বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

বাড়ছে আক্রান্ত বাড়ছে মৃত্যু

৪২ জেলায় মোট আক্রান্ত ১২৩১, এক দিনেই ২১৯, ২৪ ঘণ্টায় ৪ জনসহ মোট মৃত্যু ৫০

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাড়ছে আক্রান্ত বাড়ছে মৃত্যু

এক চিকিৎসকসহ গত দুই দিনে ১১ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫০। এর মধ্যে গতকাল দুপুরের আগ পর্যন্ত চারজনের মৃত্যু হয়েছে এবং মঙ্গলবার দুপুরের আগে পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে সাতজনের। মৃত্যুর পাশাপাশি হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও। গত দুই দিনে ৪০০-এর বেশি আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২১৯ এবং মঙ্গলবার সকালের আগে পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হন ২০৯ জন।

জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্য থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগীর খোঁজ মেলে গত ৮ মার্চ; তার ১০ দিনের মাথায় ঘটে প্রথম মৃত্যু। গত দুই দিনের মতো এত বেশি নতুন রোগী ও মৃত্যু বাংলাদেশকে আর দেখতে হয়নি। পরিসংখ্যান অনুসারে, ৭ এপ্রিল শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ৪১, মারা গিয়েছিলেন পাঁচজন। ৮ এপ্রিল শনাক্ত হন ৫৪ জন; মারা যান তিনজন। ৯ এপ্রিল শনাক্ত হন ১১২ জন; মারা যান একজন। ১০ এপ্রিল শনাক্ত হন ৯৪ জন; মারা যান ছয়জন। ১১ এপ্রিল শনাক্ত হন ৫৮ জন; মারা যান তিনজন। ১২ এপ্রিল শনাক্ত হন ১৩৯ জন; মারা যান চারজন। ১৩ এপ্রিল শনাক্ত হন ১৮২ জন; মারা যান পাঁচজন। গত এক দিনে নতুন করে সেরে উঠেছেন আরও সাতজন। সব মিলিয়ে মোট ৪৯ জন এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মোট ১ হাজার ৭৪০টি নমুনা পরীক্ষা করে ২১৯ জনের সংক্রমণের তথ্য পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত মোট পরীক্ষা হয়েছে ১৪ হাজার ৮৬৮টি নমুনা। তিনি বলেন, যে চারজন মারা গেছেন, তার দুজনের বয়স ৭০-এর বেশি। একজনের বয়স ৫০, আরেকজনের ৩৫-এর বেশি। তাদের মধ্যে তিনজন পুরুষ, একজন নারী। ৩৫ বছরের বেশি বয়সের যিনি মারা গেছেন, তারও অন্যান্য সমস্যা ছিল। তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন, পাশাপাশি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছিল। চিকিৎসকরা বলছেন, আগে নমুনা পরীক্ষা করার সুযোগ একটি ল্যাবরেটরিতে সীমাবদ্ধ ছিল, পরীক্ষা করার সুযোগ কম ছিল, তাই রোগী শনাক্ত করা যায়নি। কিন্তু আক্রান্ত প্রথম থেকেই হয়ে এসেছে। যেহেতু এখন টেস্ট ফ্যাসিলিটি বেড়েছে, তাই আক্রান্তের হার জানা যাচ্ছে। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, আমাদের দেশে মৃত্যুর হার অনেক। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে যুক্ত হয়ে বলেছেন, করোনার প্রকোপ প্রতিরোধ করতে হলে করোনা টেস্ট আরও বৃদ্ধি করার বিকল্প নেই। করোনা লক্ষণ দেখা দিলে মানুষকে তা না লুকিয়ে বেশি বেশি টেস্ট করতে হবে। টেস্টিং কিট সরকারের হাতে পর্যাপ্ত রয়েছে। আরও কিট আনা হচ্ছে। টেস্ট বৃদ্ধি করা গেলে আক্রান্তরা শনাক্ত হবে ও ভাইরাসটি বেশি ছড়াতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে তথ্য না লুকিয়ে সবাইকে করোনা টেস্ট করতে এগিয়ে আসতে হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, নতুন চারজন মৃত ব্যক্তির মধ্যে একজন ছিলেন চিকিৎসক। মৃত চিকিৎসককে নিজের ভাইয়ের সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে একজন সম্ভাবনাময় চিকিৎসকের মৃত্যু ভীষণ কষ্টের। তার মৃত্যু আমার নিজের ভাইয়ের মৃত্যুসম কষ্টের। তার মৃত্যুতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ গোটা দেশবাসী কষ্ট পেয়েছেন ও তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যে মৃত চিকিৎসকের রুহের মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। ব্রিফিংয়ে উপস্থিত স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত অবস্থায় একজন স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন ও প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত অনুদান যত দ্রুততম সময়ে মৃত চিকিৎসকের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা জানান।

বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুসারে, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে এই প্রথম শিক্ষার্থীসহ একই গ্রামের দুজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ ঘটনায় চার গ্রাম লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জে তিনজন চিকিৎসকসহ মোট ১৮ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে করিমগঞ্জেই একজন নারী চিকিৎসকসহ তিনজন চিকিৎসক রয়েছেন। বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার পাটাপাড়া গ্রামে জেলার প্রথম একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। করোনা আক্রান্ত ৩৫ বছরের এ যুবক ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আজিমপুর ইউনিয়নের পাতরাইল জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন ছিলেন। সিরাজগঞ্জে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া আদমজী আঞ্চলিক শ্রমিক লীগ নেতা মজিবুর রহমান প্রধানের স্ত্রী ও মেয়েরও পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। পিরোজপুরের দুই উপজেলার দুটি গ্রামে আরও তিনজন করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে পিরোজপুর জেলায় চার ব্যক্তির কভিড-১৯ পজিটিভ পাওয়া গেল। শনাক্ত হওয়া তিন ব্যক্তিই যুবক এবং তারা নারায়ণগঞ্জ থেকে পিরোজপুরে গিয়েছেন। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীর সোনাপুর ইউনিয়নে করোনাভাইরাসে মৃত্যু হওয়া ওই ইতালিপ্রবাসী মোরশেদ আলমের (৪৫) অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীরও করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। এ নিয়ে নোয়াখালীতে করোনা শনাক্ত হয়েছে দ্বিতীয় জনের। গাইবান্ধায় নতুন করে চারজনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তারা একই পরিবারের সদস্য। ওই পরিবারের নারায়ণগঞ্জ-ফেরত এক সদস্যের মাধ্যমে তারা করোনা সংক্রমিত হন। এ নিয়ে জেলায় করোনাভাইরাস পজিটিভ রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১২-তে। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় একই পরিবারের তিনজনসহ আরও পাঁচজন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮। দিনাজপুরের সাতজনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। কুমিল্লায় গত দুই দিনে নতুন করে ১১ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মঙ্গলবার জেলার তিতাস উপজেলায় তিনজন, দাউদকান্দি উপজেলায় দুজন, বুড়িচং উপজেলায় একজন, সদর দক্ষিণ উপজেলায় একজন, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় একজন ও চান্দিনা উপজেলায় একজন আক্রান্ত হন। বুধবার আক্রান্ত হন বরুড়া ও তিতাস উপজেলার দুজন। তাদের মধ্যে কয়েকজন নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছেন। কয়েকজন স্বজন থেকে আক্রান্ত হয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আরও দুজন প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে একজন নারী ও একজন পুরুষ। তাদের বাড়ি জেলার আখাউড়া উপজেলায়। এ নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ১২-তে দাঁড়িয়েছে। কিশোরগঞ্জে তিনজন চিকিৎসকসহ মোট ২৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে করিমগঞ্জে একজন নারী চিকিৎসকসহ তিনজন চিকিৎসক রয়েছেন। গতকাল নতুন করে পাঁচজন শনাক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে সদর উপজেলায় দুজন, তাড়াইলে দুজন ও কুলিয়ার চরে একজন। এ ছাড়া কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী ও রৌমারীতে দুজন শনাক্ত হলে এলাকায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর