শুক্রবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

সারা দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা

অতি জরুরি কাজ ছাড়া বাইরে নয়, সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা কোনোভাবেই ঘর ছাড়া যাবে না, অমান্যে কঠোর সাজা

নিজস্ব প্রতিবেদক

সারা দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকিতে এখন পুরো বাংলাদেশ। গতকাল সরকারিভাবে এ ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) সংক্রমণ ঘটেছে। হাঁচি, কাশি ও পরস্পরের মেলামেশার কারণে এ রোগের বিস্তার ঘটে। বিশ্বে এ রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, এর একমাত্র প্রতিষেধক হচ্ছে পরস্পর থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থান করা। যেহেতু একে অন্যের সঙ্গে মেলামেশা নিষিদ্ধ ছাড়া সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, সে কারণেই বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এ রোগের সংক্রমণ ঘটেছে। তাই সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮-এর ১১ (১) ধারার ক্ষমতাবলে সমগ্র বাংলাদেশকে সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করা হলো।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণায় আরও বলা হয়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রশমনে জনগণকে অবশ্যই ঘরে থাকতে হবে, অতীব জরুরি ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়া যাবে না। অবশ্যই ঘরে অবস্থান করতে হবে। এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হলো। সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কেউ ঘরের বাইরে যেতে পারবে না। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ সরকারি প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের সহায়তায় আইন প্রয়োগ করার ক্ষমতা রাখে। এ আদেশ বৃহস্পতিবার থেকে জারি হলো বলেও জানানো হয় ঘোষণায়।

এর আগে ৪৩ জেলায় এ পর্যন্ত ১ হাজার ৫৭২ জন কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত করার কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। ভাইরাস বিস্তার ঠেকাতে ইতিমধ্যে ৪৮টি জেলা লকডাউন করেছে প্রশাসন। এর বাইরেও কিছু উপজেলা ও কিছু অঞ্চলে লকডাউন জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

গতকাল বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারী আকারে বিস্তার লাভ করেছে। এ কারণে লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে ১ লাখের বেশি মানুষ। বাংলাদেশেরও বিভিন্ন জায়গায় এ রোগের সংক্রমণ ঘটেছে। এখন পর্যন্ত এ রোগের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী এ রোগের একমাত্র প্রতিষেধক পরস্পর থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থান করা।’

গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ জনের মৃত্যু ঘটে করোনাভাইরাসে, এই সময়ে আক্রান্ত হন ৩৪১ জন। এক দিনে এত বেশি নতুন রোগী আর মৃত্যু বাংলাদেশকে দেখতে হয়নি। এ পর্যন্ত ঢাকায় ৫৪৬, নারায়ণগঞ্জে ২১৪, গাজীপুরে ৫৩, চট্টগ্রামে ৩১, নরসিংদীতে ২৮, মুন্সীগঞ্জে ২১, মাদারীপুরে ১৯, কিশোরগঞ্জে ১৭, কুমিল্লায় ১৪, গাইবান্ধায় ১২, জামালপুরে ১২, বরিশালে ১০, গোপালগঞ্জে ৯ ও টাঙ্গাইলে নয়জন করোনাভাইরাসের রোগী পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৮, দিনাজপুর ও ময়মনসিংহে সাতজন করে; চাঁদপুর, নীলফামারী ও রাজবাড়ীতে সাতজন করে; মানিকগঞ্জ ও শরীয়তপুরে পাঁচজন করে; বরগুনা, নেত্রকোনা, পিরোজপুর ও রাজশাহীতে চারজন করে; ঝালকাঠি, শেরপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ে তিনজন করে; ফরিদপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, মৌলভীবাজার, পটুয়াখালী ও রংপুরে দুজন করে এবং চুয়াডাঙ্গা, কক্সবাজার, হবিগঞ্জ, খুলনা, লক্ষ্মীপুর, নড়াইল, নোয়াখালী ও সুনামগঞ্জে একজন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন।

বাড়ছে আক্রান্ত, বাড়ছে লকডাউন : লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। প্রতিদিন করোনা আক্রান্তের তালিকায় যোগ হচ্ছে নতুন নতুন এলাকার নাম। ঝুঁকিতে পুরো দেশ। করোনা সংক্রমণ প্রশমনে জনগণকে ঘরে থাকতে কঠোর আদেশ জারি করেও মানুষকে ঘরে রাখতে বেগ পেতে হচ্ছে সরকারকে। সামান্য কাজে ঘর থেকে বের হচ্ছে অনেকেই। অলিগলিতে দেখা যাচ্ছে মানুষের জটলা। কোয়ারেন্টাইনের নির্দেশ না মানায় ঝুঁকিপূর্ণ অনেক এলাকা পুরোপুরি লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া কোথাও সর্দি, কাশি, জ্বরে মৃত্যুর খবর মিললেই লকডাউন করা হচ্ছে সেই বাড়ি বা এলাকা। তার পরও লকডাউন করা আক্রান্ত এলাকা থেকে লুকিয়ে অন্যত্র পাড়ি দিচ্ছে মানুষ। কোয়ারেন্টাইন না মানায় হু হু করে ছড়িয়ে পড়ছে বিদেশ থেকে আসা মরণব্যাধিটি।

গত কয়েক দিনে সারা দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় জেলায় জেলায় লকডাউনের আওতাও বাড়ানো হয়েছে। লকডাউন করা হচ্ছে অনির্দিষ্টকালের জন্য। এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় চলাচল কঠোরভাবে সীমিত করা হয়েছে। এর আগে রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মাদারীপুর, গাইবান্ধা, সিলেট, ফরিদপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলা আংশিক ও পুরো লকডাউন করা হয়। কিন্তু লকডাউন ও সরকারের নির্দেশ অমান্য করে অনেকেই ফিরে গেছেন নিজ এলাকায়। ফিরেছেন করোনা আক্রান্ত এলাকাগুলো থেকে। নিজে আক্রান্ত হয়েছেন, নিজের অজান্তে ভাইরাসটি ছড়িয়ে দিয়েছেন পরিবার ও সমাজের অন্যদের মাঝে। ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ গুণের বেশি বেড়ে গেছে।

জেলায় জেলায় লকডাউন চিত্র : প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে জানা যায়, নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার কেশারপাড় ইউনিয়নের উন্দানিয়া গ্রামে গত রবিবার রাতে সর্দি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও রক্তবমিতে মারা যাওয়া আলী আক্কাসের (৪৮) করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ এসেছে। গতকাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মতিউর রহমান। এ নিয়ে জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে দুজন মৃত্যুবরণ করেন। আলী আক্কাসের মৃত্যুর পর ওই বাড়িটি সোমবার সকাল থেকে লকডাউন ও পরিবারের সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, চাঁদপুর, ঢাকার ধামরাই, কুমিল্লার লাকসাম, বান্দরবান ও পটিয়ায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। এসব ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট জেলা ও জেলার কিছু এলাকা লকডাউন করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর