রবিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

অনুপস্থিত থাকায় ছয় চিকিৎসক বরখাস্ত

কর্মস্থলে না থাকা কর্মকর্তাদের তালিকা চেয়ে চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের ছয় চিকিৎসককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা বিনা অনুমতিতে হাসপাতালে অনুপস্থিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা বলেন, কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের এই ছয়জন চিকিৎসক কাজে যোগদান করেননি। এ জন্য স্বাস্থ্য সচিবের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ সেহাব উদ্দীনের পাঠানো তালিকা সূত্রে জানা যায়, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (এ্যানেস্থিসিওলজি) ডা. হীরস্ব চন্দ্র রায়, মেডিকেল অফিসার ডা. উর্মি পারভিন, মেডিকেল অফিসার কাওসারউল্লাহ অনুপস্থিত রয়েছেন। মেডিকেল অফিসার ডা. ফারহানা হাসানাত ইস্তফা দিয়েছেন। জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) ডা. শারমিন হোসেন ও আবাসিক চিকিৎসক (মেডিসিন) ডা. মুহাম্মদ ফজলুল হক কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এ কারণে এই ছয় চিকিৎসককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এই চিকিৎসকদের রাজধানীর উত্তরার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য পদায়ন করা হয়েছিল।

কর্মস্থলে অনুপস্থিত কর্মকর্তাদের তালিকা চেয়ে চিঠি : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার-ঘোষিত সাধারণ ছুটির সময় যেসব কর্মকর্তা কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন, তাদের তালিকা চেয়েছে সরকার। অনুপস্থিত এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অনুপস্থিত কর্মকর্তাদের তালিকা চেয়ে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কাছে চিঠি দিয়েছে। ৯ এপ্রিল এ চিঠি পাঠানো হয়েছে। জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের কাছে কর্মস্থলে অনুপস্থিত কর্মকর্তাদের এই তালিকা চাওয়া হয়েছে। সরকার বারবার বলছে, সরকারের কর্মচারীরা তাদের কর্মস্থলে থেকে এই সংকট মোকাবিলা করবেন। কিন্তু কেউ কেউ এটিকে ছুটি হিসেবে নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। অথচ ত্রাণ বিতরণের সময় ইউএনওরা ট্যাগ অফিসারকে অনেক ক্ষেত্রে পাচ্ছেন না। কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একজন সরকারি কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, যাদের বলা হয় ট্যাগ অফিসার। জনপ্রশাসন সচিব বলেন, ‘অনেক জায়গায় সরকারি কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন না। ফলে ত্রাণের জিনিসপত্র বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, এদিক-সেদিক চলে যাচ্ছে। এসব দেখার দায়িত্ব তো ওই সরকারি কর্মকর্তারই। ফলে আমরা বলেছি যারা দায়িত্ব পালন করছেন না তাদের তালিকা পাঠাতে। এই তালিকা পাওয়ার পর আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’ তিনি বলেন, ‘১০ টাকা কেজির চাল নিয়ে এদিক-সেদিক হচ্ছে। ১০ টাকা মূল্যের চালের ডিলাররা এ কাজগুলো করছেন। যখন চাল বিতরণ করা হয়, কেউ সর্বোচ্চ ৫ কেজি কিনতে পারেন। দেখবেন এসব চাল বিতরণের আশপাশে দাঁড়িপাল্লা নিয়ে বসে থেকে চাল কেনেন অনেকে। অনেকে ৫ কেজি চালের মধ্য থেকে ৩ কেজি বিক্রি করে ওই টাকা দিয়ে অন্য জিনিসপত্র কিনে বাড়ি যান, এটা হয়।’ তিনি বলেন, ‘এভাবে চাল কেনা অন্যায়। আমরা ইউএনওদের বলেছি, দাঁড়িপাল্লা নিয়ে বসে যারা ত্রাণ কেনেন, এদের ধরতে হবে। পুলিশ দিয়ে এদের তাড়িয়ে দিতে হবে। কারণ ১০ টাকার চালের আসল দাম তো ৫০ টাকা। ওই চাল তারা একত্র করে বাজারে বিক্রি করেন।’ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়, নির্দেশনার পরও যারা কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন, তাদের তালিকা পাঠাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকেও তাদের তালিকা চেয়ে বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিদের চিঠি পাঠানো হয়েছে। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় পরে তিন দফায় এর মেয়াদ বাড়িয়ে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।

 প্রথম দফায় ছুটি ঘোষণার আগেই ২৪ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদর অবশ্যই নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করার নির্দেশনা দেয়। ছুটি ঘোষণার পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ কর্মস্থলে অবস্থানের নির্দেশ দিয়ে আদেশ জারি করে।

 

জানা গেছে, সরকারের এই নির্দেশনা অমান্য করে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ১১ জন সরকারি চাকুরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। এসব সরকারি কর্মকর্তাকে উপজেলা কন্ট্রোল রুম এবং ইউনিয়নে ট্যাগ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হলেও তারা কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি কর্মহীনদের তাৎক্ষণিক মানবিক সহায়তা দিতে চার দফায় ২৮ কোটি ৪৫ লাখ ৭২ হাজার ২৬৪ টাকা এবং ৬৫ হাজার ৯৬৭ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা কেজি দরে হতদরিদ্রদের মধ্যে চাল বিক্রি করা হচ্ছে। এসব কর্মসূচি চলাকালে কয়েক দিন ধরেই দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন এলাকা থেকে ত্রাণের চাল চুরি, আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

সর্বশেষ খবর