মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

কলকাতার পার্কস্ট্রিটের মাস্টার মশাই বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদ

প্রতিদিন ডেস্ক

কলকাতার পার্কস্ট্রিটের মাস্টার মশাই বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদ

কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের বেডফোর্ড লেনের ভাড়া বাড়িতে বাস করতেন বঙ্গবন্ধুর খুনি আবদুল মাজেদ। ১৯৯৬ সালে সাধারণ নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মাজেদ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল আদালত বঙ্গবন্ধু হত্যার দায়ে মাজেদসহ ১২ জনকে মৃত্যুদন্ড দেয়। গত ১২ এপ্রিল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। কলকাতায় মাজেদকে কখনো উচ্চৈঃস্বরে কথা বলতে দেখেনি কেউ। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। টিউশনি করে সংসার চালাতেন। তাই পাড়া-পড়শিরা তাকে ‘মাস্টারমশাই’ বলেই জানতেন।

ঢাকার মিরপুরে ৭ এপ্রিল ধরা পড়েন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি আবদুল মাজেদ। সংবাদমাধ্যমে তার ছবি দেখে কলকাতার বেডফোর্ড লেনের বাসিন্দারা চমকে ওঠেন- এর নাম আবদুল মাজেদ? না, না। ইনি তো ইংরেজির মাস্টারমশাই আলি আহমেদ। এলাকার লোকে জানত, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে থেকে পাস করেছেন মাস্টারমশাই। টিউশনি করে সংসার চালাতেন তিনি। প্রথমে তালতলার ভাড়া বাড়িতে একাই থাকতেন মাজেদ। পরে পার্ক স্ট্রিটে চলে আসেন।

২০১১ সালে তিনি তাঁর থেকে ৩২ বছরের ছোট উলুবেড়িয়ার সেলিনা বেগমকে বিয়ে করেন। তাঁদের ছয় বছরের এক মেয়ে রয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরেই ৭২ বছর বয়সী মাজেদের শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কলকাতা পিজি হাসপাতালে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হয়।

২২ ফেব্রুয়ারি পিজি হাসপাতাল থেকে সেই রিপোর্ট আনতে বাড়ি থেকে বের হন আলি আহমেদ। সেটাই শেষ, আর বাড়ি ফেরা হয়নি আলির। স্বভাবতই উদ্বিগ্ন স্ত্রী রাতে পার্ক স্ট্রিট থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করেন। তদন্তে শুরু করে পার্ক স্ট্রিট থানা। পিজি হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ ঘাটলেও হদিস মেলে না আলি আহমেদের।

এরপর পুলিশ আলি আহমেদ অর্থাৎ মাজেদের ভাড়া বাড়িতে একটি ব্যাগ পায়। সেই ব্যাগে তল্লাশি চালিয়ে সিম কার্ড, আধার কার্ড, ভোটার আইডি, ভারতীয় পাসপোর্ট এবং এক মহিলাসহ তিনজন শিশুর ছবি পাওয়া যায়। স্ত্রী সেলিনা পুলিশকে জানায়, আলি তার ব্যাগ ও অন্যান্য ব্যক্তিগত জিনিসে কাউকে হাত দিতে দিতেন না।

মহল্লায় খুব একটা মেলামেশা করতেন না তিনি। টিউশনির পাশাপাশি বড়জোর এলাকার এক চায়ের দোকান, রেশন দোকান এবং এক বিল্ডার্সের দোকানে আড্ডা দিতেন মাজেদ। বাড়ির দরজায় সব সময় তালা লাগানো থাকত। বাইরের কাউকে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হতো না। এক আধ বছর নয়, এভাবেই আঠারো-উনিশ বছর কলকাতায় আত্মগোপন করেছিলেন আবদুল মাজেদ।

সর্বশেষ খবর