শুক্রবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনাভাইরাসে নতুন রেকর্ড

২৪ ঘণ্টায় ৩৪১ জন শনাক্ত মৃত্যু ১০

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাসে প্রতিদিন আগের রেকর্ড ভেঙে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। রাজধানী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আরও ১০ জন মারা গেছেন, আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪১ জন। এ নিয়ে দেশে করোনা মহামারীতে মারা গেলেন ৬০ জন। এ পর্যন্ত দেশে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫৭২ জন। সারা দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে গতকাল ঘোষণা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সন্ধ্যা ৬টার পর বাসা থেকে বের না হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নোয়াখালীতে জ্বর, সর্দি, শ্বাসকষ্টে মারা যাওয়া ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মালয়েশিয়া প্রবাসীর মেয়ে ও ভাই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

গতকাল করোনাভাইরাস-সংক্রান্ত স্বাস্থ্য বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, করোনা শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় দুই হাজার ১৩৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে দুই হাজার ১৯টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৬ হাজার ৮৮৭টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। নতুন নমুনা পরীক্ষায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও ৩৪১ জন। ফলে দেশে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৭২ জনে। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ১০ জন। এতে মৃতের সংখ্যা হয়েছে ৬০। যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে সাতজন পুরুষ ও তিনজন নারী। এদের মধ্যে ঢাকায় সাতজন ও ঢাকার বাইরে তিনজনের মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী একজন, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী তিনজন, ষাটোর্ধ্ব পাঁচজন এবং সত্তরোর্ধ্ব একজন রয়েছেন।

ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৭ জনকে আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে এখন ৪৬১ জন আইসোলেশনে আছেন। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড়া পেয়েছেন নয়জন। গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে চার হাজার ৪৯৯ জনকে। এখন হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৯৯ হাজার ২০৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে ৭১৫ জনকে। এখন মোট তিন হাজার ৮৭৫ জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে পাঁচ হাজার ২১৪ জনকে। আর এখন পর্যন্ত মোট এক লাখ তিন হাজার ৭৯ জনকে কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড়া পেয়েছেন নয় হাজার ২৫ জন। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৬৬ হাজার ৭০৫ জন। ডা. নাসিমা সুলতানা আরও জানান, সারা দেশে মোট আইসোলেশন বেড রয়েছে ছয় হাজার ৯৭৭টি। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় এক হাজার ৫৫০টি ও ঢাকার বাইরে পাঁচ হাজার ৪২৭টি রয়েছে। আইসিইউ শয্যাসংখ্যা ১৯২টি এবং ডায়ালাইসিস ইউনিটের সংখ্যা ৪০টি। সারা দেশে ৬৪ জেলায় কোয়ারেন্টাইনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৪৮৮টি প্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে কোয়ারেন্টাইন করা যাবে ২৬ হাজার ৩৫২ জনকে।           

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর অনুযায়ী, নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার সর্দি, জ্বর, শ্বাসকষ্টে মারা যাওয়া ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। তার করোনাভাইরাস পরীক্ষায় রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে বলে জানিয়েছেন সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মতিউর রহমান। মৃত ব্যক্তি পেশায় নির্মাণশ্রমিক ছিলেন। ডা. মতিউর রহমান বলেন, মৃত ব্যক্তির স্ত্রী ও মায়ের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তারা করোনায় আক্রান্ত হননি। ওই বাড়ি লকডাউন করে পরিবারের সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। মৃতের পরিবারের অন্য সদস্যদের নমুনা সংগ্রহের কাজ চলছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে করোনায় মৃত ব্যক্তির মেয়ে এবং ভাই করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. অভিজিৎ রায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মালয়েশিয়া-ফেরত ওই মৃত ব্যক্তির স্ত্রীও করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ নিয়ে নাসিরনগরে চারজন করোনায় আক্রান্ত হলেন।

ডা. অভিজিৎ রায় জানান, করোনার মারা যাওয়া ব্যক্তির বাবা, মা, ভাই, স্ত্রী ও সন্তানের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। এর আগে তার স্ত্রীর এবং গতকাল মেয়ে ও ছোট ভাইয়ের পরীক্ষার রিপোর্ট পজেটিভ আসে। তারাও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। করোনায় আক্রান্তদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদানের জন্য জেলা সদরে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। বর্তমানে মৃত প্রবাসীর স্ত্রী ঢাকায় আইসোলেশনে রয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৩৫ বছর বয়সী ওই প্রবাসী ১৮ মার্চ মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফেরেন। এর পর ৭ এপ্রিল রাতে তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

সর্বশেষ খবর