শনিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

বিদেশে ১৬৯ বাংলাদেশির মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া কভিড-১৯ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিদেশে প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশিদের মৃত্যু ঘটছে। এ পর্যন্ত এই ভাইরাসে প্রাণ গেছে ১৬৯ জন বাংলাদেশির। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ১০৫ জন, যুক্তরাজ্যে ৪৩ জন, সৌদি আরবে ৭ জন এবং ইতালিতে ৬ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া কাতারে ৩ এবং ওমান, স্পেন, সুইডেন, লিবিয়া ও গাম্বিয়ায় একজন করে বাংলাদেশি মারা গেছেন।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গতকাল আরও চার বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। আগের দিন মারা গেছেন ৮ জন। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ১০৫ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। গত বুধবার নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কৃষিবিদ শাহানা আহমেদ তালুকদার আঁখি (৪৫), অ্যাডভোকেট সরোয়ার হোসেন (৭১), নিউজার্সির প্যাটারসনে সিলেটের বদরুল আলম (৪৩), সুনামগঞ্জের মইনুল হক জুয়েল (৪৫), সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বরের শামীম আহমেদ (৪১), ভোলার সাবেক কমিশনার আবুল কাশেম কাজল (৫৪) ইন্তেকাল করেন। তারা সবাই বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বলে হাসপাতালের উদ্ধৃতি দিয়ে স্বজনরা জানান। গত ৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার মারা গেছেন ব্রঙ্কসে একটি হাসপাতালের সংক্রমণ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ-চিকিৎসক ড. রেজা শাহ চৌধুরী (৫৭)। একই দিন ব্রঙ্কসের নর্থ সেন্ট্রাল হাসপাতালে মারা গেছেন ড. মোহাম্মদ ইফতেখার (৫৫) নামক আরেক বাংলাদেশি। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় রোগী থেকে তাদের দেহে করোনা ছড়িয়ে পড়েছিল বলে হাসপাতালের উদ্ধৃতি দিয়ে কমিউনিটি লিডার মোহাম্মদ এন মজুমদার জানান। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের মৃত্যুর খবর প্রকাশ করেছেন তাদের স্বজনরা। এর মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও তিন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন স্বজনরা। তবে এর বাইরেও আরও কয়েকজনের মৃত্যুর খবর বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় এসেছে। সরকারি সূত্রে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান প্রকাশিত না হলেও সোশ্যাল মিডিয়ার পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে ব্রিটেনে এ পর্যন্ত ৪৩ জন বাংলাদেশি মৃত্যুবরণ করেছেন।

যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামের স্পাকর হিলে বসবাসকারী গোলাম রাব্বানী গত বুধবার বার্মিংহামের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। তিনি স্ত্রী, ৪ মেয়ে ও ১ ছেলে রেখে গেছেন। তার দেশের বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়াহরি গ্রামে। তিনি কমিউনিটির ওয়ার্কসহ অসহায় মানুষদের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। এদিকে, পূর্ব লন্ডনের বাসিন্দা আফছার উদ্দিন বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে লন্ডনের একটি হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মৃত্যুবরণ করেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তার দেশের বাড়ি সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার মোল্লাপুর গ্রামে। এই মৃত্যুর খবর ফেসবুকে নিশ্চিত করেছেন মরহুমের শ্যালক যুক্তরাজ্য যুবদল নেতা সৈয়দ লায়েক মোস্তফা।

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া কভিড-১৯ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম কোন প্রবাসীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে। বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৪১ বছর বয়সী এক প্রবাসী নাগরিক মারা গেছেন বলে এমন তথ্য জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইতালিতে আরও দুই বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ইতালিতে ছয় প্রবাসী বাংলাদেশি মারা গেলেন। বৃহস্পতিবার ইতালির রাজধানী রোমে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান বাংলাদেশি মো. আনোয়ার হোসেন হিরু (৭২)। এ ছাড়া একই দিন মিলানের একটি হাসপাতালে মো. মিজান (৪৫) নামের আরও এক প্রবাসীর মৃত্যু হয়। গত ২৮ মার্চ করোনার লক্ষণ নিয়ে রাজধানী রোমের তরবেরগাতা হাসপাতালে ভর্তি হন হিরু। বৃহস্পতিবার রাত ৪টার দিকে তার মৃত্যু হয়। হিরুর গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানার হলতা গুলিশাখালী (লক্ষণা) এলাকায়। তার দুই ভাই ও এক বোন ইতালিতে থাকেন। তার একমাত্র মেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় খালার কাছে থেকে পড়াশোনা করেন।

সৌদি আরবে আরও দুই প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। গত ৭ এপ্রিল দেশটির অন্যতম পবিত্র নগরী মদিনা শরিফে মারা যান তারা। এ নিয়ে সৌদিতে করোনায় সাত বাংলাদেশি মারা গেলেন। তারা হলেন- চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার পলিগ্রামের ফয়েজ উল্লাহর ছেলে মোহাম্মদ রহিম উল্লাহ ও নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার বোরো গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের ছেলে খোকা মিয়া। এর আগে সৌদিতে আরও পাঁচ বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল জেদ্দার শ্রম কাউন্সেলর আমিনুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর