শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

বিদেশে মারা গেছেন ২২১ বাংলাদেশি

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বিদেশে বাংলাদেশিদের যেন মৃত্যুর মিছিল চলছে। প্রতিদিনই বাংলাদেশির মৃত্যু ঘটছে। এ নিয়ে বিদেশে এ পর্যন্ত বাংলাদেশির মৃত্যু সংখ্যা ২২১ জন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ১৩৭ জন, যুক্তরাজ্যে ৫০ জন, সৌদি আরবে ১৫ জন, কানাডায় ৪ জন, ইতালিতে ৭ জন, কাতারে ৩ জন এবং ওমান, স্পেন, সুইডেন, লিবিয়া ও গাম্বিয়ায় একজন করে বাংলাদেশি মারা গেছেন। যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৪ এপ্রিল নিউইয়র্ক সিটিতে ৭ বাংলাদেশির মৃত্যু সংবাদ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কুষ্টিয়া জেলার দুই প্রবাসী রয়েছেন। এরা হলেন বুলবুল আহমেদ (৪৩) এবং রুবাইতুন্নেসা (৬৭)। হাসপাতালের উদ্ধৃতি  দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে কুষ্টিয়া জেলা সমিতির সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান জানান, উভয়েই ব্রঙ্কসে বসবাস করতেন। কোম্পানীগঞ্জ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য ওয়াজিউল্লাহ খোকনও (৫৫) করোনায় মারা গেছেন বলে অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি মোশারফ হোসেন সবুজ জানিয়েছেন। নিউইয়র্কে বসবাসরত এম রহমান মুক্তা (৫৫) মঙ্গলবার রাত ৮টায় প্রেস-বাইটেরিয়েন হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন বলে জানিয়েছেন নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের নেতা হাসানুজ্জামান। মুক্তা ছিলেন রাজধানী ঢাকার নবাবগঞ্জের শাইনপুকুরের সন্তান। অন্যদিকে, প্রবাসের জনপ্রিয় লোকসংগীত শিল্পী বীণা মজুমদার একই দিন সকালে জ্যামাইকা হসপাতালে মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন সমাজ-সংগঠক মাজেদা এ উদ্দিন। এর আগে ৬ এপ্রিল ব্রঙ্কসের মন্টিফিউর হাসপাতালে আফতাব হোসেন (৭০) নামে আরেক প্রবাসী মারা গেছেন। তিনিও ছিলেন কুষ্টিয়ার সন্তান। এদিকে নিউইয়র্কের ট্যাক্সি ড্রাইভার এবং নোয়াখালীর সন্তান মোহাম্মদ আমিনউল্লাহ (৪৫) মারা গেছেন ৮ এপ্রিল ব্রুকলিনের একটি হাসপাতালে। যুক্তরাষ্ট্রে মারা যাওয়াদের অধিকাংশই পুরুষ এবং অধিকাংশেরই বয়স ছিল ৫০ বছরের অধিক।

এদিকে নিউইয়র্ক সিটিতে করোনায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৬২ জনের লাশের দাফন করা হয়েছে বাংলাদেশ সোসাইটির নিজস্ব গোরস্তানে। সোসাইটির সেক্রেটারি রুহুল আমিন সিদ্দিকী মঙ্গলবার জানান, আরও ৩২৫ জনের কবরের জায়গা রয়েছে। এগুলো প্রবাসীরা ব্যবহার করতে পারবেন। যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। সোমবার পর্যন্ত বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের মৃত্যুর খবর প্রকাশ করেছেন তাদের স্বজনরা। তারপরও অনেকেরই খবর আসছে না সংবাদমাধ্যমে। সরকারি সূত্রে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান প্রকাশিত না হলেও সোশ্যাল মিডিয়ার পরিসংখ্যানেও রয়েছে মতভেদ। করোনায় মৃতদের তালিকা করারও চেষ্টা করছেন সংবাদকর্মীরা। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ইপ্সউইচের বাসিন্দা কবির আহমদ। তিনি গত ১২ এপ্রিল নিজ ঘরে ইন্তেকাল করেন। এ সময় তার বয়স হয়েছিল ৫৮ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে দুই মেয়ে রেখে গেছেন। তার বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার দরবেশপুর গ্রামে। তিনি স্থানীয় সাফোল্ক বাংলাদেশ সোসাইটিসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

মৃত্যুবরণ করেছেন কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব শাহ আলাউর রহমান (আলাউদ্দিন)। ইলফোর্ডে বেনটন রোডের বাসিন্দা আলাউদ্দিন গত ১২ এপ্রিল রবিবার লন্ডনের রমফোর্ডের কুইন্স হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭০। তিনি স্ত্রী, ১ ছেলে ও ১ মেয়ে রেখে গেছেন। তার বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার পালগাঁও জাওয়া গ্রামে। তিনি সুনামগঞ্জের ফিমেইল একাডেমির উন্নয়নে অবদান রেখে গেছেন।

সৌদি আরব প্রতিনিধি জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সৌদি আরবের মদিনায় হাবিবুর রহমান নামের আরও এক বাংলাদেশি মারা গেছেন। বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেদ্দা বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। মৃত হাবিবুর রহমানের বাড়ি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার কনেশতলা গ্রামে।

কাতারে পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশি আক্রান্ত : কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ জানান, কাতারে পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সেখানকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসাধীন থাকা তিন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। কাতারে কভিড-১৯ রোগের সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে থাকায় বাংলাদেশিদের আক্রান্তের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে কর্মকর্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ঢাকার সরকারি কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যমতে, কাতারে বর্তমানে প্রায় সাড়ে তিন লাখ বাংলাদেশি কাজ করছেন।

সর্বশেষ খবর