রবিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা
এ মুহূর্তের পরামর্শ

করোনাভাইরাস তিন পক্ষের করণীয়

অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী

করোনাভাইরাস তিন পক্ষের করণীয়

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ধীরে ধীরে একটা বড় সমস্যার আকার ধারণ করছে। এ বাস্তবতা স্বীকার করে নিয়ে করোনার বিরুদ্ধে আমাদের কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আজ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। যত সমস্যাই থাকুক না কেন মানুষকে বাঁচতে হবে, তাকে খাদ্য গ্রহণ করতে হবে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহের জন্য বাজারে যেতে হবে। এ জন্য আমার মতে সরকার, ক্রেতা ও বিক্রেতা- এই তিন পক্ষ বিশেষ কতগুলো উদ্যোগ নিলে করোনাভাইরাস ছড়ানো বন্ধ অথবা চিহ্নিত করা সহজ হবে।

সরকার পক্ষ

১. কাঁচাবাজার সপ্তাহে চার দিন বা তার চেয়ে কম দিন খোলা রাখা যায় কিনা, এটা সরকারকে বিবেচনা করতে হবে।

২. কয় ঘণ্টা বাজার খোলা রাখা যাবে তারও নির্দেশনা দিতে হবে।

৩. বাজার শুরু হওয়ার আগে এবং দুই ঘণ্টা পর পর ব্লিচিং পাউডার সলিউশন দিয়ে বাজার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

৪. বাজারে একটু দূরে দূরে হাত ধোয়ার জন্য সাবান, পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে। যাতে ক্রেতা-বিক্রেতা  উভয়েই  হাত ধুতে পারেন।

৫. বাজারে ঢুকতে হলে ভালো মাস্ক পরা সরকারের নির্দেশে বাধ্যতামূলক করতে হবে।

ক্রেতা

১. প্রয়োজনীয় দ্রব্যের তালিকা করে রাখুন এবং সপ্তাহে এক দিন বাজার করুন।

২. ৫০ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সী ডায়াবেটিস রোগী, হৃদরোগী, হাঁপানির রোগী, ফুসফুসের রোগী, ক্যান্সার চিকিৎসাধীন রোগী কিছুতেই বাজারে যাবেন না।

৩. সবদিক দিয়ে সুস্থ অপেক্ষাকৃত কম বয়স্ক মানুষ বাজারে যাবেন।

৪. স্বল্পতম সময়ে বাজার শেষ করুন।

৫. ২ মিটার (৬ ফুট) দূরে দাঁড়িয়ে বিক্রেতার সঙ্গে নিচু গলায় কথা বলুন। জোরে কথা বললে বা হাঁচি-কাশি দিলে ৬ ফুট পর্যন্ত বাষ্পকণা ছড়াতে পারে।

৬. যথাসম্ভব চওড়া ভালো মাস্ক ব্যবহার করুন। পলিথিনের (শুধু একবার ব্যবহারযোগ্য) গ্লাভস ব্যবহার করলে ভালো। বাড়ি ফিরে গ্লাভস খুলে সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন।

৭. মাস্ক ও পরনের কাপড় সিদ্ধ করতে দিন। গোসল করে ফেললে ভালো হয়।

৮. বাজার থেকে আনা জিনিসগুলোর পলিথিন ব্যাগ একবার ব্লিচিং পাউডারের পানি দিয়ে ধুয়ে তারপরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

বিক্রেতা

১. ৫০ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সী ব্যক্তি যারা ডায়াবেটিস রোগী, হৃদরোগী, হাঁপানির রোগী ও ফুসফুসের রোগী এবং ক্যান্সারের চিকিৎসাধীন রোগী বাজারে জিনিসপত্র বিক্রি করতে আসবেন না। কম বয়স্ক নিরোগদেহী লোককে বিক্রেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

২. বিক্রেতাকে মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে।

৩. ক্রেতা ও বিক্রেতা কথা বলা কমানোর জন্য প্রত্যেক পণ্যের দাম সাদা কাগজে লিখে পণ্যের ওপরে রাখুন। তাতে কথা বলার প্রয়োজন কমে যাবে।

৪. পুরনো টাকা লেনদেনের মাধ্যমেও করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে, সেজন্য পলিথিনের প্যাকেটের ভিতর টাকা রাখুন। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্যই এটা প্রয়োজন।

৫. ক্রেতা-বিক্রেতা বাড়িতে গিয়ে মাস্ক এবং কাপড় সিদ্ধ করে নিন। অথবা ব্লিচিং পাউডার সলিউশনে ডুবিয়ে রাখুন। সম্ভব হলে গোসল করুন।

সরকার পক্ষ, ক্রেতা পক্ষ এবং বিক্রেতা পক্ষ এই নিয়মগুলো মানলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে একটি সার্থক পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব। সরকার পক্ষ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

লেখক : সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং রোগ বিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক।

অনুলিখন : জাহাঙ্গীর আলম

সর্বশেষ খবর