শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

আগেই সতর্ক করা হয়েছিল সেই ছয় ডাক্তারকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ছয় ডাক্তারকে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল। কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছিলেন ওই হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক। তিন দিনের মধ্যে তাদের জবাব দিতেও বলা হয়েছিল। বরখাস্ত হওয়া ছয় ডাক্তারের মধ্যে গত ১০ মার্চ ডা. হীরস্ব চন্দ্র রায়কে, ২০ মার্চ ডা. মুহাম্মদ ফজলুল হককে, ২১ মার্চ ডা. ফারহানা হাসানাতকে, ৩০ মার্চ ডা. কাওসার উল্লাহ ও ডা. শারমিন হোসেনকে এবং ৪ এপ্রিল ডা. উর্মি পারভিনকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়। কুয়েত-বাংলাদেশ  মৈত্রী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ সেহাব উদ্দীন স্বাক্ষরিত এসব নোটিসের অনুলিপি স্বাস্থ্য সচিব, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন), স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের দেওয়া হয়।

জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেস্থিসিওলজি) ডা. হীরস্ব চন্দ্র রায়ের কারণ দর্শনোর নোটিসে বলা হয়, ‘গত ১৩ ফেব্রুয়ারি কাজে যোগদানের পর হতে অদ্যাবধি (১০ মার্চ পর্যন্ত) সম্পূর্ণ বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন। যার ফলে অত্র দফতরের কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। আপনার এমন কার্যকলাপের জন্য কেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে না তার ব্যাখ্যা অত্র পত্র জারির তারিখ হতে তিন দিনের মধ্যে অফিস চলাকালীন সময়ে (তত্ত্বাবধায়কের কাছে) লিখিত জবাব দাখিলের জন্য বলা হলো। অন্যথায় আপনার বিরুদ্ধে সরকারি বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন পক্ষকে অবহিত করা হবে।’

মেডিকেল অফিসার ডা. ফারহানা হাসানাতের কারণ দর্শানোর নোটিসে বলা হয়, ‘গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কাজে যোগদানের পর হতে অদ্যাবধি (২১ মার্র্চ) সম্পূর্ণ বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন। যার ফলে অত্র দফতরের কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে।’

মেডিকেল অফিসার ডা. কাওসার উল্লাহর কারণ দর্শানোর নোটিসে বলা হয়, ‘গত ২১ মার্চ কাজে যোগদানের পর হতে অদ্যাবধি (৩০ মার্র্চ) সম্পূর্ণ বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন। যার ফলে অত্র দফতরের কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। মেডিকেল অফিসার ডা. উর্মি পারভিনের কারণ দর্শানোর নোটিসে বলা হয়, ‘গত ৩১ মার্চ কাজে যোগদানের পর হতে অদ্যাবধি (৪ এপ্রিল) সম্পূর্ণ বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন। যার ফলে অত্র দফতরের কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে।’ এই চার ডাক্তারকে নোটিস জারির তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। তা না হলে সরকারি বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে বলেও নোটিসে উল্লেখ করা হয়।

এ ছাড়া আবাসিক চিকিৎসক (মেডিসিন) ডা. মুহাম্মদ ফজলুল হকের কারণ দর্শানোর নোটিসে বলা হয়, ‘আপনি অফিসে উপস্থিত থেকেও কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার ব্যাপারে অনিচ্ছুক। আপনি কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের কাছে গিয়ে চিকিৎসা প্রদান করেন না।’ একইভাবে জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) ডা. শারমিন হোসেনের কারণ দর্শানোর নোটিসে বলা হয়, ‘আপনি অফিসে উপস্থিত থেকেও কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার ব্যাপারে অনিচ্ছুক। আপনি কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের কাছে গিয়ে চিকিৎসা প্রদান করেন না। এমন কার্যকলাপের জন্য কেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে না তার ব্যাখ্যা পত্র জারির তারিখ হতে তিন দিনের মধ্যে অফিস চলাকালীন সময়ে (তত্ত্বাবধায়কের কাছে) লিখিত জবাব দাখিলের জন্য তাদের বলা হলো। তা না হলে সরকারি বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন পক্ষকে অবহিত করা হবে’ বলে এই দুই ডাক্তারের নোটিসে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে মেডিকেল অফিসার ডা. ফারহানা হাসানাত গত ২৫ মার্চ কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বরাবর দেওয়া ইস্তফাপত্রে লিখেছেন, ‘আমি নিম্ন স্বাক্ষরকারী অত্র হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার (সংযুক্তিতে) হিসেবে কর্মরত আছি। আমার বড় ছেলে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত এবং সুস্থ না হওয়ায় চিকিৎসাধীন আছেন। আমার দ্বিতীয় ছেলেরও শাসকষ্ট হচ্ছে। আমাকে ওদের সময়মতো ঔষধপত্র এবং সেবা দিতে হয়। এ অবস্থায় আমার সরকারি দায়িত্ব পালন করা কষ্টসাধ্য। এসব কারণে আমি চাকরি হতে ইস্তফা দিতে ইচ্ছুক। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মহোদয়ের মর্জি হয়।’ পরে ওইদিন ইস্তফা দেওয়ার বিষয়টি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে লিখিতভাবে জানান। উল্লেখ্য, গত ১১ এপ্রিল এই ছয় ডাক্তারকে বরখাস্ত করা হয়। পরে ডাক্তাররা গণমাধ্যমে বিভিন্ন বক্তব্য দেন। জানা গেছে, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেস্থিসিওলজি) ডা. হীরস্ব চন্দ্র রায়, মেডিকেল অফিসার ডা. উর্মি পারভিন, মেডিকেল অফিসার কাওসার উল্লাহ অনুপস্থিত ছিলেন। মেডিকেল অফিসার ডা. ফারহানা হাসানাত ইস্তফা  দেন। জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) ডা. শারমিন হোসেন ও আবাসিক চিকিৎসক (মেডিসিন) ডা. মুহাম্মদ ফজলুল হক কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এ কারণে এই ছয় চিকিৎসককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর