে বাংলাদেশও সেই পথ অনুসরণ করছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সেই জায়গা থেকে দ্রুত যত বেশি সম্ভব নমুনা পরীক্ষায় নজর দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা অনেক কিছু শিখি- চায়না, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর থেকে। তারা এটা কন্ট্রোল করেছে টেস্টিংয়ের মাধ্যমে, আইসোলেশনের মাধ্যমে, মুখে মাস্ক পরে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে। আমাদের সেখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আমাদের এখনই সময়। আমরা চাই না যে, এটা বেড়ে যাক এবং এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাক। তাহলে পরে আমেরিকা ও ইউরোপের মতো হয়ে যাবে। আমরা তখন অনেক কষ্টে পড়ব। এ বিষয়টি আমাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, টেস্টিং কার্যক্রম আমরা অনেক বৃদ্ধি করেছি। ১৪-১৫টি জায়গায় টেস্টিং কার্যক্রম হচ্ছে। এই টেস্টিং কার্যক্রম আমরা জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও নিয়ে যেতে চাচ্ছি। যার ফলে টেস্টিংয়ের ব্যবস্থাও বেড়ে যাচ্ছে। আগামীতে আমরা প্রতিদিনের নমুনা পরীক্ষার সংখ্যাকে এক থেকে দেড় হাজারে নিয়ে যেতে চাচ্ছি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য রাজধানীর আরও দুটি হাসপাতাল প্রস্তুত করা হচ্ছে। সেগুলো হলো- ফুলবাড়িয়া এলাকার রেলওয়ে হাসপাতাল এবং নয়াবাজারের মহানগর জেনারেল হাসপাতাল। তিনি বলেন, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে কভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ও ক্লোরোকুইন ওষুধ তৈরি করে রাখা হয়েছে। আমরা হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ওষুধ তৈরি করে রেখেছি, যাতে হাজার হাজার লোক চাইলে ওষুধ দিতে পারি। সে ব্যবস্থাও আমরা করে রেখেছি। মন্ত্রী বলেন, আমি পত্রপত্রিকায় দেখতে পেয়েছি, জিন এক্সপার্ট মেশিন এ কাজে ব্যবহার হতে পারে। আমরা সেদিকেও প্রস্তুত আছি। প্রায় এক দেড় মাস আগে আমাদের জিন এক্সপার্ট মেশিন সম্বন্ধে জানানো হয়েছে। কিন্তু এ মেশিনটি যে কিট ব্যবহার করবে তা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। যে কোম্পানি দিতে পারে, সে কোম্পানিকে আমরা অর্ডার দিয়ে রাখছি এক থেকে দেড় মাস আগে। আজ পর্যন্ত আমরা একটা কিটও পাইনি। যখন কিট পাব তখন জিন এক্সপার্ট মেশিনও আমরা ব্যবহার করব যতটুকু সম্ভব। সবুজবাগে এক পরিবারে ৬ জন আক্রান্ত : রাজধানীর সবুজবাগ থানার দক্ষিণগাঁও এলাকার এক পরিবারের ৬ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া তাদের প্রতিবেশী আরেক ব্যক্তিও আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত সবাইকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সবুজবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সর্বশেষ খবর