মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

টাকা না ছাপিয়ে বিকল্প চিন্তার পরামর্শ সিপিডির

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাসের কারণে বেকার হওয়া শ্রমজীবী মানুষের প্রায় ২ কোটি পরিবারে নগদ সহায়তা দিতে সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি। সংস্থাটি প্রতি পরিবারকে অন্তত দুই মাস ৮ হাজার টাকা করে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে নগদ প্রণোদনা দিতে প্রস্তাব করেছে। এতে খরচ হবে ২৯ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ফলে ৭ কোটি ৫৭ লাখ দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ সুবিধা পাবেন বলে মনে করছে সিপিডি। সংস্থাটি বলেছে, টাকা না ছাপিয়ে বিকল্প চিন্তা করতে হবে।

গতকাল সিপিডি আয়োজিত ‘কভিড-১৯-এ সরকারের পদক্ষেপসমূহের কার্যকারিতা এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও আয় নিরাপত্তা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলা হয়। বক্তব্য দেন সিপিডির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন ও গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন জ্যেষ্ঠ গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান। সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি বলেছে, দেশের দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের শ্রমজীবীদের জীবিকা নির্বাহ এবং একই সঙ্গে লকডাউনে সহায়তা করতে নগদ প্রণোদনা দিতে হবে। মাসে ১০ হাজারের নিচে আয় এমন ১ কোটি ৭০ লাখ খানা বা পরিবারে (চারজনের) দুই মাসে ১৬ হাজার টাকা দিলে সরকারের ব্যয় হবে ২৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। এর মাধ্যমে ৬ কোটি ৬৪ লাখ মানুষকে এই বিপদের দিনে সুবিধা দেওয়া যাবে। আর মাসিক আয় ১১ হাজার টাকার নিচে বিবেচনায় নিলে পরিবারের সংখ্যা হবে ১ কোটি ৯০ লাখ এবং সুবিধাভোগী মানুষের সংখ্যা হবে ৭ কোটি ৫৭ লাখ। এ ক্ষেত্রে সরকারের খরচ হবে ২৯ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা।

সিপিডি বলেছে, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বাইরে সিপিডি এ প্রণোদনা দেওয়ার সুপারিশ করেছে। আর ওই প্রণোদনার চাপ সামলাতে সরকারকে কিছু খাতে ব্যয় কমানোর পরামর্শ দিয়েছে। সরকারের ইতিমধ্যে ঘোষিত বিভিন্ন প্রণোদনা পদক্ষেপ সম্পর্কে সিপিডি বলেছে, এসব প্রণোদনার মধ্যে সরাসরি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ নেই। এ ছাড়া এর ৯৩ শতাংশই ব্যাংকনির্ভর, যার বড় অংশই অর্থায়নভিত্তিক। ব্যাংক খাতের স্বাস্থ্য আগে থেকেই ভালো নেই। এ খাতের জন্য প্রণোদনা বাস্তবায়ন বেশ চ্যালেঞ্জিং। অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই ক্রান্তিকালে চাল চোরদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতের সংকট যত বাড়বে, আর্থিক খাতের সংকট তত ঘনীভূত হবে। এজন্য স্বাস্থ্য খাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। স্বাস্থ্য খাতের জন্য প্রাথমিকভাবে বরাদ্দ দেওয়া ২৫০ কোটি টাকা আরও বাড়াতে হবে।

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, আমাদের মনে হয়, টাকা ছাপানোর এখনো সময় আসেনি। এখন সরবরাহের ক্ষেত্রে ডিপ্রেশন রয়েছে, মানুষের চাহিদা নেই। এ সময় মানুষের হাতে টাকা দিলে মূল্যস্ফীতি হবে। আমরা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে সাহায্য আনতে পারি। সুতরাং, টাকা ছাপানোর আগে অনেক চিন্তাভাবনা করা দরকার।

তিনি বলেন, সরকারের প্রণোদনায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কোনো সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ নেই। যদিও প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন ঘোষণায় বলেছেন বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ করা হবে, ভিজিএফ, ভিজিডির মাধ্যমে খাদ্য বিতরণ করা হবে, খোলাবাজারে চাল বিক্রি করা হবে, বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হবে এবং যারা অনানুষ্ঠানিক খাতে আছে, দিনমজুর, রিকশাচালকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের খাদ্যসহায়তা এবং অর্থসহায়তা দেওয়া হবে। যে প্রণোদনা ঘোষাণা করা হয়েছে, এটার সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। যাতে ক্ষতিগ্রস্ত লোকেরা, ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলো এ প্রণোদনা পায়, যোগ করেন তিনি। মূল প্রতিবেদনে তৌফিকুল ইসলাম খান সর্বশেষ খানা আয় জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে বলেন, যাদের আয় ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা, তাদের সাহায্যের আওতায় আনার প্রস্তাব করছে সিপিডি। আর যাদের মাসিক আয় ১০ হাজার টাকা, তাদের প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। সিপিডির হিসাবে প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ পরিবারকে সাহায্য দেওয়ার প্রয়োজন। কারণ, আমরা দেখেছি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বড় অংশই বর্তমান সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর বাইরে। বয়স্কদের ৬৬ শতাংশ, শিশুদের ৭০ দশমিক ৬০ শতাংশ, নতুন মা হওয়া নারীদের ৭৯ দশমিক ১০ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের ৮১ দশমিক ৫০ শতাংশ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে নেই।

সর্বশেষ খবর