সোমবার, ৬ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

সর্দি কাশি জ্বর নিয়ে আরও আট জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

সর্দি কাশি ও শ্বাসকষ্টের মতো করোনা উপসর্গ নিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আটজন মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল ঢাকা, মাদারীপুর, কুমিল্লা, লালমনিরহাট, নারায়ণগঞ্জ, নেত্রকোনা ও বাগেরহাটে এসব মৃত্যুর পর বিভিন্ন বাড়িঘর ও এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। এলাকাগুলোতে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক।

গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মারা যান আবু তাহের (৫০)। গত শনিবার রাতে শ্বাসকষ্ট নিয়ে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে তাকে আইসোলেশনে রাখা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থান তিনি মারা যান। বিকালে স্বজনরা তার লাশ গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানার বায়ারে নিয়ে যান।

কুমিল্লার দাউদকান্দিতে করোনায় আক্রান্ত সন্দেহভাজনের বাড়ি লকডাউনের ৯ ঘণ্টা পর জ্বর, সর্দি, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট নিয়ে আলেক খান (৫৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল ৮টায় তিনি মারা যান। এর আগে গত শনিবার রাত ১১টায় দাউদকান্দি উপজেলার মারুকা ইউনিয়নের চক্রতলা গ্রামের আলেক খানের অসুস্থতার লক্ষণকে করোনার উপসর্গের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হওয়ায় তার পরিবারসহ একটি বাড়ির সাতটি পরিবারকে লকডাউনের আওতায় আনা হয়। দাউদকান্দি উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. শাহিনুর আলম সুমন জানান, আলেক খান নামে ওই ব্যক্তি চার-পাঁচ দিন আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে জ¦র, সর্দি এবং কাশিজনিত রোগের চিকিৎসা নিয়ে যান। শনিবার পূর্বের সমস্যাগুলোর সঙ্গে শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার পরিবারের লোকজন। দাউদকান্দি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম জানান, ওই ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত সন্দেহে মারুকা ইউনিয়নের চক্রতলা গ্রামে রাতে একটি বাড়ি লকডাউন করা হয়। সিভিল সার্জন ডা. নিয়াতুজ্জামান বলেন, মারা যাওয়া লোকটি আগে থেকেই শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। তার উপসর্গ করোনা সংক্রমণের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় আইইডিসিআর দফতরে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট এলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে কী কারণে  লোকটি মারা গেলেন। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি এই বাড়িতে প্রবাস থেকে কেউ দেশে ফিরেনি, আলেক পেশায় কৃষক ছিলেন। নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলায় গতকাল ভোরে নুরুন্নাহার (৪৫) নামের এক নারীর জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়া হয়ে মৃত্যু হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ এলাকায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে ওই নারীর পরিবারসহ আশপাশের ৮ থেকে ১০টি বাড়ি লকডাউন করে রেখেছে। পূর্বধলা উপজেলার হোগলা ইউনিয়নের কালিহর গ্রামের রকিব মিয়ার স্ত্রী নুরুন্নাহার ছিলেন গৃহিণী। পূর্বধলা থানার ওসি মোহাম্মদ তাওহীদুর রহমান জানান, ওই নারীর স্বামীর মাধ্যমে জানতে পারেন তার স্ত্রীর শনিবার হঠাৎ ভীষণ জ্বর হয়। পরে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক গিয়ে চিকিৎসা দেন। তার স্বামী ও পল্লী চিকিৎসকের বরাত দিয়ে ওসি আরও জানান, জ্বর, সর্দি হওয়ার পর পাতলা পায়খানা এবং উচ্চ রক্তচাপ হয়ে রবিবার ভোরে আনুমানিক সাড়ে ৪টার দিকে তিনি মারা যান। তবে ওই নারী কোনো বিদেশ ফেরত বাড়িতে যাননি বলেও পরিবারের লোকজন জানায়। তার স্বামী কৃষিকাজ করতেন। আমরা খবর পেয়ে বাড়িতে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করি এবং বাড়িটিসহ আশপাশের আরও ৮টি বাড়ি আপাতত লকডাউন করে রাখা হয়েছে। যেহেতু উপসর্গগুলো কভিডের মতোন তাই আমরা নজরদারিতে রেখেছি। মানুষ যাতে আতঙ্কিত না হয় এবং সাবধান থাকে। নমুনা পরীক্ষার পর বোঝা যাবে কী কারণে মৃত্যু হয়েছে। মাদারীপুরের কালকিনিতে রবিবার ভোরে জ্বর ও গলাব্যথায় আক্রান্ত হয়ে ছালাম ফকির নামে এক ব্যক্তি মারা যান। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন কি-না, সে জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আশপাশের কয়েকটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। মৃত ব্যক্তি কালকিনি উপজেলার কয়ারিয়া ইউনিয়নের চরআলিমাবাদ গ্রামের বাসিন্দা। তার বয়স ৫০ বছর। স্থানীয়রা ও পুলিশ জানায়, শনিবার সন্ধ্যার পরে শরীরে জ্বর ও গলাব্যথা নিয়ে অসুস্থ হন ওই ব্যক্তি। এ সময় তারা স্থানীয় একজন চিকিৎসকে ডেকে আনলে তিনি কিছু ওষুধ দেন। ভোর রাতে সালাম ফকির মারা যান। পরে কালকিনি থানা পুলিশ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক গিয়ে তার নমুনা সংগ্রহ করে। এই নমুনা পরীক্ষার জন্যে আইইডিসিআর-এ পাঠানো হবে। মাদারীপুর সিভিল সার্জন ডা. শফিকুল ইসলাম জানান, কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে ওই ব্যক্তির সম্পূর্ণ হিস্ট্ররি জেনে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাগেরহাটের রামপালে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে রবিবার সকালে মারা যান উপজেলা জামায়াতের আমির ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শেখ নাসের উদ্দিন (৬০)। শ্রীফলতলা গ্রামে তার নিজের ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনসহ যারা দাফন ও কাফনে অংশ নিয়েছিল তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শুকান্ত কুমার পাল জানান, শেখ নাসের উদ্দিন নিজবাড়িতে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে কয়েক দিন অসুস্থ ছিলেন। রবিবার ভোরে খুলনার একটি হাসপাতালে মারা যান। তার স্বজনরা বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগ বা প্রশাসনের কাউকে না জানিয়ে লাশ তার জন্মস্থান উপজেলার বর্ণি-সায়েরাবাদ গ্রামে নিয়ে দ্রুত গোসল ও জানাজা শেষে সেখানে দাফনের আয়োজন করেন। স্বাস্থ্য বিভাগ বা উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত সেখানে পৌঁছালেও লাশ দাফন করে যাওয়ায় মৃত্যের শরীর থেকে কোনো নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। এই অবস্থায় শ্রীফলতলা গ্রামে তার নিজের ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনসহ মরদেহকে কবর ও গোসলে অংশ নেওয়াদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা গত ১০ দিন ধরে তিনি কাদের সঙ্গে চলাফেরা করেছেন তাদেরও চিহ্নিত করতে কাজ করছে। লালমনিরহাটে জ্বর, সর্দি ও কাশিসহ অন্যান্য জটিলতায় ৫৮ বছর বয়সী একজন মারা গেছেন। গতকাল সকালে জেলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তার মৃত্যু হয়। গত কয়েকদিন ধরে তিনি জ্বর, সর্দি ও কাশিতে ভুগছিলেন। এ ছাড়া ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। গতকাল সকালে তার অবস্থার অবনতি হলে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। লালমনিরহাটের জেলা সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় বলেন, করোনার উপসর্গ না থাকায় পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি।

নারায়ণঞ্জের সোনারগাঁয়ে সর্দি, কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে জিল্লুর রহমান নামে (৮০) এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল ১০টায় উপজেলার কাঁচপুর ইউনিয়নের সেনপাড়া এলাকায় অসুস্থ অবস্থায় তিনি মারা যান। জিল্লুর রহমান কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার তাম্মি নয়াপাড়া গ্রামের মৃত আবদুল হেলিনের ছেলে। তিনি সেনপাড়া এলাকার সোহেল মিয়ার বাড়িতে পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন। জন্মগত ভাবেই তাঁর শ্বাসকষ্ট ছিল। সকালে শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেড়ে যায়। একপর্যায়ে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন। সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. পলাশ কুমার শাহা বলেন, কাঁচপুরে সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও জ্বরে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাননি।

মৌলভীবাজারের রানগর উপজেলার আকুয়া গ্রামে জ্বর, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত হয়ে শনিবার একব্যক্তি মারা যান। গতরাতে জানা গেছে তার করোনা পজিটিভ। সিভিল সার্জন বলছেন, একটি গ্রাম লকডাউন করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর