বুধবার, ৮ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ নারায়ণগঞ্জ

সব বাহিনীর প্রচেষ্টা অব্যাহত, প্রস্তুত হেলিকপ্টার

বিশেষ প্রতিনিধি

সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ নারায়ণগঞ্জ

বিমানবাহিনীর বিশেষ হেলিকপ্টার এডব্লিউ-১৩৯ করোনাভাইরাস রোগী বহনে প্রস্তুত -আইএসপিআর

করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে আজ থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলাকে সম্পূর্ণরূপে অবরুদ্ধ (লকডাউন) ঘোষণা করা হয়েছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) গত রাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানায়। তবে জরুরি পরিষেবা এর আওতাবহির্ভূত থাকবে। অসামরিক প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে এ দায়িত্ব পালন করবে।

এদিকে করোনার সংক্রমণ এড়াতে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা, রাস্তায় রাস্তায় জীবাণুনাশক স্প্রে করা, অকারণে মোড়ে মোড়ে জনসাধারণের আড্ডা বন্ধসহ ঢাকাসহ সারা দেশে নানা ধরনের সচেতনতামূলক কাজ করে যাচ্ছেন সেনা, পুলিশ, র‌্যাব ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। কোথাও কোথাও তারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আইন ভঙ্গ করার অপরাধে জড়িত থাকায় অনেককেই শাস্তি দিচ্ছেন। সরকারি নির্দেশ বাস্তাবায়নে সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশের জোরদার টহল চলছে। ট্রাফিক পুলিশ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট স্থাপন করে অপ্রয়োজনীয় যানবাহন আটকে দিচ্ছে। ঢাকার মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ায় রাজিয়া সুলতানা রোড, বাবর রোড, তাজমহল রোড ও কৃষি মার্কেটের সামনের একটি রোডের একাংশে যান এবং সাধারণ মানুষের চলাচল একদম সীমিত করে দিয়েছে। একইভাবে আদাবর থানা পুলিশ শেখের টেক ও আদাবর এলাকার বেশ কয়েকটি রাস্তায় বন্ধ করে দিয়েছে যান চলাচল। তবে আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, যান চলাচল সীমিত করার লক্ষ্যে এবং এলাকায় চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ যেন না ঘটে সে জন্য সাময়িকভাবে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার সংক্রমিত এলাকা লকডাউন ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

করোনাভাইরাস আক্রান্ত  রোগী বহনে প্রস্তুত বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার : করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী বহনে প্রস্তুত রয়েছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বিশেষ হেলিকপ্টার। আইএসপিআর জানায়, বিমানবাহিনীর একটি এডব্লিউ-১৩৯ মডেলের হেলিকপ্টারের অর্গানিক স্ট্রেচারকে বিশেষভাবে রূপান্তর করে করোনা রোগীকে স্থানান্তরের উপযোগী করা হয়েছে। উল্লেখ্য, স্ট্রেচারটিতে একটি কাঠামো স্থাপন করা হয়েছে, যা প্লাস্টিক দ্বারা সম্পূর্ণভাবে আচ্ছাদিত থাকবে। এই আচ্ছাদনের ভেতরে অক্সিজেন মাস্কের মাধ্যমে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাসের সুবিধা থাকবে। এই প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থাটি এমনভাবে সম্পাদন করা হবে, যাতে আক্রান্ত ব্যক্তি সর্বাবস্থায় সুরক্ষিত থাকেন এবং একই সঙ্গে স্থানান্তর কার্যক্রমে নিয়োজিত ব্যক্তিরা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে সুরক্ষিত থাকেন। এই নীতির অনুসরণে বিমানবাহিনী একটি মহড়া সম্পন্ন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিমানবাহিনীর অন্যান্য হেলিকপ্টার ও পরিবহন বিমানগুলোতে এ ধরনের সুবিধা সংযোজনের বিষয়টি চলমান রয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে তারকাঁটা দিয়ে ব্যারিকেড দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পাশাপাশি ঢাকার ভেতরে ও বিভিন্ন জায়গায় ব্যারিকেড দিয়ে চেকপোস্ট তৈরি করা হয়েছে। এসব স্থানে জরুরি পণ্য পরিবহন ছাড়া অন্যান্য পরিবহন আটকে দেওয়া হচ্ছে। সোমবার ও গতকাল ঢাকার বেশ কয়েকটি প্রবেশপথে এমন চিত্র দেখা গেছে। এ অবস্থায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ঢাকা থেকে যাতে কোনো লোক বাইরে যেতে না পারে এবং বাইরে থেকে ঢাকায় প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশের সব ইউনিটকে নির্দেশনা দেন আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার থেকে ঢাকার প্রবেশপথ বাবুবাজার ও ঢাকা-মাওয়া রোডের পোস্তগোলা ব্রিজে ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া গাবতলী, কাঁচপুর ব্রিজ ও চট্টগ্রাম রোডের বিভিন্ন স্থানে তারকাঁটা দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এসব স্থানে কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। কোনো পরিবহন যাতে ঢাকা ছাড়তে না পারে সে বিষয়েও লক্ষ রাখা হচ্ছে। প্রতিটি এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। তবে জরুরি সেবা, অ্যাম্বুলেন্স, গণমাধ্যম ও খাদ্যবাহী যান চলাচলে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

বগুড়া : আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অপ্রয়োজনে জনসাধারণের চলাচলে ব্যাপক কড়াকড়ি করেছে বগুড়া শহর। শহরে প্রবেশের সময় মানুষ পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্য, র‌্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মুখোমুখি হচ্ছেন। মাইকে প্রচার করা হচ্ছে বাড়ি থেকে বের না হতে। যারা প্রয়োজনে বের হয়েছেন তাদের দ্রুত ঘরে চলে যেতে বলা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কঠোর হওয়ায় শহরে লোকসমাগম কমে গেছে। অভিযান চলছে পাড়া-মহল্লা পর্যন্ত। বগুড়া সদর থানা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা গিয়ে করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বরিশাল : জেলার উজিরপুর ও বাকেরগঞ্জে করোনা উপসর্গের রোগী থাকায় ৯টি বাড়ি লকডাউন করেছে স্থানীয় প্রশাসন। সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় উজিরপুর পৌর শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের রাখালতলা কালিরবাজার এলাকার করোনা রোগী সন্দেহে পাঁচটি বাড়ি এবং গতকাল বিকালে পাদ্রিশিবপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামে করোনা রোগী সন্দেহে চারটি বাড়ি লকডাউন করা হয়। এ ছাড়া সোমবার সন্ধ্যায় শেরেবাংলা মেডিকেলে করোনা উপসর্গের এক রোগীর মৃত্যু হওয়ায় সদর উপজেলার ওই ব্যক্তির বাড়ি সেদিন রাতেই লকডাউন করে জেলা প্রশাসন। এদিকে গতকাল দুপুরে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে বাকেরগঞ্জের পাদ্রিশিবপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের ফারুক খলিফার স্ত্রী আমেনা বেগম জ্বর-সর্দি ও গলাব্যথা নিয়ে শেরেবাংলা মেডিকেলে ভর্তি হন। এ খবর পেয়ে ওই বাড়িসহ সংলগ্ন চারটি বাড়ি লকডাউন করে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রেজওয়ানুর আলম জানান, আমেনা বেগমের করোনার সব কটি উপসর্গ- সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, শরীরব্যথা ও শ্বাসকষ্ট ছিল। তার মুখের লালার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। উজিরপুরে পাঁচটি এবং সদর উপজেলার একটি বাড়ি লকডাউন করেছে প্রশাসন। উজিরপুরে এক ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে ওই বাড়িসহ আশপাশের পাঁচটি বাড়ি এবং সদর উপজেলার তালতলীর এক ব্যক্তির করোনা সন্দেহে শেরেবাংলা মেডিকেলে মৃত্যুর পর ওই বাড়িটিও লকডাউন করে প্রশাসন। সোমবার রাতে উজিরপুরে এবং সদরের তালতলীর বাড়ি দুটি লকডাউন ঘোষণা করা হয়। উজিরপুরের বাসিন্দা এমদাদুল কাশেম সেন্টু জানান, পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের রাখালতলা কালীর বাজার এলাকার বাসিন্দা ফল ব্যবসায়ী আবদুর রশিদ বেপারী (৬০) দুই দিন আগে জ¦র ও গলাব্যথায় আক্রান্ত হয়ে বরিশাল নগরী থেকে বাড়ি ফিরে আসেন। রবিবার রাতে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। বিষয়টি জানতে পেরে এলাকাবাসী উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করে। খবর পেয়ে উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রণতি বিশ্বাস এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শওকত আলী সোমবার রাতে ওই ব্যক্তির বাড়ি যান। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ওই ব্যক্তির জ¦র, সর্দি, কাশি ও গলাব্যথার উপসর্গের বর্ণনা শুনে প্রাথমিকভাবে তাকে করোনায় আক্রান্ত বলে সন্দেহ করেন। এসব উপসর্গের কারণে আবদুর রশিদকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেয় উপজেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে ওই বাড়িসহ আশপাশের পাঁচটি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করে লাল পতাকা উড়িয়ে দেয় উপজেলা প্রশাসন। গাজীপুর : মহানগরীর ৫৭টি ওয়ার্ড এলাকার সাধারণ মানুষকে ঘর থেকে বের হওয়া এবং অন্য এলাকা থেকে নগরীতে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। গতকাল তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান। সিটি মেয়র বলেন, গাজীপুর মহানগর এলাকায় বিপুলসংখ্যক শিল্প-কলকারখানা রয়েছে। এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে লাখ লাখ শ্রমিক চাকরি করেন। এ জন্য এখানে করোনাভাইরাসের বিস্তারের ঝুঁকি রয়েছে। মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, মহানগরীতে প্রবেশের ১০টি পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ইতিমধ্যে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী-কালীগঞ্জ মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট ছাড়াও পুবাইল, মিরেরবাজার, কাশিমপুর, বাড়িয়া, টঙ্গীর কামারপাড়াসহ ১০টি পয়েন্টে পুলিশ তৎপর রয়েছে। মেহেরপুর : পৌরসভাকে গেটলক ঘোষণা করে প্রবেশদ্বারগুলোতে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। গতকাল দুপুরে পৌর মেয়রের উদ্যোগে এ চেকপোস্ট বসানো হয়। মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কে ও মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কসহ শহরে প্রবেশের অন্যান্য সড়কেও গেটলক করা হয়েছে। প্রতিটি প্রবেশদ্বারের কাছে পৌরসভার কর্মীদের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরা কাজ করছে। পৌর মেয়র মাহফুজুর রহমান বলেন, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে পুরো শহর গেটলকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাগেরহাট : সাধারণ মানুষকে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে না বেরোনো ও মাস্ক পরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলের পরামর্শসহ সড়ক ও দোকানপাটে জীবাণুনাশক স্প্রে করছেন সেনাসদস্যরা। গতকাল তারা শহরের প্রাণকেন্দ্র সাধনার মোড়, শালতলা মোড়, রাহাতের মোড়, রেল রোড, খানজাহান আলী রোড, পুরাতন বাজার, নাগের বাজারসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোসহ পাশের দোকানপাট-ফুটপাথে জীবাণুনাশক স্প্রে করেন। এ সময় তারা হ্যান্ডমাইকে জীবনঘাতী করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে জনসাধারণকে জীবন বাঁচাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন। একইভাবে তৎপর রয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। নীলফামারী : করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন ৬৬ পদাতিক ডিভিশন রংপুরের জিওসি মেজর জেনারেল নজরুল ইসলাম। গতকাল দুপুরে সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে এই মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী। পুলিশ সুপার মোখলেছুর রহমান, সিভিল সার্জন রণজিৎ কুমার বর্মণ, পৌরসভার মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদ, সাংবাদিক তাহমিন হক ববি, মিল্লাদুর রহমান মামুন ও নুর আলম বক্তব্য দেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া : নাসিরনগরে কোনো কারণ ছাড়াই ঘর থেকে বের হয়ে দোকানে বসে আড্ডা দেওয়ার অভিযোগে ১৩ জনকে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন বাজারে অভিযানে চালিয়ে তাদের এ অর্থদ- প্রদান করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমা আশরাফী ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাহমিনা আক্তার পুলিশের সহযোগিতায় পৃথক এ অভিযানে অংশ নেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গতকাল সকালে উপজেলার ফান্দাউক ইউনিয়নের বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ অভিযান পরিচালনা করেন। মাইকিং করে জনসাধারণকে ঘরে থাকার অনুরোধ জানান তিনি। এ সময় তিনি বিনা কারণে ঘোরাফেরার কারণে ১০ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৭ হাজার ৫০০ টাকা আর্থিক জরিমানা করেন। উপজেলার কুন্ডা ও ভলাকুট ইউনিয়নে অকারণে ঘোরাফেরার করায় তিন যুবককে ১ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেন তিনি। ঢাকা : রাজধানীর গুলশান ও মার্কিন দূতাবাস-সংলগ্ন কূটনৈতিক এলাকার প্রধান প্রধান সড়ক, ফুটপাথ ও আশপাশের পরিবেশ জীবাণুমুক্ত রাখতে জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটানোসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে নৌবাহিনী। গতকাল নৌবাহিনীর সদস্যরা দিনব্যাপী এই কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এ সময় ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুকসহ নৌবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে নৌবাহিনী ভাসানটেক এলাকায় গরিব, দুস্থ ও অসহায় ৫০০ পরিবারের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করে। এ ছাড়া নৌবাহিনীর সদস্যরা জনসমাগম বন্ধসহ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে এবং মানুষকে ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে নানা পরামর্শ প্রদান করেন। সিরাজগঞ্জ : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সাধারণ মানুষকে ঘরে রাখতে কঠোর হচ্ছে প্রশাসন। জনসচেতনার পাশাপাশি অর্থদ- করা হয়েছে। অহেতুক রাস্তায় ঘোরাফেরা করায় গত দুই দিনে জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৬৭ জনকে ৫৪ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) : আড়াইহাজারে মানুষকে সচেতন করতে, তাদের ঘরে রাখতে এবং বাজার মনিটরিং করতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। গতকাল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত আড়াইহাজারের বিভিন্ন এলাকায় এ অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উজ্জ্বল হোসেন জানান, মানুষকে সচেতন করতে মাইকিং করা হয়েছে। যারা অপ্রয়োজনে বের হয়েছেন তাদের সাবধান করে ঘরে ফেরানো হয়েছে এবং বাজার মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে, যেন কেউ পণ্যের বাড়তি মূল্য না রাখতে পারে। এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চালু রাখায় জিঅ্যান্ডবি নামে এক ইটভাটাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। দুপুরে ব্রাহ্মণদী ইউনিয়নের ফাউসা এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত এ জরিমানা করেন। একই সঙ্গে জিঅ্যান্ডবি ইটভাটার মালিক ফজলুর রহমানকে চূড়ান্তভাবে সতর্ক করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। টাঙ্গাইল : করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে টাঙ্গাইলে গতকাল বিকাল ৪টা থেকে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। লকডাউন চলাকালে টাঙ্গাইল জেলার সীমান্তবর্তী এলাকাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বিশেষ চেকপোস্ট বসানো হবে। একই সঙ্গে টাঙ্গাইল পৌর এলাকার চতুর্দিকে চেকপোস্ট বসানো হবে, যাতে করে শহরে বা জেলায় কোনো গণপরিবহন বা কোনো ব্যক্তি প্রবেশ করতে না পারে। আবার কেউ যেন বাইরে যেতে না পারে। বেলা ১২টার দিকে টাঙ্গাইল সার্কিট হাউসে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম জানান, করোনা প্রতিরোধে জনসাধারণকে ঘরে থাকতে হবে এবং সব সীমান্ত এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে টাঙ্গাইল জেলাকে লকডাউন করা হয়। তবে টাঙ্গাইল যেহেতু উত্তরবঙ্গের ২৬টি জেলার গেটওয়ে, তাই মহাসড়ক বন্ধ করা হবে না। টাঙ্গাইল জেলা ও শহরে কোনো ইজিবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ভ্যান বা সব ধরনের যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : করোনাভাইরাসের কারণে পুরো রূপগঞ্জকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া করোনা শনাক্ত এলাকাগুলোতে স্থানীয়ভাবে বাড়তি নজরদারি ও সতর্কতার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সোমবার উপজেলা প্রশাসনের জরুরি মিটিংয়ে রূপগঞ্জ উপজেলাকে লকডাউন করার সিদ্ধান্ত হয়। এ রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম বলেন, রূপগঞ্জের প্রবেশপথগুলো বন্ধ করা হয়েছে। বাইরের কোনো মানুষ এখন রূপগঞ্জে প্রবেশ করতে পারবে না। আর রূপগঞ্জ থেকে কোনো মানুষ বাইরে যেতে পারবে না। মাদারীপুর : শিবচর উপজেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। শিবচর লকডাউন হওয়ার পর থেকে গতকাল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত খুব কমসংখ্যক মানুষকে জরুরি কেনাকাটার জন্য ঘর থেকে বের হতে দেখা গেছে। এ ছাড়া জেলার অন্যান্য উপজেলায় বেলা ২টার পর ওষুধের দোকান ছাড়া সব দোকান এবং ইজিবাইকসহ ছোট-বড় সব যান চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। হবিগঞ্জ : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে হবিগঞ্জ জেলা লকডাউন ঘোষণা করেছেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির এমপি। বেলা পৌনে ১২টায় এ বিষয়ে নিজের ফেসবুক পেজে তিনি একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, মঙ্গলবার থেকে হবিগঞ্জ জেলা লকডাউন ঘোষণা করা হলো। অন্যদিকে জেলা প্রশাসন লকডাউন ঘোষণা না করলেও করোনা উপদ্রুত এলাকা থেকে যাতে কেউ জেলায় প্রবেশ না করতে পারেন, সে জন্য জেলার প্রবেশদ্বারগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। নেত্রকোনা : গত দুই দিনে জ্বর, শ্বাসকষ্ট নিয়ে দুজন মারা যাওয়ার ঘটনায় পূর্বধলা লকডাউন করেছে পুলিশ। করোনা উপসর্গ কি না তার নমুনা পরীক্ষার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। করোনার হাত থেকে জেলার পূর্বধলা উপজেলার জুগলী গ্রাম রক্ষা করতে গতকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এলাকাটি লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে। মহামারী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এই গ্রামে বাইরের কোনো লোকজনকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ময়মনসিংহ : করোনা মোকাবিলায় ব্যক্তিনিরাপত্তা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে এবং পার্শ্ববর্তী শেরপুর ও জামালপুর জেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় ময়মনসিংহে সেলফ লকডাউন ঘোষণা করেছে প্রশাসন। গতকাল জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে করোনা মোকাবিলায় আয়োজিত মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়। জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আহমার উজজ্জামান, সেনাবাহিনীর লে. কর্নেল মোহাম্মদ মেহেদি হাসান, সিভিল সার্জন ডা. এ বি এম মসিউল আলম প্রমুখ। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, জেলার প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় ও গ্রামে গ্রামে সবাইকে ঘরে থাকার আহ্বান জানাবে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, মসজিদ থেকে মাইকিং করা হবে। এ ক্ষেত্রে মানুষকে ঘরে রাখতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর হবে। কুমিল্লা : ঢাকায় করোনায় ব্যবসায়ীর মায়ের মৃত্যুর পর কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের জিয়াপুর গ্রামে মৃতের সন্তানদের দুটি বাড়ি লকডাউন করেছে স্থানীয় প্রশাসন। গতকাল বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরুল হাসান পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে জিয়াপুর গ্রামের ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফা ও তার ভাই মো. সেলিমের দুটি বাড়ি লকডাউন করেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফার মা সাহেদা খাতুনের (৬৫) মৃত্যু হয়। পরে সোমবার মোস্তফা পরিবার নিয়ে বুড়িচংয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক জানান, যত দিন ওই দুটি বাড়ি লকডাউন থাকবে, তত দিন থানা পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করা হবে।

সর্বশেষ খবর