শিরোনাম
বুধবার, ৮ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

এই দুঃসময়ে কোনো তৎপরতা নেই এনজিও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের

মানিক মুনতাসির ও আক্তারুজ্জামান

মহামারীর এই দুঃসময়ে আর্তমানবতা সেবার কোথাও দেখা যাচ্ছে না এনজিও, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অনুদান দেওয়া, সাধারণ গরিব মানুষদের জন্য ত্রাণসামগ্রী বিতরণ- কোনো কিছুতেই তারা নেই। শুধু তাই নয়, অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকেও দেখা যাচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এ কঠিন সময়ে অনেক সাধারণ সংগঠন আর্তমানবতার সেবায় কাজ করছে। অনেক ছাত্র ও সাধারণ নাগরিকও ভূমিকা পালন করছেন স্বেচ্ছাসেবকের। অথচ এসব ব্যবসায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকরা নীরব। ট্রাস্টি বোর্ডের নামে তাদের বিশাল অঙ্কের অর্থ ব্যাংকে জমা রয়েছে। এমনকি জঙ্গিবাদের দায়ে অভিযুক্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকরা সরকারের পাশে নেই। দীর্ঘ সময় বিপুল পরিমাণ অর্থ তারা ব্যাংকে জমা রাখছেন। একইভাবে এনজিওগুলোর এই সময়ে সারা দেশে যে তৎপরতা দেখানোর কথা ছিল তা কোথাও দেখা যাচ্ছে না। এনজিও ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে অন্তত আড়াই হাজার এনজিও রয়েছে। এর মধ্যে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দেশের মানুষ ও সরকারের পাশে এসে            দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৬টি এনজিও। ত্রাণ তহবিলে অর্থ দেওয়া তো দূরের কথা বরং এনজিওগুলো ব্যস্ত রয়েছে দেশি-বিদেশি তহবিল সংগ্রহের কাজে। একই সঙ্গে সরকারি ত্রাণ বিতরণের কাজ পেতে তদবির করছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে। বিষয়টা এমন যে, তহবিল এলেই তারা কাজ করবেন। অন্যথায় মানুষের প্রতি তাদের যেন অন্য কোনো দায়িত্ব নেই। একই অবস্থা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রেও। দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৫টি। আর বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যাও অর্ধশত। অথচ হাতেগোনা কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লোক দেখানো কিছু হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি ও বিতরণ করেই দায়িত্ব শেষ করেছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালীসহ বেসরকারি খাতের ৫ থেকে ৭টি ব্যাংক প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে কিছু অর্থ প্রদান করেছে। এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক কে এম আবদুস সালাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এনজিওগুলো কাজ করছে। তবে অনেকের কাজ ততটা দৃশ্যমান নয়। এখন পর্যন্ত ১৬টি এনজিও বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে ব্র্র্যাক, অক্সফাম, জাগো নারী, আল খায়ের ফাউন্ডেশন, আইআরসি, ব্রাসমা ফাউন্ডেশন উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন, দেশে এই মুহূর্তে আড়াই হাজারের বেশি এনজিও রয়েছে। তবে সক্রিয়ভাবে কাজ করে ৪০০ থেকে ৫০০। আর এনজিওগুলোর কাজের যে আওতা তার অন্তত ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ব্র্যাকের মাধ্যমেই বাস্তবায়িত হয় বলে তিনি মনে করেন। এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর অপর একটি সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর এখন পর্যন্ত ১৬টি এনজিও তাদের বিদেশি অর্থায়ন ও করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিরোধক শীর্ষক বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য অনুমোদন নিয়েছে। এগুলোর মধ্যেও দু-একটি বাদে বাকিগুলো দেশে-বিদেশে অর্থের জন্য ধরনা দিচ্ছে। আর বাকিগুলোও শুধু তহবিলের আশায় দিন গুনছে। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকরাও হাত গুটিয়ে বসে আছেন। যেন তাদের কোনো দায়িত্ব নেই। এমনকি গরিব মানুষের কাছে খাদ্য সহায়তাও পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছে না এসব এনজিও ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। সূত্র জানায়, এনজিওগুলো সরকারি ত্রাণ বিতরণের কাজ পেতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে তদবির করছে। ইতিমধ্যে তারা স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। ঢাকা মহানগরের সরকারি ত্রাণ কার্যক্রম এনজিওগুলোর হাতে ছেড়ে দিতে চায় সরকার। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্যমতে, দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৫টি। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মতান্ত্রিকভাবে চললেও, বেশির ভাগই চলছে সরকারের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে। জাল সনদ বিক্রি, অনুমোদনহীন ক্যাম্পাস পরিচালনাসহ আরও অনেক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত বেশির ভাগই। শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রেও কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা আয় করছে বিশ্ববিদ্যায়ের ট্রাস্টি বোর্ডগুলো। অথচ করোনাভাইরাস সংক্রমণের কঠিন এ সময়ে জাতির জন্য দৃশ্যমান কোনো ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে না তাদের। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক দেখানো কিছু হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ ছাড়া কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলেও প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে এক টাকাও জমা দিতে দেখা যায়নি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। এ সময়েও কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় চেষ্টা করেছে অনলাইনে সামার সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে অর্থ আয়ের।

ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন,  জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচিত জনগণের পাশে দাঁড়ানো। এ সময়ে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম না থাকার বিষয়টি খুবই হতাশার এবং দুঃখজনক। অন্যদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ট্রাস্টি বোর্ডের সংগঠন ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি’র সভাপতি শেখ কবীর হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালিত হয় ট্রাস্টি বোর্ডের অধীনে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসআর ফান্ড নেই। ফলে অ্যাকাউন্টে উদ্বৃত্ত অর্থ থাকলেও সেসব অর্থ সামাজিক বা ত্রাণ সহায়তার কোনো কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। উদ্বৃত্ত অর্থ শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কাজেই ব্যবহার করা যায় বলে তিনি মনে করেন।  এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিনাত হুদা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা এখন একটা কঠিন সময় পার করছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা সবাই কাজ করছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও নানাভাবে এগিয়ে এসেছে। অনেক ব্যবসায়ীও এগিয়ে এসেছে। কিন্তু আমাদের এনজিওগুলো যেমন ব্র্যাক, গ্রামীণ ব্যাংক, প্রশিকা, টিআইবিসহ অন্য যারা নিজেদের সুশীল দাবি করে, এমনকি কখনো কখনো নিজেদের সরকারের বিকল্প হিসেবে দাবি করে তারা চুপচাপ রয়েছে। তাদের কোনো কর্মকা- চোখে পড়ছে না। এটা খুব দুঃখজনক। আমাদের দেশের ব্যবসায়ী, শ্রমিক, দিনমজুর, ছোট ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কৃষক সবাই আক্রান্ত। সবার মধ্যেই আতঙ্ক। বহু মানুষ খাবারের জন্য হাহাকার করছে। এসব এনজিও ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকরা অনেক বিত্তবৈভবের মালিক হওয়া সত্ত্বেও মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি। এটা খুব হতাশাজনক। আমি আশা করব তারা অন্তত মানবিক দিক বিবেচনা করে বিপর্যয়ের এই মুহূর্তে মানুষের পাশে দাঁড়াবে।

সর্বশেষ খবর