শনিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা আক্রান্ত ২২ চিকিৎসক আইসোলেশনে ৮৭ জন

বেশির ভাগই বসছেন না বেসরকারি হাসপাতালে

মাহবুব মমতাজী

বৈশ্বিক মহামারী করোনার থাবায় দিন দিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এসব রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন চিকিৎসকরাও। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার পপুলার হাসপাতালের এক চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হন। তার সংস্পর্শে আসা পঁচি চিকিৎসককে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে বলা জানা গেছে।

একইদিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের চর্ম রোগ বিভাগের চেয়ারম্যান ও সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শহীদুল্লাহ শিকদারের নমুনা পরীক্ষাতেও করোনা পাওয়া গেছে। দেশে এই পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২২ জন চিকিৎসক, আইসোলেশনে আছেন আরও ৮৭ জন। তাদের বেশিরভাগই সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক।

বাংলাদেশ ডক্টর ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, চিকিৎসকদের আইসোলেশনে থাকার সংখ্যাটি হু হু করে বাড়ছে। আইসোলেশনে থাকা চিকিৎসকদের অনেকেই মেসে বা আলাদা বাসা নিয়ে থাকেন। তাদের খাবার থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সব কিছু সরবরাহ করছে সংস্থাটি।

এদিকে অভিযোগ পাওয়া গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর বেসরকারি সব হাসপাতাল ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকলেও চিকিৎসক পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। কয়েকটি জায়গায় শুধু রিসেপশনিস্ট আর নার্সদের দেখা মিলছে। জানা গেছে, ঢাকার মোহাম্মদপুরের তিনটি ক্লিনিকে পাওয়া যাচ্ছে শুধু রিসেপশনিস্ট ও কয়েকজন নার্সকে। সেখানে নেই কোনো চিকিৎসক। তারা জানান, রোগী এলে চিকিৎসককে ফোন করা হলে তারা হাসপাতালে আসেন। তবে এর আগে রোগীর সমস্যা তারা জেনে নেন। সর্দি কাশি থাকলে কোনো কথা না বলে সরাসরি বিদায় করে দেন এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে রোগীদের কাছ থেকে।

ধানমন্ডি ও কলাবাগানের তিনটি নামকরা বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে গিয়েও একই চিত্র পাওয়া গেছে। সেখানে ডিউটি চিকিৎসক থাকলেও তারা রোগের লক্ষণ শুনে ‘চিকিৎসক নেই’ বলে জানিয়ে দেন, পরে যোগাযোগ করতে বলেন। কেউ কেউ ফোন নম্বর রেখে দিয়ে বলেন ‘চিকিৎসক আসলে যোগাযোগ করা হবে’। এসব হাসপাতাল থেকে অনেককেই হতাশ হয়ে ফিরে যেতে দেখা গেছে।

দেশে করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ক্যান্সার, প্রসূতি মায়ের সেবা, দুর্ঘটনায় আহতসহ অন্যান্য নিয়মিত রোগের চিকিৎসা মিলছে না বলে রোগীরা অভিযোগ করে আসছেন। সরকারি হাসপাতালগুলোর জরুরি বিভাগ খোলা থাকলেও বহির্বিভাগ থাকে আধাবেলা। ফলে সাধারণ রোগের চিকিৎসার জন্য রোগীরা কোথায় যাবেন- এখনো বুঝে উঠতে পারছেন না। সাধারণ জ্বর এবং সর্দির জন্য বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে একটি আলাদা ‘ফিভার ক্লিনিক’ খোলা হলেও সেখানে প্রচ- ভিড়। সবার পক্ষে তাই সেবা নেওয়া সম্ভব হয় না। 

এদিকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অধীনে ৬৯টি হাসপাতাল ২৪ ঘণ্টাই খোলা রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন। এর নেতারা বলছেন, করোনাসহ কোনো রোগীকেই ফেরানো হবে না। করোনা হলে তাদের নির্ধারিত হাসপাতালে পাঠানো হবে। 

জানা গেছে, সারা দেশে ৬৫৪টি হাসপাতাল ও ২৫ হাজার চিকিৎসক নিয়ে সরকারি হাসপাতালগুলো লড়াই করছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে। এসব হাসপাতালে সিট আছে ৫১ হাজার ৩১৬টি। কিন্তু এ সময় বেসরকারি হাসপাতালগুলোর চিত্র ঠিক উল্টো। দেশে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক আছে ৫ হাজার ৫৫টি। এসব হাসপাতালে নিয়োজিত আছেন প্রায় ৬০ হাজার চিকিৎসক। এসব হাসপাতালে বেড সংখ্যা ৯০ হাজার ৫৮৭টি। জেলা শহরের অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধ। রাজধানীর অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালের বেড খালি। সেখানে এখন তেমন কোনো রোগী নেই।

সর্বশেষ খবর