শনিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

মাজেদের সঙ্গে পরিবারের সাক্ষাৎ যে কোনো সময় ফাঁসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

মাজেদের সঙ্গে পরিবারের সাক্ষাৎ যে কোনো সময় ফাঁসি

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদের (বরখাস্ত) প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ফলে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকরে আর কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এরই মধ্যে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কারা সূত্র। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি এই আবেদন খারিজের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, এখন যে কোনো সময়ই তার দন্ড কার্যকর করতে পারবে কারা কর্তৃপক্ষ। এর আগে গত বুধবার আদালত থেকে মৃত্যু পরোয়ানা জারির পর নিজের দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন মাজেদ। বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, মাজেদের ফাঁসি কার্যকরে সব ধরনের প্রস্তুতি কারা কর্তৃপক্ষ নিয়ে রেখেছে। এখন সময় সুযোগ দেখে এই মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হবে। এদিকে গতকাল কারা কর্তৃপক্ষের ডাকে কারাগারে গিয়ে ক্যাপ্টেন মাজেদের সঙ্গে দেখা করেছে তার পরিবার। সন্ধ্যায় কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে মাজেদের সঙ্গে দেখা করেন তার স্ত্রী সালেহা বেগমসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য।

অন্যদিকে মাজেদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে জল্লাদ শাহজাহানের নেতৃত্বে মো. আবুল, তারিকুল ও সোহেলসহ ১০ জন জল্লাদের একটি দল প্রস্তুত করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে ফাঁসির মঞ্চে বস্তা ঝুলিয়ে মহড়াও সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে কারা সূত্র। বিচারিক আদালতে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় এসেছিল ২০০১ সালে। এরপর ২০০৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে চূড়ান্ত রায় আসে। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সময় বহু বছর আগেই পেরিয়ে যাওয়ায় আবদুল মাজেদ সে সুযোগ পাওয়ার অধিকার রাখেন না বলে এর আগে জানিয়েছিলেন এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। এর ফলে ফাঁসির দড়ি এড়ানোর একমাত্র সুযোগ বাকি ছিল সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়া। প্রাণভিক্ষার আবেদনও খারিজ হওয়ায় তাকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতেই হচ্ছে। তবে দন্ড কার্যকর করার আগে সাধারণত পরিবারের সদস্যদের শেষবার দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার বছরের মধ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে একদল বিপথগামী সেনাসদস্য। এরপর সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের আমলে এই হত্যাকান্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর বিচারের পথ খোলে, মামলা হওয়ার পর ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকার তখনকার জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল এ মামলার রায়ে আবদুল মাজেদসহ ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদন্ড দেন। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাই কোর্টের রায়ে ১২ আসামির মৃত্যুদন্ডাদেশ বহাল থাকে। এরপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর চূড়ান্ত রায়ে হাই কোর্টের সিদ্ধান্ত বহাল রাখলে পাঁচ আসামি রিভিউ আবেদন করেন। রিভিউ আবেদনও খারিজ হয়ে যাওয়ার পর ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে আসামি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনের (আর্টিলারি) মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর করা হয়। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে আবদুল মাজেদ ছাড়াও খন্দকার আবদুর রশিদ, এ এম রাশেদ চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন খান সে সময় পলাতক ছিলেন।

গত মঙ্গলবার ভোরে মাজেদকে গ্রেফতার করার পর আদালতের মাধ্যমে তাকে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর বুধবার তাকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হলে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ মো. হেলাল চৌধুরী দন্ড কার্যকরের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন। সেই পরোয়ানা কারাগারে পৌঁছালে কারা কর্তৃপক্ষ নিয়ম অনুযায়ী আসামি মাজেদকে তা পড়ে শোনায়। এরপর রাতে তার প্রাণভিক্ষার আবেদন করার খবর আসে।

সর্বশেষ খবর